এ পর্যন্ত বেশ কিছু টিকা অনুমোদন পেয়েছে। তবে কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের কমতি নেই। টিকা নিয়ে ঝুঁকিতে আছে মানুষ। এমনকি গুরুতর অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। হতে পারে মৃত্যু। সম্প্রতি জানা যায়, চীনের সিনোভ্যাক্স টিকার ডোজ নেয়ার পরেও থাইল্যান্ডে ৬১৮ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে একজন নার্সের মৃত্যু হয়েছে, অপর একজন নার্স গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন। ১১ জুলাই রবিবার থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
সংবাদ সম্মেলনে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা সপন আয়ামসিরিথন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে সিনোভ্যাকের করোনা টিকার উভয় ডোজ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সপন আয়ামসিরিথন জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিডের ঝুঁকি ন্যুনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে তাদের সবাইকে ভ্যাকসিনের তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এক্ষেত্রে সিনোভ্যাক ব্যবহার করা হবে না। অ্যাস্ট্রাজেনেকা কিংবা অন্য কোনও আরএনএ শ্রেণির ভ্যাকসিনই অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে।
চীনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ইন্দোনেশিয়াতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে সিনোভ্যাকের উভয় ডোজ নেয়ার পরও কমপক্ষে ২০ জন চিকিৎসক এবং ১০ জন নার্স কোভিডে ভুগে মারা গেছেন।
ইন্দোনেশিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম উভয় কোম্পানির ভ্যাকসিন থাকলেও সিংহভাগ সরবরাহ এসেছে সিনোভ্যাক থেকে। ফলে প্রশ্ন দেখা দিলেও সিনোভ্যাক দিয়ে টিকা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প তাদের হাতে নেই। দেশটিতে চিকিৎসকরা এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে চান না, কিন্তু তারা স্বীকার করেন তারা নিরাপদ বোধ করছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ গনমাধ্যমে জানান, সিনোভ্যাকের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার এক মাস পর তিনি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখেন কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো কোনও সুরক্ষাই দেহে তৈরি হয়নি। আরও এক মাস পর দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা করেও তিনি একই ফল পান। তবে ওই চিকিৎসক বলেন, তার কিছু সহকর্মী ভালো ফল পেয়েছেন, কিন্তু তার শরীরে সিনোভ্যাক টিকা কোনও কাজ করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে তাদের সবাইকে করোনা টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি অনুমোদন করেছে।
এ বিষয়ে সপন আয়ামসিরিথন বলেন, ‘সম্প্রতি একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল সরকার বরাবর প্রস্তাব দিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে তাদেরকে যেন করোনা টিকার তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। সরকার এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। তবে তৃতীয় ডোজে সিনোভ্যাকের টিকা ব্যবহার করা হবে না। এক্ষেত্রে আমাদের পছন্দ অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা অন্য কোনো আরএনএ শ্রেণির টিকা।’
গত বছর এপ্রিল থেকে থাইল্যান্ডে শুরু হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। শুক্রবার (৯ জুলাই) দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ২৭৬ জন এবং এ রোগে মারা যায় ৭২ জন। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় থাইল্যান্ডে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার।
এর প্রেক্ষিতে শনিবার এক সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, রাজধানী ব্যাংককসহ থাইল্যান্ডের ১০টি প্রদেশের সবগুলোতে রাত্রিকালীন কারফিউ, নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট ব্যতীত অন্যান্য দোকান ও শপিংমল বন্ধ রাখা, জনগণের চলাচলে বিধিনিষেধ ও এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে ভ্রমণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সরকারি ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে এবং চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞাসমূহ কার্যকর হবে।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭১ জন এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন ২ হাজার ৭১১ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ