করোনা মহামারী মোকাবেলা করতে দেয়া হচ্ছে টিকাপ্রদান ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তবে সেই টিকা নিয়ে বারবার হেলাফেলার প্রমাণ দিচ্ছে টিকা প্রদানকারী স্বাস্থ্যকর্মীরা। এক ব্যক্তিকে একইদিনে দুইবার ও তিনবার টিকার ডোজ দেবার ভুল কয়েকটি জায়গায় একাধিকবার করেছেন স্বাস্থকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ভুট্টা গ্রামের খোদেজা আক্তার টিকা নিতে তিনি গিয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাকে টিকাও দেওয়া হয়েছে। তবে একটি নয়, পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তাকে পুশ করা হয়েছে সিনোফার্মের দুই ডোজ টিকা। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, সকালে টিকাদান কক্ষে গেলে ওই বৃদ্ধাকে টিকা পুশ করা হয়। তখন তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করেন। সেখানে মানুষের ভিড় থাকায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবারও আরেকটি টিকা তাকে পুশ করা হয়। এর পর বৃদ্ধার শরীরে কাঁপুনি শুরু হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
খোদেজা আক্তার বলেন, ‘একটি টিকা নিয়ে শরীর দুর্বল লাগায় বসে ছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ আরকেটি টিকা আমার শরীরে পুশ করা হয়।’ বৃদ্ধার জামাতা আবদুল বারেক বলেন, ‘দুটি টিকা নেওয়ার পর শরীরের প্রচণ্ড কাঁপুনি শুরু হলে লোকজনের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
এ ব্যাপারে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসান শাহীন বলেন, টিকাদান কক্ষে মানুষের প্রচুর ভিড় ছিল। এ জন্য ভুলক্রমে হয়তো ঘটনাটি ঘটে গেছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি এবং ওই বৃদ্ধাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ২৮ জুলাই ওমর ফারুক নামের এক ব্যক্তি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, বিএসএমএমইউ টিকাদান কেন্দ্রের তিনটি বুথ থেকে তাকে তিনবার টিকা দেওয়া হয়েছে তাকে।
সৌদি আরবে যাওয়ার আগে করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ওমর ফারুক। তবে না বুঝেই তিনটি বুথ থেকে তিন ডোজ টিকা নেন তিনি।
এরপর একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, ‘আমি যখন প্রথমে টিকাকেন্দ্র ঢুকলাম, তখন এক জন ইশারা দিয়ে ডান সাইটে যেতে বললেন। ওখানে গিয়ে এক ডোজ টিকা নিলাম। টিকা দিয়ে উনি সামনের দিকে যেতে বললেন। সামনের ব্যক্তি দ্বিতীয়বার টিকা দিয়ে বললেন, আপনি সামনে যান। আরও সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলাম। উনি কিছু জিজ্ঞেস না করে আরও এক ডোজ টিকা আমাকে দিয়েছেন। পরে বাইরে এসে লোকদের জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কয়বার টিকা দিয়েছেন, তারা বললেন, একবার।’
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে একই দিনে তিন ডোজ টিকা দেওয়ার যে খবর রটেছে তা ঠিক নয় বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, তার (ওমর ফারুক) হাতে তিনটি টিকা নেওয়ার দাগ মিলেছে। ভুল করেই তাকে এই টিকা দেওয়া হয়েছিল। এখন থেকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আরেকটি ঘটনা ঘটে বালিয়াকান্দি উপজেলার নাড়–য়া ইউনিয়নের পাটকাবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে। গত ৭ আগস্ট একই নারীকে পরপর দুই ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বিল টাকাপুড়া গ্রামের নাহিদ স্বপনের স্ত্রী ইসরাত জাহান।
জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলার নাড়–য়া ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ সহকারী মমতাজ বেগম ওই নারীকে পাটকাবাড়ী দাখিল মাদ্ররাসা কেন্দ্রে দুই ডোজ করোনা টিকা প্রদান করেন। ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ওই নারীকে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠানো হয়।
একাধিকবার ঘটছে এমন অসচেতনতা। এর আগে একদিনে দুই ডোজ টিকা নেয়া ব্যক্তিরা সুস্থ্য থাকলেও আজকে দুই ডোজ টিকা নেয়া বৃদ্ধা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। যারা টিকা নিতে আসছে, তাদের প্রত্যেকে শিক্ষিত নন এবং টিকা সম্পর্কে জানার পরিধিও সবার সমান নয়। এজন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা জরুরি। তবে প্রথম ভুল করা স্বাস্থ্যকর্মীর পার পেয়ে যাওয়াই প্রধান কারণ, পরবর্তী স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন ভুল করার ক্ষেত্রে সাবধান না থাকার পেছনে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২৩১০
আপনার মতামত জানানঃ