করোনা নিজের বংশ জমিয়ে তুলতে যখন মরিয়া, তখনও টিকা নিয়ে রাজনীতির কমতি নেই। প্রথমে কোভিশিল্ড, এরপর ফাইজারের টিকা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে মানুষ। কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়া ১৪ লাখ মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। ডেল্টা নামক এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট যখন ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে, এ সময় মর্ডানার টিকা নিয়েও হতাশ হতে হবে কি না সে নিয়ে দুশ্চিনায় আছেন টিকা নিতে চাওয়া মানুষেরা।
কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজের শঙ্কটে ১৪ লাখ মানুষ
দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এক কোটি ১ লাখ ৯ হাজার ৯২৮ ডোজ। এর পুরোটাই দেওয়া হয়েছে অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। এখন পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে। সেই অনুযায়ী এখন মাত্র ৯০ হাজার ৭২ ডোজ ভ্যাকসিন অবশিষ্ট আছে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৩ জন। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে আরও ৭০১ জনকে। বাকি ১৪ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সঙ্কট। তাদের সবাইকেই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকারই দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কেননা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।
ফাইজারের টিকা
টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে গত ৩১শে মে ফাইজার বায়োটেকের তৈরি ১ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ উপহার হিসেবে পায়।
সিনোফার্মের কাছ থেকে সরকারি পর্যায়ে দেড় কোটি টাকার টিকা কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী জুন জুলাই ও অগাস্ট মাসে ৫০ লাখ করে মোট দেড় কোটি টিকা আসার কথা। কিন্তু তা এখন পর্যন্ত কেনা কোন টিকা এসে পৌঁছায়নি।
তবে চীনা দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের কেনা সিনোফার্মের ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে ঠিক কবে আসবে সে বিষয়ে কোন তথ্য কোথাও জানা যায়নি।
মডার্নার টিকা
কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় আগামী দুই দিনে দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ আসছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২ জুলাই রাত ১১টা ২০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মডার্নার মোট ২৫ লাখ টিকার প্রথম চালানে প্রায় ১২ লাখ ডোজ আসবে। পরদিন ৩ জুলাই আসবে বাকি ১৩ লাখ।
এদিকে, গত ২৯ জুন দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য মডার্নার টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। সেদিন এই টিকা ব্যবহারের জন্য ইমারজেন্সি ইউজ অথরাইজেশন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান। টিকা পেতে গত জুনে কোভ্যাক্সকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ। সেই হিসেবে পর্যায়ক্রমে প্রায় সাত কোটি টিকা দেওয়ার কথা বাংলাদেশকে।
মডার্নার এই টিকা ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য। এই টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণের ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। এই টিকার সংরক্ষণ তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের আগে ২-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ দিন এবং ৮-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
করোনার প্রধান ভ্যারিয়েন্ট যখন ডেল্টা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনার একটি অতি সংক্রামক ধরন হচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যা ইতোমধ্যে ১০০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দেশের মধ্যে কিছু দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।
করোনার ডেল্টা ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ভারতে। করোনার এই ধরনটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। মূলত এর ধরনের কারণেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সংক্রমণের ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশটি।
গত ৮ মে করোনার ডেল্টা ধরনের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে বাংলাদেশেও। সম্প্রতি আইইডিসিআর জানায়, দেশে দুই মাসে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশে ডেল্টা ধরন পাওয়া গেছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনাভাইরাসের প্রধান ধরন হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানেই এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কতা দিয়ে আরও জানিয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই অন্য সব ভ্যারিয়েন্টকে ছাপিয়ে যাবে। এটিই হবে করোনার প্রধান ধরন। যেহেতু বিশ্বে ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে, তাই সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনা সংক্রামক হিসেবে সবচেয়ে শক্তিশালী ধরন। এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
এসডব্লিউ/এমএন/ওজেএ/১৬০৯
আপনার মতামত জানানঃ