বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশিদের হজে যাওয়া বন্ধ করেছে সৌদি আরব সরকার। গত বছরের মতো এবারও সৌদি লোকদের হজের সুযোগ থাকলেও যেতে পারছে না অন্যরা।
আজ শনিবার (১২ জুন) সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবারও বিদেশিদের জন্য হজ করার সুযোগ থাকছে না।
শনিবার আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব সরকার এবার করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের কারণে শুধু তাদের নাগরিক এবং দেশটিতে বসবাসরত লোকজনকে হজ করার সুযোগ দেবে। এ বছর সর্বমোট ৬০ হাজার মানুষ হজ করতে পারবেন।
সৌদি সরকার জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হজ আয়োজন করা সম্ভব হয়। ইসলামে মানুষের জীবন রক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষা থেকেই এ সিদ্ধান্ত। সৌদি সরকার দুটি পবিত্র মসজিদের সংরক্ষণকারী, একই সঙ্গে মিলিয়ন হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের সেবা দেয়। যারা হজে অংশ নেবেন তাদের সুরক্ষায় সৌদি সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় বলে জানানো হয়।
হজে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই করোনার টিকা নিতে হবে। যারা হজ শুরুর ১৪ দিন আগে করোনার এক ডোজ টিকা নেবেন তারাও অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নাগরিকদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
করোনা মহামারি শুরুর আগে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় সপ্তাহব্যাপী হজ পালনের জন্য ২৫ লাখের বেশি মানুষ সমবেত হতেন। এ থেকে প্রতিবছর ১২০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করতো সৌদি সরকার।
উল্লেখ্য, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটিতে আগের ২৫ লাখ থেকে ২০২০ সালে এ সংখ্যা ওমরাহ ও হজ মিলিয়ে আগত মুসুল্লিদের সংখ্যা ২ কোনটিতে উন্নীত করতে চেয়েছিলেন। আর ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা তিন কোটিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধু হজ থেকে ৫০ বিলিয়ন রিয়াল অর্থাৎ ১৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব সরকার।
এবারও হজে যেতে পারছেন না বাংলাদেশিরা
করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে এবারও বাইরের কোনো দেশ থেকে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে যেতে পারবেন না মুসল্লিরা। ফলে বাংলাদেশিরাও এবার হজ পালন করতে পারছেন না।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান আজ শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সৌদি আরব সরকার জানিয়েছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছরও (১৪৪২ হিজরি, ইংরেজি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ) সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে যাত্রীরা হজের সুযোগ পাবেন না।’
‘সৌদি আরবের নাগরিক এবং সৌদি আরবে অবস্থানকারী অন্যান্য দেশের মুসলিমদের নিয়ে সীমিত আকারে হজ পালিত হবে’, সচিবালয় থেকে ভিডিওবার্তায় যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছরও ‘সীমিত পরিসরে’ হজ অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরও বাংলাদেশ থেকে কেউ সৌদি আরবে গিয়ে হজ করার সুযোগ পাননি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে সৌদি আরব যেতে পারেন সোয়া লাখেরও বেশি বাংলাদেশি।
প্রতিবছর হজে কয়েক লাখ মানুষ সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জমায়েত হন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম বর্তমান করোনাভাইরাসের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিবেচনায় সৌদি সরকার ‘সীমিত পরিসরে’ হজ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বছরও হজ পালনের আশায় দেশে ৬০ হাজার মানুষ প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন।
গতকাল শুক্রবার ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, কেউ চাইলে নিবন্ধনের টাকা উঠিয়ে নিতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘টাকা যদি কেউ উঠিয়ে নিতে চায় সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। যারা উঠিয়ে নিতে চাচ্ছেন তাদের দিচ্ছেও। কেউ আংশিক উঠিয়ে নিচ্ছে তার বিপদের জন্য। তার সিরিয়ালটা যেন নষ্ট না হয়। এরকমও করেছেন অনেকে।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, যারা নিবন্ধনের টাকা তুলে নিবেন না; পরের বছর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ