করোনা মাহামারিতে হজের সময় সংক্রমণ এড়াতে এবার ‘ডিজিটাল হজের’ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব সরকার। লোকবলের পরিবর্তে হজ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রাধান্য দিয়েছে হজ কর্তৃপক্ষ।
গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাজিদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনায় এবার মানুষের পরিবর্তে কাজ করবে রোবট। রোবটগুলি হজযাত্রীদের ফতোয়া, দিক নির্দেশনার পাশাপাশি ডিজিটাল কোরআন সরবরাহ করবে এবং তীর্থযাত্রীদের চলাচল কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করবে।
এ জন্য বিশেষ ব্রেসলেট দেওয়া হবে হজযাত্রীদের। সর্বাবস্থায় ভিড় এড়িয়ে হাজিরা যাতে ইবাদত-বন্দেগি সময়মতো সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, সে জন্যে বিশেষায়িত রোবট দিনরাত নির্দেশনা দেবে। এসব রোবট মক্কার রাস্তা, মসজিদে হারাম, মিনা, আরাফাতের ময়দান, মুজদালিফা ও কংকর নিক্ষেপের স্থানগুলোতে কাজ করবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম এসব রোবট বিভিন্ন ভাষায় যাতায়াতের দিকনির্দেশনা, দোয়া ও হাজিদের সতর্ক থাকতে বিশেষ সংকেত দেবে।
হজ শেষে হাজিরা যাতে নিরাপদে দেশে ফিরে যেতে পারেন সেক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা দেবে রোবট। এ জন্য হজ পালনে নির্দিষ্ট সময় সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
সাধারণত সৌদি কর্তৃপক্ষ মক্কা-মদিনার নিরাপত্তা, হজ ব্যবস্থাপনা এবং হজ যাত্রীদের সুবিধার জন্য বরাবরই প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে থাকে। করোনা মহামারীর প্রেক্ষিত্রে মসজিদে হারাম ও নববিতে স্বয়ংক্রিয় রোবটের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ছিটানো, প্রবেশপথে অত্যাধুনিক থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন এবং বিশেষায়িত ‘ইতামারনা’ অ্যাপসের মাধ্যমে ওমরাহ কার্যক্রম চালু রেখেছে। এর সঙ্গে আসন্ন হজে আরও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।
পবিত্র দুই মসজিদের গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্সি ফর অ্যাফেয়ার্সের দেওয়া তথ্যমতে, রোবটগুলো স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসারে, ছয়টি স্তরে নিরাপদ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং জীবাণুমুক্তকরণের প্রয়োজনীয়তার স্মার্ট বিশ্লেষণ নিশ্চিত করবে।
কাবা শরিফের পরিবেশ বিভাগের প্রধান হাসান আল সৌহিরি বলেন, ব্যাটারি বিশিষ্ট রোবটগুলো কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা চলতে পারে। এর মধ্যে প্রারম্ভিক সতর্কতা বৈশিষ্ট্যও যুক্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, মানচিত্রের চার্ট করার জন্য ডিভাইসটিতে একটি উচ্চমানের রাডার ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হাজিদের ভিড় সামাল দিতে ও হজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে লক্ষণীয় বিষয়। হাজিদের গতিবিধি ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ কম্পিউটার সংযোগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে। সব হাজি যাতে হজের বিভিন্ন ইবাদত সময়মতো সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, সে জন্য রোবটগুলো দিনরাত নির্দেশনা দিয়ে যাবে।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সেক্রেটারি হিশাম আবদুল মোমেন সাঈদ আরব নিউজকে জানিয়েছেন, ওমরাহ’র মতো মসজিদে হারামে হাজিদের ভিড় নিয়ন্ত্রণে এ বছর গ্রুপভিত্তিক সময় নির্ধারণ করা হবে। ইতামারনা অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করেই তবে মসজিদে হারামে নামাজ ও কাবা তওয়াফের সুযোগ পাবেন হাজিরা। তা ছাড়া হাজিদের শারীরিক অবস্থার সার্বক্ষণিক তথ্য নিতে থাকবে অ্যাপটি, ফলে কেউ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার।
প্রত্যেক হাজি হজের নিয়ম অনুসারে সাতবার কাবা শরীফ তাওয়াফ, সাফা এবং মারওয়াহ পাহাড়ের মাঝে সাতবার পিছনে পিছনে সাত বার ঘড়ির কাঁটা ধরে হাঁটেন, তারপরে জামজমের পানি পান করেন, নজরদারি করতে দাঁড়িয়ে আরাফাত পর্বতের সমভূমিতে গিয়ে মুজদালিফার সমভূমিতে একটি রাত যাপন এবং তিনটি স্তম্ভের উপরে পাথর নিক্ষেপ করে শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপের জন্যে রোবট অব্যাহতভাবে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবে। এরপর কোরবানির পরে হাজিদের মাথা মুণ্ডন করতে হয়।
আরবি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবে আগামী ১৯ জুলাই (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বিশ্বের অন্য দেশ থেকে হজযাত্রী গ্রহণ করা হবে কি না, হলে কোন দেশ থেকে কত জন নেওয়া হবে, তাদের জন্য কী শর্ত দেওয়া হবে, খরচ কেমন হতে পারে, সার্বিক ব্যবস্থাপনা কী হবে এর সবকিছু এককভাবে সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের বিষয়। তাদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব দেশকে অনুমতি দেওয়া হবে, শুধু সেসব দেশের মানুষ হজ পালনের সুযোগ পাবেন।
হাতে চল্লিশ দিনের কম সময় রয়েছে। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে হজের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তাই এবার বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া যাবে কি না, এমন সংশয় থাকছে। তার পরও নিবন্ধিতদের টিকা প্রদানসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেই শুরু হবে বাংলাদেশিদের হজ যাত্রা।
সম্প্রতি সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শর্ত সাপেক্ষে আসন্ন হজে মোট ৬০ হাজার জনকে হজ করতে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সৌদির অভ্যন্তরীণ ১৫ হাজার এবং বাইরে থেকে ৪৫ হাজার জনকে হজের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। শর্তের মধ্যে রয়েছে হজে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে করোনার টিকার দুই ডোজ পূর্ণ করা। সৌদি যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ হওয়া, সৌদি গিয়ে ৭২ ঘণ্টা কোয়ারেন্টাইনে থাকা; সেখানেও টেস্টে নেগেটিভ হতে হবে। হজ যাত্রীদের বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। সৌদির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শর্ত সাপেক্ষে হজের সুপারিশ করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এবারের হজ পরিকল্পনায় করোনা মহামারীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব।
সম্প্রতি দেশটির তথ্য ও সংবাদমাধ্যম বিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ আল কাসাবি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘গত বছর থেকে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এর কয়েকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে, যেগুলো অনেক বেশি সংক্রামক ও প্রাণহানিকর। এমতাবস্থায় এবারের হজ ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনায় করোনা মহামারীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। মহামারীর বিষয়টি মাথায় রেখেই চলতি বছরের পরিকল্পনা সাজানো হবে। আমরা চাই না, হজ উপলক্ষে সৌদি আরব করোনার কেন্দ্রে (এপিসেন্টারে) পরিণত হোক, কিংবা হজ শেষে পৃথিবীজুড়ে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হোক।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ