করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়া ছাড়া ১৮-ঊর্ধ্ব কোনো ব্যক্তি ঘরের বাইরে যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছে সরকার। এটাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। একইসাথে বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ে টিকা গ্রহণের সনদ জমা না দিলে অ্যাটর্নি কার্যালয়ের কর্মীদের বেতন দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
করোনার টিকা না নিয়ে রাস্তায় বের হলেই সাজা!
করোনার সংক্রমণ রোধে টিকা নেওয়ার শর্তে ১১ আগস্ট থেকে সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৮ বছরের ওপরে কেউ টিকা নেওয়া ছাড়া বের হলে সাজার বিধান করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সভায় করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউন আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ভার্চুয়ালি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সের কোনো মানুষ মুভমেন্ট করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সরকার দরকার হলে অধ্যাদেশ জারি করেও শাস্তি দেওয়া হতে পারে। যেহেতু এখন সংসদ অধিবেশন নেই, তাই অধ্যাদেশ জারি করা হতে পারে।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭ দিনে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং ভ্যাকসিন ছাড়া ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ রাস্তায় বের হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
তিনি বলেন, অবশ্যই সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। দেশব্যাপী ১৪ হাজার কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১১ তারিখ থেকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে। টিকা ছাড়া ১৮ বছরের বেশি কেউ চলাচল করলে তাকে সাজার আওতায় আনা হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে দুটি করে কেন্দ্র থাকবে, আর সিটিতে থাকবে ৫/৬টি কেন্দ্র।
মন্ত্রী বলেন, ১১ তারিখে সব পর্যায়ের মানুষ যারা কাজ করছেন তারা ভ্যাকসিন নেবেন এবং সনদ নিয়ে কাজে যোগ দেবেন। দেশের ১৮ বছরের ওপরে সব নাগরিক ভ্যাকসিন নেবেন। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না তাদের মানাতে প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করা হবে। আমরা জানি না করোনার সংক্রমণ কবে কমবে। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আইন না করলেও অধ্যাদেশ জারি করে হলেও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে। যেহেতু সংসদ বন্ধ তাই আইন পাস করা সম্ভব নয়।
এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে পুলিশকেও ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যাতে করে কিছু জরিমানা করতে পারে। এ বিষয়ে অধ্যাদেশ লাগবে, আমরা হয়তো সেদিকেই যাবো।
দেওয়া হবে না অ্যাটর্নি কার্যালয়ের কর্মীদের বেতন
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিতে নিজেদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সময় বেঁধে দিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। এর মধ্যে টিকা গ্রহণের সনদ জমা না দিলে বেতন বন্ধসহ স্টাফদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার একটি নোটিশ জারি করেছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। এতে বলা হয়েছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে করোনা প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ করে এর সনদ ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রশাসনিক শাখায় জমা দিতে হবে।
নোটিশে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ভ্যাকসিন গ্রহণ না করলে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার স্বার্থে নিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধসহ প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা এখনও কোডিড-১৯-এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করে আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে কোভিড-১৯-এর টিকা গ্রহণে নির্দেশ রয়েছে নোটিশে।
এতে বলা হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ভ্যাকসিন গ্রহণ সম্পর্কিত টিকা কার্ড বা টিকা সনদ আগামী ২২ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে প্রশাসনিক শাখায় জমা প্রদান করবেন।
সেই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া ভ্যাকসিন গ্রহণ না করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বেতন বন্ধসহ প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাসে যাতায়াতে টিকা গ্রহণের সনদ সঙ্গে রাখতে হবে
চলমান কঠোর লকডাউনের মেয়াদ আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত করেছে সরকার। পরদিন ১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহণ চলবে। তবে পরিবহণের চালক ও তার সহকারী এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সের যাত্রীদের করোনার টিকা গ্রহণের সনদ সঙ্গে রাখতে রাখতে হবে।
এছাড়া গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে রোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সরকারের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১১ আগস্ট থেকে গণপরিবহন চলবে। তবে এগুলো চলবে রোটেশন পদ্ধতিতে। একটি রুটে একাধিক কোম্পানির যানবাহন চলাচল করে থাকে। মালিকরা একেকদিন একেকটি কোম্পানির বাস চালাবেন। তবে প্রতিটি যানবাহনের চালক ও তার সহকারী এবং ১৮ বছরের উপরের যাত্রীদের সবার করোনার টিকা গ্রহণের সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ধরুন গাজীপুর থেকে ১০০ গাড়ি প্রতিদিন ঢাকায় আসে। এখান থেকে প্রতিদিন ১০০টি না এসে ৩০টি বা ৫০টি চলাচল করবে। যেগুলো আজকে চলবে সেগুলো আগামীকাল চলবে না। অন্যগুলো চলবে। স্থানীয় প্রশাসন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি ঠিক করে নেবে।
লঞ্চ, স্টিমার ও রেলও একইভাবে রোটেশন পদ্ধতিতে চলবে বলে জানান মন্ত্রী।
৭ দিনে দেয়া হবে এক কোটি টিকা
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭ আগস্ট থেকে সাত দিন দেশের সব ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ সময় ১৪ হাজার কেন্দ্রে একযোগে টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পর্যালোচনাসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে তারা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
৫০ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই টিকা দেয়া হবে বলেও জানান তারা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ৭ আগস্ট থেকে সাত দিনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে প্রায় এক কোটি টিকা দেব। সেই টিকা দিতে অনেকের সহযোগিতা লাগবে। এ জন্য আজ সভা করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বাহিনীপ্রধানদের কাছে সেই সাহায্য চাওয়া হয়েছে। গ্রামের বয়স্ক, অর্থাৎ ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেব। কারণ তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার ৮০-৯০ শতাংশ।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে একসঙ্গে সপ্তাহব্যাপী ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সেখানে বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার, বাসের হেলপারদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। ভ্যাকসিন না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। যার যার এলাকা থেকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। ১১ আগস্টের পরে টিকা না নিয়ে কেউ মুভমেন্ট করলে শাস্তিযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।’
সরকারের টিকার মজুত নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাতে সোয়া কোটি টিকা আছে। এ মাসে আরও এক কোটি টিকা এসে পৌঁছাবে। যাদের এনআইডি কার্ড নেই, তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেব।’
করোনায় দেশে আরও ২৩৫ মৃত্যু
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ২১ হাজার ৩৯৭ জন।
এ সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩ জন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৩
আপনার মতামত জানানঃ