এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মীরা বিভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ‘মেল’ ও ‘ফিমেল’- এই দুটি মাত্র পরিচয় বাদ দিয়ে অন্য পরিচয় যোগ করার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। এবার তাদের এই দাবির পক্ষে দাঁড়ালো আর্জেন্টিনা।
দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে আর্জেন্টিনা সম্প্রতি লিঙ্গনিরপেক্ষ জাতীয় পরিচয়পত্র চালু করেছে। লিঙ্গ নির্ধারণের ঘরে ‘মেল’, ‘ফিমেল’-এর সঙ্গে ‘এক্স’ যুক্ত করেছে তারা।
যার ফলে এখন থেকে যেসব ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় নারী বা পুরুষ হিসেবে দিতে চান না, তারা ‘এক্স’ অপশন ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি অন্যান্য সরকারি নথিতেও তারা লিঙ্গনিরপেক্ষ পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন।
জানা যায়, দেশটির রাষ্ট্রপতি, উইমেন, জেন্ডার অ্যান্ড ডাইভার্সিটি বিষয়ক মন্ত্রী এবং অন্যান্য কর্মকর্তাকে নতুন এই জাতীয় পরিচয় পত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
এই উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একজন মানুষের নারী ও পুরুষের পাশাপাশি অন্যান্য পরিচয় রয়েছে এবং তাদেরও সমান শ্রদ্ধা পাওয়া উচিত। আশা করি আজ আমরা সেই জায়গায় পৌঁছে গেলাম যেখানে আইডি দেখে বোঝা যাবে সেই ব্যক্তি নারী, পুরুষ নাকি অন্য কিছু বলে মন্তব্য করেন দেশটির রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ।
আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতিসহ অনেকেই টুইটারে এই সিদ্ধান্তকে ‘অবিশ্বাস্যভাবে উদার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এদিকে আর্জেন্টিনার এলজিবিটিকিউ গ্রুপ জোনা ফ্যালজিবিটি এক বিবৃতিকে ‘অর্ধ বিস্ময়’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই দুটি মাত্র পরিচয় বাদ দিয়ে অন্য পরিচয় যোগ করার জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন। তাদের মতে এই ঘোষণা খুব একটা প্রচারণা ছাড়াই হুট করে এসেছে। তাই তাদের মতে এটি এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির সদস্যদের জন্য আনন্দের হলেও কিছুটা বিস্ময়ের।
গ্যারোনিমো ক্যারোলিনা গঞ্জালেজ ডেভেসা, ৩৫ বছর বয়সী একজন ডাক্তার, নতুন এই জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়ে বলেন, ‘নিজেকে বৈধ মনে হচ্ছে’। গঞ্জালেজ ডেভেসা তিন বছর আগে লিঙ্গনিরপেক্ষ জন্ম সনদ পাবার জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান এবং সফল হন। তার কাছেই প্রথম দেশটিতে একই সাথে লিঙ্গনিরপেক্ষ জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র আছে।
আর্জেন্টিনার নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রধারীদের আরও একজন শানিক লুসিয়ান সোসা বাতিস্তি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এতদিন আইডি চাইলে সেটি দিতে অপ্রস্তুত বোধ করতেন তাই দেখাতেন না। এখন থেকে তিনি নিজের পরিচয়সমৃদ্ধ আইডি দেখাতে পারবেন।
২০১০ সালে আর্জেন্টিনা সমকামীদের মধ্যে বিয়ে বৈধ করে একটি আইন পাশ করে। এরপর তারা জেন্ডার আইডেন্টিটি ল’র মাধ্যমে দু’বছর পর লিঙ্গ পরিবর্তনকে বৈধতা দেয়। এমনকি সরকারি চাকরিতে ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য ১% কোটা সুবিধাও দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি।
রয়টার্সের সংবাদ অনুযায়ী, আর্জেন্টিনা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক লিঙ্গনিরপেক্ষ পরিচয় অর্থাৎ ‘মেল’, ‘ফিমেল’ এর পাশাপাশি ‘এক্স’ ব্যবহারের ব্যবহারের সুযোগ পান।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯২৯
আপনার মতামত জানানঃ