ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের তিন সদস্যের আটটি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ নির্দেশ দেন।
আজ সোমবার(২৮ জুন) দুদকের আদালত পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘মামলার অনুসন্ধান চলাকালে দুদকের উপ পরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ রোববার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো অবরুদ্ধের আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।’
এর আগে, রবিবার (২৭ জুন) তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দের আবেদন করেন। পরে বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা তার আবেদনে বলেন, ওই ব্যাংক হিসাবগুলোতে অস্বাভাবিক বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন করা হয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে যেন অর্থ উত্তোলন, স্থানান্তর বা হস্তান্তর করা না যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে ব্যাংক হিসাবগুলো জরুরিভিত্তিতে জব্দ করা প্রয়োজন।
আবেদনে তিনি আরও বলেন, অভিযুক্তরা ওই ব্যাংক হিসাবের অর্থ স্থানান্তর করার চেষ্টা করেছেন; যা তদন্তে উঠে এসেছে।
অভিযোগ নিষ্পত্তির পূর্বে এই অস্থাবর সম্পত্তি স্থানান্তর বা হস্তান্তর হলে রাষ্ট্রের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে বলে আদালতকে জানান দুদক কর্মকর্তা।
সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের যে আটটি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সাঈদ খোকনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তিনটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ ছাড়া তার মা ফাতেমা হানিফের একটি, বোন শাহানা হানিফের দুটি ও স্ত্রী ফারহানা আলমের দুটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাঈদ খোকনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় আদালতে।
গত ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আশেক ইমামের আদালতে মামলা করেন মার্কেটের দোকানমালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলু।
ওই দিনই আদালত ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। সেই থেকে দুইবার প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ পিছিয়েছে।
মামলায় সাঈদ খোকন ছাড়াও সাতজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন ডিএসসিসির সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ।
মামলার আরজিতে বলা হয়, তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনসহ অন্য আসামিরা দোকান বরাদ্দের কথা বলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে ৩৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৭৫ টাকা বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে নেন।
বাদী এ লেনদেনে বাধা দেওয়ায় আসামিরা তার প্রাণহানির চেষ্টা করেন। আসামিরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিলেও কোনো ধরনের বৈধ দলিল-দস্তাবেজ দেননি।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গসহ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান চিহ্নিত করে গত ৮ ডিসেম্বর তা ভাঙতে অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি।
উচ্ছেদে দোকান হারানো ব্যবসায়ীরা জানান, বৈধতা পেতে সাঈদ খোকন মেয়র থাকার সময়ে দোকানপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করে দিয়েছেন তারা।
অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, টাকা দেওয়ার পরও সে সময় দোকানের বৈধতা পাননি তারা।
অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে খোকন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৬
আপনার মতামত জানানঃ