সৌদি আরবে তৈরি হল ইতিহাস। প্রথমবার হজের সময় মক্কায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেন সৌদি নারী সেনারা। বর্তমানে ১৮ সদস্যের মোট চার নারী সৈনিকের দল চার শিফটে মসজিদুল হারামে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
এমনিতে সৌদিতে প্রায়শই নারীদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। নানান বেড়াজালে আটকে থাকেন দেশটির নারীরা। তবে সেই গোঁড়া মানসিকতায় পরিবর্তন করে দেশে আধুনিকতা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন সৌদির যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমন।
গত এপ্রিল থেকে মক্কা এবং মদিনায় নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থায় একাধিক নারী সেনা যোগ দিয়েছেন। তাদের অনেকেই এবার ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।
এমনই এক নিরাপত্তক কর্মী হলেন মোনা। সেনাবাহিনীর খাকি উর্দি, জ্যাকেট পরে এই নারী সেনা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে টহল দিচ্ছিলেন। কড়া নজর রাখছিলেন পুরো পরিস্থিতির উপর।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘মক্কার মসজিদুল হারামের মতো পবিত্র স্থানের নিরাপত্তায় দাঁড়িয়ে আমি আমার মরহুম বাবার পথকে অনুসরণ করছি। জেয়ারতকারীদের জন্য এই সেবা পবিত্র ও সম্মানজনক দায়িত্ব।’
সৌদির যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমনের সংস্কারের পরিকল্পনা ‘ভিশন ২০৩০’ অনুযায়ী, নারীদের গাড়ি চালানোর উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের যাতায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে সৌদি সরকার।
পরিবারেও নারীদের আরও ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যদিও অভিযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ টানতেই এসব সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সংস্কার এবং অভিযোগের মধ্যেই মোনার মতো নারীদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।
আরেকজন নারী সেনা সামার কাবার কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। তাতে পরিবারও উৎসাহ জুগিয়েছে বলে জানান।
সামারের কথায়, ‘আমাদের কাছে এটা বড় সাফল্য। ধর্ম, দেশ, স্রষ্টার অতিথিদের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারার মতো গর্ব আর কিছুতে নেই।’
সময়ের সাথে ধর্মীয় বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে সৌদিতে। সৌদি আরবে বহু দশক ধরে এমন পদ্ধতি চালু ছিল যে নামাজের জন্য আজান শোনামাত্রই বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে ফেলত। নামাজের সময় সারি সারি গাড়িগুলোকে পেট্রোল পাম্পের সামনে অপেক্ষা করতে হতো তেল নেয়ার জন্য।
কারণ নামাজ শেষে পেট্রোল পাম্পের কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া ফার্মেসি, রেস্টুরেন্ট ও সুপার মার্কেটগুলোর ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অপেক্ষা করতে হতো নামাজ শেষ হওয়ার জন্য।
কিন্তু সে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। গতবার শুক্রবার সৌদি চেম্বারের জারি করা এক সার্কুলারে জানা যায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ নামাজের সময়ও দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ