মাত্র ছয় (প্রায়) মাস পরেই মিলিয়ে যেতে শুরু করে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পর শরীরে তৈরী অ্যান্টিবডি। এমনকি অ্যান্টিবডির মাত্রা নির্ধারিত সর্বনিম্ন মানদণ্ডের নিচেও চলে যায়। চীনা গবেষকরা রোববার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে তৃতীয় একটি ডোজ দেওয়া হলে তা করোনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি তৈরি করে বলেও জানায় যায় চীনের এই গবেষণা থেকে। দেশটির জিয়াংশু প্রদেশে সিনোভ্যাক এবং চীনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এই গবেষণা পরিচালনা করেছে।
প্রতিবেদনে সিনোভ্যাকের টিকা নেওয়া ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সী সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্কদের সংগৃহীত রক্তের নমুনা নিয়ে চালানো গবেষণায় এই ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে এই গবেষণা এখনও পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।
গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীরা দুই থেকে চার সপ্তাহের ব্যবধানে সিনোভ্যাক বায়োটেকের টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন। গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত করোনাকে নিস্ক্রিয়কারী অ্যান্টিবডি যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
গবেষণার এই ফল ৫০ জনের বেশি করে স্বেচ্ছাসেবীদের দু’টি দলে পাওয়া গেছে। যদিও গবেষণায় অংশ নেওয়া অন্য ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছিল। চীনা এই গবেষণায় কয়েকটি দলে ভাগ করা স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছিল।
এতে দেখা যায়, তৃতীয় ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর নিস্ক্রিয়কারী অ্যান্ডিবডির মাত্রা প্রায় ৩ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়; যা দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার চার সপ্তাহ পর পাওয়া অ্যান্টিবডির তুলনায় অনেক বেশি।
তবে করোনার অতি-সংক্রামক ধরনগুলোর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির কার্যকারিতার ব্যাপারে গবেষণা করা হয়নি বলে সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া তৃতীয় ডোজ দেওয়ার পর অ্যান্টিবডির টিকে থাকার সময়সীমার ব্যাপারে জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
গত মাসে সিনোভ্যাকের মুখপাত্র লিউ পেইচেং রয়টার্সকে বলেছিলেন, টিকা নেওয়া লোকজনের সংগৃহীত রক্তের নমুনা নিয়ে চালানো গবেষণার প্রাথমিক ফলে দেখা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়কারী অ্যান্টিবডির মাত্রা তিনগুণ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। তবে সিনোভ্যাকের টিকার তৃতীয় ডোজ প্রয়োগে শরীরে টেকসই অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
সিনোভ্যাকের দুই ডোজের টিকায় অ্যান্টিবডির স্থায়ীত্ব নিয়ে থাইল্যান্ডের এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরাও এমন সন্দেহ প্রকাশ করে। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে থাইল্যান্ড করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথম ডোজ হিসেবে যারা সিনোভ্যাকের টিকা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজে অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চীনের টিকার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ডোজের মিক্স আর ম্যাচের ঘোষণা দেয় থাইল্যান্ড।।থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটির ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৮ জন মেডিকেল কর্মীকে সিনোভ্যাকের টিকার দুই ডোজ নেওয়া ৬১৮ জন ফের করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানানোর পর ওই সিদ্ধান্ত আসে। সিনোভ্যাকের টিকা নেওয়ার পর গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে একজন নার্স মারাও যান।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩২৭
আপনার মতামত জানানঃ