ইসরায়েলি আক্রমন থেকে বাঁচার চেষ্টায় ক্লান্ত ফিলিস্তিন নাগরিকদের এবার নামতে হলো তাদের নিজেদের দেশের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সরকারের বিরুদ্ধে। গত প্রায় ছয় দিন ধরে রাজপথে বিক্ষোভ-মিছিল করছে তারা। তবে এবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নয়, নিজ দেশের সরকারের পদত্যাগের দাবিতে।
সরকার পদত্যাগের দাবির কারণ
যুদ্ধবিরতির পর দেশটির সরকার নতুন সংকটে ফেলেছেন ফিলিস্তিনিদের। একদিকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের কারণে ধরপাকড় চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী, অন্যদিকে একইভাবে নিজ নাগরিকদের ওপর আটক অভিযান চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম তীরে বেছে বেছে ইতোমধ্যে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করাও হয়েছে।
বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনিদের দাবি, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সরকার। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টিনিয়ান অথোরিটি বা পিএ) ইসরায়েলি সেটেলারদের দখলদারিতে সহযোগিতা করছে।
একারণে ফিলিস্তিনিরা গ্রেপ্তার ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে নিজ সরকার ও প্রশাসনের হাতেই। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায়ই নামতে দিচ্ছে না মাহমুদ আব্বাসের প্রশাসন। নামলেই আটক করছে, নির্যাতন চালাচ্ছে।
নিজার বানাতের মৃত্যু
সম্প্রতি ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মানবাধিকার কর্মী নিজার বানাত আটকাবস্থায় মারা গেছেন। ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ধরে নিয়ে যায়।
এ বছর ফিলিস্তিনে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তাতে অংশ নেয়ার কথা ছিল নিজারের। ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীর শাসন করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রচুর অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ। নিজার বানাত এর বিরোধিতা করেছিলেন।
নিজার বানাতের অভিযোগ ছিল, এই অর্থ ব্যবহার করে ফিলিস্তিনের সরকার কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে উঠছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
বর্তমানে ফিলিস্তিনের সার্বিক অবস্থা
বানাতকে হত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের শ্রমমন্ত্রী নাসরি আবু জাইশ রোববার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জোট সরকারের শরিক দল বামপন্থি পিপলস পার্টির নেতা।
এদিকে রামাল্লাভিত্তিক একটি অধিকার সংস্থার রিপোর্ট মতে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসরায়েলবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের এই আটক অভিযানের সর্বশেষ শিকার তারেক আল-খুদাইরি। পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরে পরিবারের সঙ্গে বাস করেন ২৩ বছর বয়সি এই যুবক। ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে নিয়মিত উপস্থিতির কারণে বেশ পরিচিত তিনি।
গত ২২ মে যুদ্ধবিরতির মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই তাকে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে চারদিন পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের কারণে যে তিনি আটক হতে পারেন এটা যেন তার বিশ্বাস ও ধারণার বাইরে ছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ