২০৩৪ বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ সৌদি আরব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, টুর্নামেন্ট চলাকালীন দেশে কোথাও মদ বিক্রি করা হবে না, এমনকি হোটেলেও নয়। তবে সমকামী দর্শকদের স্বাগত জানাবে দেশটি। মুসলিম সংস্কৃতির অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক দেশটি।
ইংল্যান্ডে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে অংশ নিতে আসা সমকামী দর্শকদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, “সৌদিতে আমরা সবাইকে বরণ করে নেব। এটা শুধু আমাদের আসর নয়, এটা বৈশ্বিক আসর। বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সবাইকে স্বাগত জানাতে চাই।”
সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে মদ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানালেও, অন্যদিকে এটি পশ্চিমা দর্শকদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সৌদি আরব তাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ বজায় রেখেই বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।
উল্লেখ্য, ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে গত ডিসেম্বরে নিশ্চিত করা হয় সৌদি আরবের নাম। এই বিশ্বকাপ আয়োজনের লড়াইয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না মরু দেশটির।
মুসলিমপ্রধান দেশটিতে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ। গত বছর অবশ্য বিদেশি অমুসলিম কূটনীতিকদের জন্য মদের দোকান খোলা হয়, ৭০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সেখানে যা প্রথম মদের দোকান। তবে স্থানীয়দের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।
রাষ্ট্রদূত এবার এলবিসিকে জানালেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে বিদেশি দর্শক-সমর্থকরাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবেন।
“এই মুহূর্তে আমাদের ভাবনা হলো, অ্যালকোহলের অনুমতি আমরা দেব না। অ্যালকোহল ছাড়াও অনেক মজা হতে পারে। অ্যালকোহল পান করা তো শতভাগ জরুরি নয়। চলে যাওয়ার পর যদি আপনি পান করতে চান, সেটা আপনার ব্যাপার। তবে আমরা এটার অনুমতি দেব না বলেই আপাতত ঠিক করেছি।”
অ্যালকোহল নিয়ে নানা প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত এক পর্যায়ে মজা করে বলেন, “আমাদের আবহাওয়ার মতো দেশটাও ‘ড্রাই কান্ট্রি।’ … মানে কি, সত্যিই আপনারা পান না করে থাকতে পারেন না…?”
আরেক আরব দেশ কাতারে ২০২২ বিশ্বকাপেও অ্যালকোহলের ব্যাপারটি ছিল তুমুল আলোচিত। সেখানে শুরুতে স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল বিক্রির ঘোষণা দেওয়া হলেও বিশ্বকাপ শুরুর দুই দিন আগে সিদ্ধান্ত আবার বদলে যায়। সমর্থকেরা স্রেফ হোটেলে ও নির্দিষ্ট কিছু ফ্যান পার্কে অ্যালকোহল কিনতে পেরেছেন। সৌদি আরবে তেমন সুযোগও থাকবে না।
বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না পরিষ্কার করে জানিয়ে দিলেন প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সাউদ।
“সব দেশেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমাদের সংস্কৃতির আওতার মধ্যে সবকিছুকে আমরা স্বাগত জানাব। তবে অন্যদের জন্য তো আমরা আমাদের সংস্কৃতি বদলাতে পারব না।”
আরেকটি জায়গায় অবশ্য ছাড় দিতে আপত্তি নেই তাদের। সৌদি আরবে সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। তবে বিদেশি এলজবিটিকিউ অনুসারী বা সমকামী সমর্থকেরা নিরাপদে সেখানে যেতে বা খেলা দেখতে পারবেন বলে নিশ্চয়তা দিলেন রাষ্ট্রদূত।
“সৌদিতে আমরা সবাইকে স্বাগত জানাব। এটা তো সৌদি ইভেন্ট নয়, এটা একটা বৈশ্বিক আয়োজন। কাজেই সীমানা বাড়িয়ে আমরা সবাইকে স্বাগত জানাব, যারা আসতে চান।”
আপনার মতামত জানানঃ