গত একদিন ধরে করোনার আতঙ্ককে ছাড়িয়ে গেছে টিকা না নিয়ে বেরোনো বিষয়ক মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর শাস্তির আতঙ্ক। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল বলেছিলেন, ‘১১ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের ওপরের কোনো মানুষ ভ্যাকসিন ছাড়া মুভমেন্ট করলে সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। রাস্তাঘাটে, মোটরসাইকেল, সাইকেল, টেম্পু, বাস, ট্রেনে হোক চলাচল করলে টিকা নেওয়া থাকতে হবে’। মন্ত্রীর এই বক্তব্যে নড়ে ওঠে গোটা দেশ। যারা এখনো টিকা নেননি অথবা টিকা নিতে আবেদন করেও বসে আছেন দিনেরপর দিন, তাদের মনে বাইরে বেরোনো বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে তুমুল সমালোচনা ও ট্রল। কিন্তু সেটা যে আতঙ্কের কোনো শো নয়, একটা কমেডি শো সেটা জানা গেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর মারফতে।
আগামী ১১ আগস্টের পর ১৮ বছরের উর্দ্ধে কেউ করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহন ছাড়া বের হতে পারবেন না, মুভমেন্ট করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, একদিন পার হতেই নিজের সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের এই অংশটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বুধবার (০৪ আগস্ট) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে দুপুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৮ বছরের উর্দ্ধে সকল নাগরিককেই পর্যায়ক্রমে ভ্যাক্সিনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে “টীকা নেয়া ছাড়া ১৮ বছরের উর্দ্ধে কেউ ১১ আগস্টের পর হতে বাইরে বের হতে পারবে না” মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মন্ত্রীর যে বক্তব্য প্রচার হচ্ছে বক্তব্যের সে অংশটুকু প্রত্যাহার করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার আগামী এ দেশের সব নাগরিকদেরকে পর্যায়ক্রেমে টিকা দেওয়ার জন্য ১৪ হাজার টিকা দেওয়ার কেন্দ্র স্থাপন করেছে। আগামী ৭ তারিখ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে। ১৮ বছরের উর্দ্ধে সব নাগরিকদের টিকা দেওয়ার জন্য আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। তবে গতকাল আমি একটি কথা বলেছিলাম যে, আগামী ১১ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের উর্দ্ধে কোন ব্যাক্তি যদি টিকা ছাড়া রাস্তায় চলাফেরা করেন তাহলে তারা আইনের আওতায় আসবেন। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি এটা বাস্তবসম্মত নয়। সেজন্য আমি যে কথা বলেছিলাম সেটা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ইত্যোমধ্যে প্রত্যাহার করে আমরা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা সে কথা পুনরায় ব্যক্ত করছি যেহেতু ১১ তারিখের মধ্যে সমস্ত লোককে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। কাজেই টিকা না দিয়ে আসতে পারবে না। কাজেই সিদ্ধান্তটা চাপিয়ে দেয়া যায় না। সে কারনেই আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের ওই অংশটুকু ১১ তারিখের পর থেকে কেউ ( টিকা না নিয়ে) বের হলে আইনের আওতায় আসবে সে অংশটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।
এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিধিনিষেধ শেষে আগামী ১১ আগস্ট থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা টিকা না নিয়ে চলাচল করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হুঁশিয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বক্তব্য নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের নিউজ স্ক্রলে ‘টিকা নেওয়া ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ বাইরে বের হতে পারবে না’ বলে যে সংবাদটি প্রচার হচ্ছে তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়নি।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের নিউজ স্ক্রলে ‘টিকা নেওয়া ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ বাইরে বের হতে পারবে না’ বলে যে সংবাদটি প্রচার হচ্ছে তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়নি।
এতে বলা হয়েছে, দ্রুতই ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকেই ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ‘টিকা নেওয়া ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ বাইরে বের হতে পারবে না’ বলে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে সংবাদটি প্রচার হচ্ছে তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নয়। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোথাও দেওয়া বা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী তবে কীসের ভিত্তিতে হুট করে একটা সংবাদ দিয়ে দেশব্যাপী আতঙ্ক তৈরী করলেন? যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার বক্তব্যের সাথে একমত নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে কোনো রকম আলাপ আলোচনা না করে হুট করেই এমন একটি সংবাদ কেনো দিতে গেলেন? সরকারের সমন্বয়ের কতটা অভাব হলে এমন সংকট মুহূর্তে আরেকটি অবিবেচক আতঙ্ক দাঁড় করিয়ে দেয়?
সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের সাথে কারও কোনো তেমন সমন্বয় ও সংযোগ নেই দাবি করে বিশ্লেষকরা বলেন, করোনা ডেঙ্গুর মত দুটা সমান্তরাল মহামারি চলছে দেশে। এর সাথে এসব থেকে উদ্ভব মানবিক সংকট ও দেশের মানুষের জীবন যাপনে অনিশ্চয়তা বড় বিষফোঁড়া হয়ে আছে। কিন্তু সরকারের সমন্বয় ও কর্মোপযুগী উদ্যোমের অভাবে কোনো পরিকল্পনাই সঠিক হচ্ছে না। ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে করোনার চাষাবাদ করা একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
তারা বলেন, দেশে করোনা নিয়ে যতটা আতঙ্ক চলছে মানুষের অনিশ্চিত জীবন যাপনেও কোনো অংশে মহামারির ভয়াবহতার চেয়ে কম নয়। কোথাও বেশি, কোথাও ছাড়িয়ে গেছে অধিক। সব মিলিয়ে দেশে অনিশ্চিত এক আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে। মানুষের এমন সংকট মুহূর্তে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই সচেতন, সুবিবেচক ও বাস্তবসম্মত বক্তব্য আশা করি। কিন্তু দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে তাদের তেমন কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। তাই তো যখন তখন যা খুশি ইচ্ছামত বলে বেড়াচ্ছেন। সরকারের এইসব কমেডি শোতে জনগণ খুব আতঙ্কে ভোগে, এটা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আমলে নিয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে করোনার এই মহামারি সময়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কোনো মতামতে, বক্তব্যে, সিদ্ধান্তে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪১
আপনার মতামত জানানঃ