গণটিকা নিয়ে নারারকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো সরকারের তরফ থেকে। প্রথমে জানানো হয়, আগস্টের ৭ তারিখ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া হবে। এরপর টিকা স্বল্পতার জন্য ১৪ আগস্ট থেকে ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই লক্ষ্যও পুরোপুরি অর্জন হয়নি। সেই গণটিকা কার্যক্রমে ৬ দিনে ৩০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
তবে এরপর আবার শীঘ্রই গণটিকা কার্যক্রম শুরু করার কথা দিলেও গণটিকা কার্যক্রম থেকে সরে এসেছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আপাতত গণটিকা কার্যক্রম আর হচ্ছে না। নিবন্ধন করেই টিকা নিতে হবে। আজ সোমবার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপাতত করোনার গণটিকা কার্যক্রম হচ্ছে না। যখন টিকা আসবে নিবন্ধন করেই সবাইকে টিকা নিতে হবে। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৭ থেকে ৮ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে। ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেশে আসবে বলেও জানান জাহিদ মালেক।
প্রথম ডোজ দেওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়েও ‘ভাবা হচ্ছে’ বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ টিকার সময়সীমা ১৫ থেকে ২০ দিন করার চিন্তা করছে সরকার। এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা চলছে।
বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ফিরিয়ে নেয়ার কারণে এখন আর টিকা নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাসের চোখে দেখা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে টিকা আমদানির যে হিসাব দিয়েছিলো তাতেও ছিলো প্রচুর পরিমানে গড়মিল।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কাগজপত্রসহ চিঠি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছিল, রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার বাংলাদেশি এজেন্ট গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল। তারা সরকারকে দুই কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। সরকার সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। সরকার নিজেও কোনো চুক্তি করেনি। তাহলে রাশিয়া থেকে সাত কোটি ডোজ টিকা কীভাবে আসবে? কবে আসবে?
এরপরের প্রশ্ন আসে জনসন এন্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকা নিয়ে। জনসন এন্ড জনসন টিকা রপ্তানির মতো অবস্থায় পৌছেছে কিনা, সেটা নিয়েই কোনো নিশ্চয়তা এখন অব্দি পাওয়া যায়নি। তাহলে বাংলাদেশ জনসন এন্ড জনসনের সঙ্গেও চুক্তি করেনি। তার মানে জনসন এন্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকার পুরো বিষয়টিই অনিশ্চিত। একটি সূত্র বলছে বাংলাদেশ কোভ্যাক্সের আওতায় জনসন এন্ড জনসনের সাত কোটি ডোজ টিকা পাবে। এই তথ্য যদি সঠিকও হয়ে থাকে তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না যে, টিকা পাওয়া যাবেই। জনসন এন্ড জনসনের উৎপাদন, কোভ্যাক্সে জমা হওয়া এবং তারপর টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা। পেলেও লাখ ডোজ হিসাবে পাওয়া যেতে পারে, কোটি ডোজ হিসাবে নয়।
২১ কোটি ডোজের মধ্যে ভারত থেকে তিন কোটি ডোজ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারত নিজেই টিকা দেওয়ায় আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে আছে। এ বছরের মধ্যে ভারত টিকা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে, সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তারমানে ২১ কোটি ডোজ টিকা আনার দাবির মধ্যে ১৭ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। কোভ্যাক্স ও চীন থেকে বাংলাদেশ কিছু টিকা পাবে। কিন্তু, তা দিয়ে গণটিকাদান কর্মসূচি চালানো সম্ভব নয়। এজন্য বর্তমানে প্রতিশ্রুতি দেয়া বক্তব্যেও ভরসা করতে পারছে না বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ মানুষেরাও।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৬১৮
আপনার মতামত জানানঃ