বিশ্ব এখনও বাস করছে করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে। বিভিন্ন দেশে দৈনিক সংক্রমণও বাড়ছে নতুন করে। তবে ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের অন্যকোনো দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু নেই। এরইমধ্য ব্ল্যাক-হোয়াইট-ইয়েলো ফাঙ্গাসেও বিপর্যস্ত ভারত। আর এসবের মধ্যেই বিজ্ঞানীরা ভারতের একটি দুর্গম সমুদ্র তীরে মারাত্মক একটি ছত্রাকের সন্ধান পেয়েছেন। একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী এই ছত্রাকের (সুপারবাগ) কারণে পরবর্তী প্রাণঘাতী মহামারি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কোভিড চিকিৎসায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারই এজন্য দায়ী বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কোভিড রোগীর সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুপারবাগের বিস্তারও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সুপারবাগ কী?
সুপারবাগ হচ্ছে এক ধরনে অণুজীব। যেসব ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর, তাদের সুপারবাগ বলা হয়। এরা একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলে এদের মাল্টি ড্রাগ রেসিস্ট্যান্ট বলা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
এটি ক্যানডিডা বর্গের ছত্রাক যা কিনা ত্বকে ক্ষতের কারণে সৃষ্ট টিউমারের জন্য দায়ী। যা জিহ্বা ও যৌনাঙ্গে অতিমাত্রায় বৃদ্ধি লাভ করে। অন্তত ৪০টি দেশে সি. অরিসের সংক্রমণ দেখা গেছে। যেখানে তারা ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সে তুলনায় করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের মাত্র ১ শতাংশকে হত্যা করে, কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে অধিকসংখ্যক মানুষকে সংক্রমিত করে।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই সঙ্কটজনক হুমকিটি (সুপারবাগ) এখন আর কোনও ভবিষ্যদ্বাণী নয়। এটি এখন বিশ্বের প্রত্যেক স্থানেই ঘটছে। এছাড়া বিশ্বের যে কোন দেশের যে কোন বয়সের যে কোন ব্যক্তিকে আক্রমণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
করোনা চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সুপারবাগ
পরিস্থিতি শোচনীয় রুপ নেওয়ার একটি প্রধান কারণ, কোভিডে গুরুতর আক্রান্তদের জীবন বাঁচানোর লড়াই চিকিৎসা বিজ্ঞানে একেবারেই নতুন এক অধ্যায়। তাই হাতের কাছে সহজলভ্য এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত যেকোনো ওষুধই চিকিৎসকরা রোগীদের দিতে বাধ্য হন।
তবে, ভারতে এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক রোগীদের দেওয়া হয়েছে, যা অন্যান্য দেশে কোভিড চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত নয়। তার চেয়েও মর্মান্তিক ঘটনা, সক্ষমতার পূর্ণ ভারে বিশৃঙ্খল দশা হাসপাতালের, তাই সেখানকার কর্মীরাও সুপারবাগ সংক্রমণ যেন এক রোগী থেকে আরেকজনের দেহে না ছড়ায়- সেটি নিশ্চিত করার মতো দরকারি বাড়তি সতর্কতা নিশ্চিত করতে পারছেন না।
ভারতে কোভিড চিকিৎসায় যেসব অ্যান্টিবায়োটিক হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে; তারমধ্যে কয়েকটিকে শুধুমাত্র মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্তদের ওপর ব্যবহারের পরামর্শ দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের মাইক্রোবায়োলজিস্ট কামিনি ওয়ালিয়া জানান, মহামারির আগেই ভারতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের বিরুদ্ধে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিসটেন্স উদ্বেগজনক অবস্থায় ছিল, মহামারি হানা দেওয়ার পর এগুলোর নির্বিচার ব্যবহারই সম্ভবত সুপারবাগ বিস্তারের দাবানলে জ্বালানি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছি যে, মহামারি মোকাবিলার যুদ্ধে ব্যস্ত চিকিৎসকদের নজর এড়িয়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন বা অন্যান্য ওষুধ সহনশীল পরজীবীর সংক্রমণ বিস্তার লাভ করছে। অন্যদিকে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি (থেরাপি) অনুপস্থিত থাকায় অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যান্টি-বায়োটিকও প্রেসক্রাইব করা হচ্ছে।
গত সোমবার সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক চিকিৎসা বিজ্ঞান সাময়িকী- জার্নাল ইনফেকশন অ্যান্ড ড্রাগ রেসিসটেন্স- এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এমন কথাই জানিয়েছেন কামিনি ও তার সহ-গবেষকরা।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল কাউন্সিলের পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত ১০টি হাসপাতালে ভর্তি ১৭,৫৩৪ জন কোভিড রোগীর স্বাস্থ্যগত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাটি করা হয়। গবেষণার মেয়াদ ছিল, গেল বছরের ১ জুন থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষার আওতাভুক্ত রোগীদের ৬৪০ জন বা ৩.৬ শতাংশের ভেতর সেকেন্ডারি ইনফেকশন লক্ষ্য করা যায়। কিছু কিছু হাসপাতালে অবশ্য ২৮ শতাংশের মতো উচ্চহারে এমন ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় অর্ধেক সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে একইসঙ্গে করোনাভাইরাস ও অন্য পরজীবীর স্ট্রেইনের সহ-সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে একাধিক ওষুধের কার্যকারিতা সহনশীল অণুজীবের আক্রমণেই।
অর্থাৎ, গেল বছর মহামারির প্রথম ঢেউয়ের সময়েই গবেষকরা সুপারবাগ উপদ্রুপের ইঙ্গিত পান, যা এখন দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে শুরু করে অন্যান্য পরজীবীর সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। তাতে অনেক রোগীসহ কোভিড থেকে সেরে ওঠাদের অনেকেরই মৃত্যুর সংবাদও জানা যাচ্ছে।
সুপারবাগে ভারতে মৃত্যুহার
গবেষণা চলাকালে, সেকেন্ডারি সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের ৬০ শতাংশ মারা যান। সেই তুলনায় শুধু করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে এই হার ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। মৃতদের বেশিরভাগ আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কোভিড আক্রান্ত হয়ে তাদের শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। তার সাথে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় দুর্বল স্বাস্থ্যে শক্তিশালী ভিন্ন পরজীবীর আক্রমণ।
নয়াদিল্লি ভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিস ডায়নামিক্স, ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি’র পরিচালক রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, “এর মধ্য দিয়ে উঠে আসছে যে, কোভিডে কারো মৃত্যু যদি নাও হয়, অন্য সুপারবাগ সংক্রমণের কারণে অবশ্যই সেটা ঘটবে।” তার সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সহনশীল পরজীবীর উৎপত্তির ওপর গবেষণা করে থাকে।
ভারতে মহামারি দেখা দেওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হলেও, এরমধ্যে ১ কোটি মানুষ শুধু গত এক মাসে আক্রান্ত হন। ফলে হাসপাতাল ব্যবস্থায় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি দেখা দেয় মেডিকেল অক্সিজেনসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণ নিয়ে হাহাকার।
“দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ভারতে এখন শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে, সুপারবাগ শ্রেণির বিভিন্ন পরজীবীর হাতে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কী মাত্রায় পৌঁছেছে- তা কেউ জানে না।,” বলেন অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সেনানায়েক।
কোথায় কীভাবে পাওয়া গেল ‘সুপারবাগ’
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, পাথুরে তীর, জোয়ারের পানি আসা জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ জলাভূমিসহ আটটি জায়গা থেকে মাটি ও পানির ৪৮টি নমুনা সংগ্রহ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অনুরাধা চেীধুরীর নেতৃত্বের এক দল। শুরু হয় ওইসব নমুনাকে ঘিরে গবেষণা।
গবেষকেরা দুটি জায়গার সি. অরিস জীবাণু পৃথক করেন। একটি লবণাক্ত জলাভূমি যেখানে মানুষের যাতায়াত নেই, অন্যটি সৈকত যেখানে জনসমাগম রয়েছে।
অনুরাধার বরাত দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক নিউজ ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্স জানায়, নমুনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, সৈকত থেকে সংগ্রহ করা সি. অরিসের সবই একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী। হাসপাতালে পাওয়া ধরনের সঙ্গে এদের মিল রয়েছে।
লবণাক্ত জলাভূমির সি. অরিসের একটি নমুনা ড্রাগ প্রতিরোধী ছিল না। এ ছাড়া উচ্চ তাপমাত্রায় অন্য সি. অরিস জীবাণুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকলেও ওই নমুনার বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে ধীর ছিল। এতে প্রতীয়মান হয়, লবণাক্ত জলাভূমির ওই নমুনা সি. অরিসের আরও ভয়ঙ্কর ধরন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের মলিকুলার মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আর্তুরো ক্যাসাডেভাল বলেন, অন্যান্য নমুনা মানুষসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদেহের উচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজিত হতে সক্ষম হলেও লবণাক্ত জলাভূমির ওই নমুনা হয়তো এখনও দেহের উচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজিত হতে পারেনি।
লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সি. অরিস প্রাকৃতিকভাবে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেই বাস করে বা ওখান থেকেই এর উৎপত্তি, তা গবেষণায় এখনও প্রমাণিত হয়নি। হতে পারে মানুষের মাধ্যমে ওই জায়গায় জীবাণুটি পৌঁছেছে।
উপসর্গ কী
দ্য সানের প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্বর ও ঠাণ্ডাবোধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই সুপারবাগ থেকে সৃষ্ট সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নেই। জ্বর বা ঠাণ্ডা লাগলে ওষুধ খেয়েও প্রতিকার পাওয়া যায় না বরং এটি মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশের আগে সি. অরিস জীবাণু চামড়ায় অবস্থান করে। একবার এটি রক্ত প্রবাহে ঢুকতে পারলে ভয়ানক অসুস্থতা দেখা দেয়, যা পরে সেপসিসে রূপ নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে ১ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষ সেপসিসে মারা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সুপারবাগটি রক্ত প্রবাহজনিত গুরুতর সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যেসব রোগীর ক্যাথেটার, ফিডিং টিউব বা ব্রিদিং টিউবের দরকার পড়ে, তাদের ক্ষেত্রে এ জীবাণু বেশ সক্রিয়।
লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের সংক্রমণের চিকিৎসা কঠিন হতে পারে। কারণ জীবাণুটি সবসময়ই একাধিক ছত্রাকবিরোধী ওষুধ প্রতিরোধী হয়। এ ছাড়া এটি পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর উপরিতলে দীর্ঘদিন অবস্থান করতে পারে।
সংক্রমণের কারণ
সি. অরিস জীবাণু সংক্রমণের কারণ এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য।
তাদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা সি. অরিস জীবাণু বন্য জায়গায় উচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজন হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে সি. অরিস ছত্রাক সহজে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। সাধারণত মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় ছত্রাক এতে বেঁচে থাকতে পারে না।
কীভাবে এর সমাধান হবে?
বিশেষজ্ঞরা টেস্টিং ও কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন, যা কিনা কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ। যা কিনা সি. অরিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি তারা নিয়মিতভাবে সুপারবাগ পরীক্ষার ওপরও জোরারোপ করেছেন। কেউ যদি সি. অরিস টেস্টে পজিটিভ আসেন, তবে মেডিকেল প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আরো নির্ধারণ করতে হবে তিনটি বিশেষ অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ সংক্রমণ হ্রাস করতে পারে কিনা।
এ কৌশল সাহায্য করতে পারে সুপারবাগের কারণে ঘটা মৃত্যুগুলোতে চিহ্নিত করতে, যেটি কিনা খুবই জটিল একটি কাজ। কারণ এ রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী অন্য কোনো সমস্যা নিয়ে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি আমরা চিহ্নিত করতে না পারি, তবে আমরা জানব না একজন রোগী কভিড-১৯-এর কারণে মারা গেল নাকি অন্য কোনো সংক্রমণে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াসমূহ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত রোগী পূর্ণ মেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিক না খেয়ে রোগ কমেছে ভেবে পূর্ণ মেয়াদের আগেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করেন। তবে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীন বহন করে। পরীক্ষা করে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি এবং স্বরূপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত।
শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পূর্ণ মেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন তারা।
তারা বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। কারা রোগীর ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন, কারা কিসের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করতে পারবেন। রোগীর সঠিক নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা ইত্যাদি বিশদভাবে নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে।’
এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে অন্য কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখছেন না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
বাংলাদেশে সুপারবাগ
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ তাদের ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স সম্পর্কে তাদের জরিপে উল্লেখ করে, ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিসমূহের মধ্যে ৯.৫% সেফিক্সিম, ১৪.৩% অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ৯০% এর বেশি সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং ডক্সিসাইক্লিন, ১০০% মেট্রোনিডাজল অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রেসিস্ট্যান্ট।
এদিকে মেডিকেল জার্নাল ওয়েবসাইট ‘পাবমেড’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজধানীতে ইতোমধ্যে কলিস্টিন অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট এশেরিকিয়া কোলাই (ই. কোলাই) সুপারবাগের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আমরা সুপারবাগ ঝুঁকিতে রয়েছি। পাগলা ঘোড়া যে কোন সময় লাগামছাড়া হতে পারে। তাই সুপারবাগ বাংলাদেশে যেন মহামারি আকার ধারণ না করতে পারে সেজন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ