পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকার বাসিন্দা ফিলিস্তিনি আন্দোলন ও মানবাধিকারকর্মী জমজ দুই ভাই-বোনকে মুক্তি দিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ। আটকের কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। খবর আল-জাজিরার।
এ দুজন হলেন পূর্ব জেরুজালেমের পার্শ্ববর্তী শেখ জাররাহ এলাকার বাসিন্দা মুনা আল-কুর্দ ও তার যমজ ভাই মোহাম্মদ আল-কুর্দ। গত রোববার তাদের আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৩ বছর বয়সী জমজ দুই আন্দোলনকর্মীর নাম মুনা আল-কুরদ ও মোহাম্মদ আল কুর্দ। তারা শেখ জাররাহতে চলমান ফিলিস্তিনি আন্দোলনের সম্মুখসারির কর্মী।
ইসরায়েলি পুলিশ হেফাজত থেকে মুক্তির পর মুনা আল-কুর্দ বলেন, ‘আমাদের আতঙ্কিত করতে এবং ভয় দেখাতে দখলদাররা যাই করুক না কেন এবং যতোবার গ্রেপ্তার করুক, তাতে আমরা ভীত নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের বাড়িতে থাকব এবং আমাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠার ভূমি রক্ষায় প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
মুনার ভাই মোহাম্মদ আল কুর্দ বলেন, ‘আমরা মোটেও ভীত নয়। আমরা সব অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব এবং আমাদের বাড়ি ও ভূমি রক্ষায় আরও তৎপর থাকব।’
এর আগে রোববার (৬ জুন) মুনা ও মোহাম্মদকে আটক করে নিয়ে যায় ইসরায়েলি পুলিশ। শেখ জাররাহ আন্দোলনের পেছনে তাদের উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ করে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের যে পাঁয়তারা চলছে, এর বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছিলেন ওই দুই ভাই-বোন। এ কারণে তাদের আটক করা হয়।
তবে ইসরায়েলের পুলিশ দাবি করেছে, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন ওই দুজন।
সম্প্রতি ইসরায়েল সরকার ঘোষণা করেছিল, পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনিরা তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং তারপরেই শুরু হয় হাঙ্গামা। হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের তীব্র সংঘাত শুরু হয়। জেরুজালেমে ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ শুরু হয়। গোড়া থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মুনা এবং মোহাম্মেদ।
রোববার পুলিশ আচমকাই মুনার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। অভিযোগ, গোটা বাড়ি তছনছ করে দিয়েছে পুলিশ। তারপরেই মুনার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা এর তীব্র প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। মুনাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে, ফিলিস্তিনিরা থানার বাইরে প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন। পুলিশ গ্রেনেড ছোড়ে। পরে মুনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভাই মোহাম্মেদের নামে সমন জারি করা হয়। পরে মোহাম্মেদ নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পন করে।
দুই ভাইবোনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তাদের বাবা নাবিল আল কুর্দ বলেন, পুলিশ শেখ জাররাহতে তাদের বাড়িতে হানা দেয়। তারা মুনা আল কুর্দকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় এবং মোহাম্মদ আল কুর্দকে থানায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আইনজীবী নাসের ওদেহ জানান, মোহাম্মদ আল কুর্দকেও গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী মুনা আল-কুর্দ অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ বসতিতে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এই অঞ্চলে গত তিন মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর বলপ্রয়োগপূর্বক উৎখাতের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগে ‘সেইভ শেখ জাররাহ’ ক্যাম্পেইন চালিয়ে আসছিলেন দুই ভাই-বোন। তাদের এই আন্দোলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বের নজর কাড়ে।
গত মাসে ইসরায়েলি পুলিশ শেখ জাররাহ বসতি থেকে ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ার নির্দেশের পর মুনা ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ শুরু করেন যা এখনও চলমান রয়েছে।
এর আগে শেখ জাররাহ থেকেই আল জাজিরার নারী সাংবাদিক গিভারা বুদেইরিকে কয়েক ঘণ্টা আটকের পর ছেড়ে দেয় ইসরায়েল পুলিশ। পুর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহতে ফিলিস্তিনিদের একটি বিক্ষোভ নিয়ে প্রতিবেদন করার সময় তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ইসরায়েলি পুলিশ। এসময় পুলিশ আল জাজিরার ক্যামেরাসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংস করে।
ফিলিস্তিনি ‘নাকসা’র ৫৪তম বার্ষিকী পালনের প্রতিবেদন করছিলেন বুদেইরি। নাকসা শব্দের অর্থ ‘দুর্ভাগ্য’। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল কর্তৃক পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা দখলকে উল্লেখ করতে এ শব্দটি ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিরা।
গিভারা বুদেইরি ২০০০ সাল থেকে আল জাজিরায় কর্মরত রয়েছেন। তাকে যখন ইসরায়েলি পুলিশ গ্রেপ্তার করে তখন তার গায়ে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট ছিল। ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিসের কার্ডও তার সঙ্গে ছিল। আগামী ১৫ দিন শেখ জাররাহতে বুদেইরি যেতে পারবেন না এমন শর্তে তাকে মুক্তি দেয় ইসরায়েলি পুলিশ।
মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ সাময়িক ভাবে থেমেছিল। এখনো আলোচনা চলছে। তারই মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে উত্তেজনা ছড়াবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ