গত ২৭ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে। বাসে, গাড়িতে, পথে থাকা শতাধিক মানুষ আহত হন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১১ জন। আহতরা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৯ জুন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল করিম।।
তদন্ত নিয়ে গাফিলতি
বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে ছিল রমনা থানা পুলিশ। কিন্তু মামলা দায়েরের চার দিন পরেও তদন্ত নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
শনিবার (৩ জুলাই) রমনা থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার সিটিটিসির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম এদিন রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মামলা দায়েরের চার দিন পরও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ডিএমপির বিশেষায়িত এ ইউনিটের ওপর মামলাটির তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়।
সিটিটিসিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার কারণ
এ বিষয়ে সিটিটিসির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) এ কে এম রহমতউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু এই ঘটনায় তদন্তের ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল কিছু ব্যাপার রয়েছে। ব্লাস্ট বলেন, বিস্ফোরণ বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট রয়েছে একমাত্র বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের। আর কোনো প্রতিষ্ঠানে কিন্তু এরকম টেকনিক্যাল এক্সপার্ট নেই। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই মামলাটি তদন্ত করবে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।’
বিস্ফোরণের কারণ
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত থেকে জানা যায়, ধসে পড়া বিল্ডিংয়ের মালিকের অব্যবস্থাপনা, অতি পুরনো বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন, ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়। এছাড়া, ভবনটির ভাড়াটিয়া শর্মা হাউজের অননুমোদিত গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার এবং অবহেলা, বেঙ্গল মিটের অননুমোদিত গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার এবং অবহেলা, গ্র্যান্ড কনফেকশনারির অননুমোদিত গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার এবং অবহেলা, ২য় তলায় সিঙ্গার ইলেকট্রনিকসের অননুমোদিত বৈদ্যুতিক সামগ্রী মজুদ রাখা ও অবহেলা, তিতাস গ্যাস কোম্পানির অবহেলাজনিত গ্যাস সরবরাহ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানির ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ, ঘটনাস্থলের সামনে সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত ও গাফিলতিপূর্ণ ড্রেন খনন এসব কারণের কথা উল্লেখ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যারা
গত ২৭ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে রমনা মডেল থানা এলাকার বড় মগবাজারের রেখা নীড় ভবনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ভবনের সামনের ও পেছনের অংশ ধসে পড়ায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য মানুষ। বিস্ফোরণের বিকট শব্দের ফলে ভবনের সামনের তিনটি যাত্রীবাহী বাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে বাসের যাত্রীরা আহত হন। আশপাশের কয়েকটি ভবন, তার মধ্যে আউটার সার্কুলার রোডের ভবন নং ৭৭, ৭৮, ৭৯/১, ৮১ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের বিপরীত দিকে রাস্তার ওপারের হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ভবনও ক্ষতি এসব বিষয়কে দণ্ডবিধির ৩০৪-ক ধারার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে।
ভবনটিতে অবস্থিত এক অথবা একাধিক প্রতিষ্ঠান এ ঘটনার জন্য দায়ী বলে ধারণা করছে পুলিশ।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/২৮২০
আপনার মতামত জানানঃ