সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ট্রিলিয়ন ডলারের শহর নিওম তৈরির স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের তকমা পাওয়া শহরটির নকশা প্রকাশ করেন যুবরাজ। মূলত তেল নির্ভরতা থেকে দেশকে বের করে আনতেই আয়নায় ঘেরা অত্যাধুনিক এই মরু শহর নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন তিনি।
পরিকল্পনা ছিলো লোহিতসাগরের প্রবেশদ্বারে আকাবা উপসাগরের মুখ থেকে তাবুক প্রদেশে ১৭০ কিলোমিটার লম্বা হবে শহরটি। ‘দ্য লাইন’ নামে এই রৈখিক শহর নিওম প্রকল্পের একটি অংশ। মাত্র ১৩ বর্গমাইল এলাকায় ৯০ লাখ মানুষের বসবাস হবে বলে দাবি করা হচ্ছিল।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, যতটা দ্রুত শহরটি তৈরি হবে বলে মনে করা হয়েছিল, তা হচ্ছে না। আয়না ঘেরা মরু শহর নির্মাণের এই স্বপ্ন কিছুটা মলিন হয়ে আসছে। প্রকল্পটির জন্য যত খরচ হবে, তা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে রাজতন্ত্র। আর অর্থসংকটে প্রকল্পটির বিস্তারও কমে আসছে।
সৌদি আরবের যুবরাজ ও ডি-ফ্যাক্টো শাসক মোহাম্মদ বিন সালমানের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প নিওম। এই প্রকল্পটি দ্য লাইন নামেও পরিচিত। ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাঁকে মেরে ফেলার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীকে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে সৌদি আরবের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
কর্নেল রাবিহ আলেনেজি নামে সৌদি আরবের এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্য লাইন বা নিওম প্রকল্পের জমি গ্রহণের জন্য কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে প্রয়োজনে তাঁকে মেরে ফেলার নির্দেশ ছিল। এমনকি একজন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে।
কর্নেল আলেনেজি গত বছর যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে চলে যান। মূলত সেখানে থাকার কারণেই তিনি এ কথা প্রকাশ করতে পেরেছেন।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দ্য লাইন থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম আল-খুরাইবাহের বাসিন্দাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। এই গ্রামটির বাসিন্দারা হুওয়াইতাত গোত্রের সদস্য।
আলেনেজি বলেন, ‘২০২০ সালের এপ্রিল মাসের এক আদেশে বলা হয়েছিল যে, হুওয়াইতাত গোত্রটি বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত এবং যে কেউ (দ্য লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের) বিরোধিতা করলে তাঁকে হত্যা করতে হবে।’
তিনি বলেন, এটি মূলত জমি অধিগ্রহণের জন্য মানুষ মারার ছাড়পত্র ছিল। তবে আলেনেজি নিজে সেই মিশনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে।
সৌদি আরবের সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুসারে, আব্দুল রহিম আল-হুওয়াইতি দ্য লাইন প্রকল্পের জন্য গঠিত কমিটিকে তাঁর জমি রেজিস্ট্রি করা থেকে বাধা দেন। তার একদিন পরই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং গ্রামটি উচ্ছেদ করা হয়। অবশ্য, সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, হুওয়াইতিরা তাদের ওপর গুলি ছুড়লে জবাবে তারাও পাল্টা গুলি করে। আর সেই গুলিতেই আব্দুল রহিম মারা যান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রিন্স সালমান শহরটিতে ১০টি প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেগুলোর একেকটি ফুটবল মাঠের চেয়ে বড় হবে। এছাড়া এই শহরের প্রত্যেকটি বাড়ি ৪০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা হবে।
আপনার মতামত জানানঃ