ক্যাবল স্ট্রিটের যুদ্ধটি ১৯৩৬ সালে ৪ অক্টোবর সংঘটিত হয়েছিল। এটি সংঘটিত হয় ইউনিয়ন অফ ব্রিটিশ ফ্যাসিস্টের(বিইউএফ) বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। ইউনিউন অফ ব্রিটিশ ফ্যাসিস্ট(বিইউএফ)ছিল মুসোলিনি দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি সংগঠন। সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার আগ-পর্যন্ত ৫০ হাজার সদস্যকে জড়ো করতে পেরেছিল বলে জানা যায়।
ব্রিটিশ ফ্যাসিবাদী ওসওয়াল্ড মোসলের পরিকল্পনা ছিল কালোশার্টধারীদের(ফ্যাসিবাদ মুসোলিনির ইউনিফর্ম) ইহুদি ও আইরিশ অধ্যুষিত এলাকায় মিছিল করতে পাঠানো। প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা এই মিছিল নিষিদ্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তিনি বাকস্বাধীনতার ভিত্তিতে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। একইসাথে ফ্যাসিবাদবিরোধীদের বিক্ষোভ রুখার জন্য তিনি একদল পুলিশও পাঠিয়েছিলেন।
ফ্যাসিবিরোধী দলগুলো ফ্যাসিবাদীরা যাতে কোনো মিছিল করতে না পারে সেজন্য রাস্তায় অবরোধ গড়ে তুলেছিলেন। আনুমানিক এক লক্ষ ফ্যাসিবিরোধী লোক রাস্তায় ফ্যাসিবিরোধী বিক্ষোভে নেমে আসে। কিন্তু প্রায় ৬ হাজার পুলিশ ২৩ হাজার ফ্যাসিবাদীদের রাস্তা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য ফ্যাসিবিরোধীদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ফ্যাসিবিরোধী প্রত্যেকেই ফ্যাসিবাদদের প্রতিবাদে রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা দেয় আর বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
বিল ফিশম্যান নামের এক ফ্যাসিবিরোধী প্রতিবাদকারী সেইসব স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আমরা সবাই ক্যাবল স্ট্রিট দখল করে রেখেছিলাম। রাস্তার মাঝে একটি উল্টানো লরি ব্যারিকেড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং আমরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলাম। আমাদের সাথে হাসিদিক ইহুদিরা যাদের সবার দাঁড়ি ছিল এবং দুর্দান্ত স্ট্র্যাপিং আইরিশ ডকার সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে ছিল। লোকজন রাস্তা অবরোধ করার জন্য রাস্তায় তাদের আসবাব ফেলে দিতে শুরু করে এবং পুলিশের উপর ব্যাপক হামলা শুরু করে, এমনকি দুইজন কর্মকর্তাকে জিম্মিও করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা লাঠি, পাথর, চেয়ার পা এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে। রাস্তার পাশে বাড়ির মহিলারা আবর্জনা, পচা শাকসবজি এবং চেম্বারের হাঁড়ির সামগ্রী পুলিশের ওপর ছুঁড়ে মারতে থাকে। একের পর এক চলমান যুদ্ধের পর, মোসলে রক্তপাত রোধে মিছিল পরিত্যাগ করতে সম্মত হন। এই সংঘর্ষে প্রায় ১৭৫ জন আহত হয় এবং ১৫০ জন গ্রেপ্তার হয়।
ক্যাবল স্ট্রিটের যুদ্ধটি পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট ১৯৩৬ পাসের একটি প্রধান কারণ ছিল, যা রাজনৈতিক মিছিলের জন্য পুলিশের সম্মতি প্রয়োজন এবং জনসমক্ষে রাজনৈতিক ইউনিফর্ম পরা নিষিদ্ধ করে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ব্রিটিশ ইউনিয়ন অফ ফ্যাসিস্টদের রাজনৈতিক পতনের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আজ সেন্ট জর্জ টাউন হলের পাশে ৩০০ বর্গ মিটার ম্যুরাল দিয়ে এই ঘটনার স্মৃতি স্মরণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে এই ম্যুরালটি চালু করা হয় এবং এটি ছিল বিখ্যাত মেক্সিকান ম্যুরাল শিল্পী দিয়েগো রিভেরা দ্বারা অনুপ্রাণিত।
ছবি ও লেখা: https://rarehistoricalphotos.com/
এসডব্লিউ/কেএইচ/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ