ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গতকাল সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে বর্তমান শেখ ফজলে নূর তাপস দুটি মামলা করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে কাজী আনিসুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার আলম বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।মামলার বিপরীতে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মানসম্মানের ‘বাজারমূল্য’ জানতে চেয়ে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠান। একইসাথে রাজপথে মোকাবিলা করার জন্য মাঠে নামতে বলেন সাবেক মেয়র।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে—বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, তাপসের মানসম্মানের বাজারমূল্য কত? মামলার পূর্ণাঙ্গ বিবরণী পাওয়ার পর সেটা আমি জানতে পারব। এ মামলার আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি রাজপথে দেনা–পাওনার হিসাব হবে, ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে আদালত দুই বাদীর করা মামলায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। এরপর শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য মঙ্গলবার ধার্য করেন। আজ মঙ্গলবার(১২জানু) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুই মামলার আদেশের জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালত এই দিন ধার্য করেন।
এদিন সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলা গ্রহণের বিষয়ে আদেশের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু বিচারক আজ আদেশ না দিয়ে নতুন দিন ধার্য করেন।
গত শনিবার হাইকোর্ট এলাকার কদম ফোয়ারার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সাঈদ খোকন অভিযোগ করেন, তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন। এই টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তিনি লাভ করেছেন এবং করছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মেয়র তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, ২য় ভাগের ২য় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
মানববন্ধনে সাঈদ খোকন আরও বলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাকে বলব, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন।
মামলার অভিযোগে বাদী অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার আলম উল্লেখ করেন, আসামি সাঈদ খোকন গত শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা মধ্যে জাতীয় ঈদগাহ গেটের সামনে ফুলবাড়িয়া মার্কেটের উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে তার বক্তব্যে বলেন, তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন, আমি তাকে বলব রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। কেননা দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম তার নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। তারপর চুনোপুঁটিদের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অথচ তিনি উল্টো কাজ করছেন। তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তাপস ডিএসসিসির শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত রোববার আসামি সাঈদ খোকনের এই বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ব্যারিস্টার শেখ ফলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করে আসামি সাঈদ খোকন দণ্ডবিধি আইনের ৫০০ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অভিযোগে বাদী বলেন, মামলার বাদী গত রোববার বিকেল ৫টায় শাহবাগ থানায় হাজির হয়ে এজাহার দায়ের করতে চাইলে থানা কর্তৃপক্ষ এজাহার না দিয়ে আদালতে পিটিশন মামলা করার পরামর্শ দেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয় দুই নেতার দ্বন্দ্ব নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখনো তেমন কোনো উত্তেজনা দেখা দেয়নি। এমনকি দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে আসেনি কেউ। দলের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এদিকে তাপসকে রাজপথে দেখে নেওয়ার বিপরীতে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে বর্তমান মেয়র এখনো কোনো বিবৃতি দেননি। তবে সংশ্লিষ্টরা কেউ কেউ বলছেন, সাবেক ও বর্তমান এই দুই মেয়রের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত তাপস নির্বাচনে জেতার পরপর যখন নগরোন্নয়নে হাত দিয়েছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন। তখন থেকেই সাবেক মেয়রের বিভিন্ন দুর্নীতি উন্মোক্ত করে দেন বলে অনেকের মতামত। এখন দেখার পালা দুই মেয়রের পরস্পরের দিকে কাদা ছুড়াছুঁড়ি কোন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। তবে এদিকে গত রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নবনির্বাচিত পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা এই দুই ব্যক্তির (তাপস ও খোকন) ব্যক্তিগত বক্তব্য। এখানে দলের কোনো কিছু নেই।ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান দুই মেয়রের বিবাদ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা নুহ উল আলম লেনিন বলেন, এই দুইজন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের যদি কোন বিষয়ে দ্বিমত থাকে, ভিন্নমত থাকে সেটা তারা পারস্পারিক আলোচনার মধ্যে দিয়ে এটার সমাধান করতে পারেন। অথবা পার্টির উচ্চতর ফোরামে উত্থাপন করতে পারেন।
দলের মধ্যে এনিয়ে কোন অস্বস্তি আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেহেতু তাদের বেশ কিছু বিকল্প আছে, প্রকাশ্যে এই বিতর্কটা খুব শোভন না। পার্টির ডিসিপ্লিন মানতে হলে পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয় বাইরে যাবে না।”
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৫
আপনার মতামত জানানঃ