করোনার টিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে কোভিশিল্ড টিকার চালান আবার কবে আসবে তা নিশ্চিত জানা যায়নি এখনও। অনিশ্চয়তার মধ্যেই রাশিয়ার স্পুটনিক ও চীনের সিনোফার্মাকে টিকার জন্য জরুরি অথোরাইজেশন দেওয়া হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, স্পুটনিকের ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে মে মাসেই।
চীন থেকে উপহার হিসেবে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা এসেছে৷ কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা, সেটা কাটছে না৷
দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ যতো মানুষ নিয়েছেন তারা সঠিক সময়ে একই টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। আবার দ্বিতীয় ডোজের টিকা অন্য কোম্পানির নিলে টিকার কার্যকারিতা থাকবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে অনাস্থা।
চীনের দেওয়া টিকায় লাভ নেই
চীনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া করোনা ভাইরাসের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা ঢাকায় পৌঁছেছে৷ বুধবার সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি উড়োজোহাজে টিকার ওই চালান দেশে আসে৷ পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে টিকা তুলে দেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং৷
গত ৭ মে চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি এই করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডাব্লিউএইচও) এ টিকা ব্যবহারের সবুজ সংকেত দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, চীনের কাছ থেকে যে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ৩০ হাজার ডোজ দিতে হবে বাংলাদেশে অবস্থান করা চীনা নাগরিকদের৷ ফলে যে চার লাখ ৭০ হাজার ডোজ টিকা বাকী থাকবে সেটা আমরা ভাগ করে দুই লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে দেব৷ ঈদের পরই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ তবে এই টিকা আমরা সারাদেশে পাঠাব না৷ কারণ এই অল্প টিকা সারাদেশে পাঠিয়ে লাভ নেই৷
যারা অক্সফোর্ডের টিকা প্রথম ডোজ নিয়েছে, তাদের দ্বিতীয় ডোজ এই টিকা দিয়ে দেওয়ার কোন পরিকল্পনা আছে কি-না? জানতে চাইলে অধ্যাপক আলম বলেন, এমন কোন গবেষণা আমরা এখনো পাইনি যে, এক কোম্পানির এক ডোজ দিয়ে, আরেক কোম্পানির আরেক ডোজ দেওয়া যাবে? ফলে এই টিকা এখন নতুন মানুষকেই দেব৷
দুই কোম্পানির টিকায় রয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুই ধরনের টিকার দুই ডোজ নেওয়া নিয়ে গবেষণা চলছে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্ন্যাপ বলছেন, এক ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও আরেক ডোজ ফাইজারের টিকা নিলে প্রাপ্তবয়স্কদের শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও মাংসপেশিতে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো খুব গুরুতর নয়।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্ন্যাপ বলেন, গবেষণায় যে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে, তা তারা আশা করেননি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে দ্য কম-কভ নামে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। তাতে দেখা গেছে, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা পাওয়া যায়। করোনার নতুন ধরন থেকে সুরক্ষা পেতে ও সরবরাহ বিঘ্নিত হলে ক্লিনিকগুলোকে দুই ধরনের দুই ডোজ টিকা দিতে বলা হয়েছে।
কানাডার ওন্টারিও ও কুইবেক প্রদেশের কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা শিগগিরই মিশ্র টিকা ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণায় ৫০ ঊর্ধ্ব ৮৩০ জন স্বেচ্ছাসেবককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগামী জুন মাসে এই গবেষণার পূর্ণ ফলাফল প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষণার প্রাথমিক তথ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে একটি গবেষণা বিবরণীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ টিকা চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়েছেন, তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের জ্বর জ্বর ভাব দেখা গেছে।
অন্যদিকে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক ডোজ ও ফাইজারের আরেক ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাদের ৩৪ শতাংশের মধ্যে জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিয়েছে।
ট্রায়ালের প্রধান তদন্তকারী অধ্যাপক স্ন্যাপ বলেন, যারা দুই ধরনের দুই টিকার ডোজ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, অস্থিরতা ও মাংসপেশির ব্যথার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গত এপ্রিল মাসে ১ হাজার ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর মডার্না ও নোভাভ্যাক্সের মিশ্র টিকার গবেষণা চালানো হয়। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পরেও অনেকের মধ্যে দুর্বলতার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অন্য কোম্পানির টিকা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত
এক কোম্পানির করোনার টিকা এক ডোজ নিয়ে অন্য কোম্পানির টিকা কি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে নেওয়া যায়? এমন কী কোন গবেষণা বের হয়েছে? জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোন গবেষণা বের হয়নি৷ ফলে প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা নেওয়া হবে, দ্বিতীয় ডোজও সেই কোম্পানির টিকা নেওয়াই ভালো৷
তিনি বলেন, যারা বলছেন, দুই কোম্পানির টিকা নেওয়া যায়, তারা কি কোন গবেষণা করেছেন? গবেষণা করলে তারা এ কথা বলতে পারতেন না৷ আমি মনে করি, যে ২০ লাখ ডোজের মতো ঘাটতি আছে, সেটা পূরণ হয়ে যাবে৷ নানা জায়গায় সরকার চেষ্টা করছে, এটা পাওয়া এমন কোন কঠিন কাজ হবে বলে আমার মনে হয় না৷”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এক কোম্পানির এক ডোজ টিকা নিলে অন্য কোম্পানির আরেক ডোজ টিকা নেওয়া যাবে না, এটা কিন্তু ঠিক না৷ প্রত্যেকটা ভ্যাকসিনের আল্টিমেট প্রোডাক্ট হল স্পাইক প্রোটিন৷ মানে হল, করোনা ভাইরাসের স্পাইকে যে প্রোটিনটা আছে সেটাকে এন্টিজেন হিসেবে ব্যবহার করা৷
‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা সেই কাজটা শিমপাঞ্জির এডোমা ভাইরাসের ডিএনএ দিয়ে করেছে৷ আর সিনোফার্মা হলো গোটা ভাইরাসটাকে ইনএক্টিভেট করেছে৷ আমাদের মেইন উদ্দেশ্য হল স্পাইক প্রোটিনের বিপরীতে এন্টিবডি তৈরি করা৷ যেটা অ্যাস্ট্রাজেনেকাও করছে, ফাইজারও করছে, মডর্নাও করছে আবার সিনোফার্মাও করছে৷ সবাই একই কাজ করছে, বিভিন্ন মেথডে৷ একটা দিলে আরেকটা দেওয়া যাবে না, কিছু কিছু লোক এটা বলছে, সেটা ঠিক না’।
তিনি বলেন, যারা প্রথম ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা দিয়েছে তারা দ্বিতীয় ডোজ এই সিনোফার্মের টিকা দিতে পারবে৷ এতে কাজ হবে৷
এ নিয়ে কোন গবেষণা আছে? জবাবে অধ্যাপক ইসলাম বলেন, না, এখনো কোন গবেষণা হয়নি৷ আমরা চাচ্ছি, স্পাইক প্রোটিনের বিপরীতে এন্টিবডি৷ সেটা দুই কোম্পানির দুই ডোজ নিলেও বুস্টিং হবে৷
মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, টিকা এক ডোজ নেওয়ার পর তিন মাস সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা নেওয়া হয়েছে, তাকে দ্বিতীয় ডোজ সেই কোম্পানির টিকা নিতে হবে। তবে দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির নেওয়া যাবে কিনা সেটি এখন হিউম্যান ট্রায়ালে রয়েছে, গবেষণা চলছে। ফলাফল এখনো আসেনি।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলগমীর বলেন, প্রথম ডোজ যে কোম্পানির টিকা, দ্বিতীয় ডোজ সেই কোম্পানির টিকা নিতে হবে। এখন পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। গবেষণা পরিবর্তন হলে সেটা জানানো হবে।
তিনি বলেন, টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে টিকা চলে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, টিকা নেওয়ার পরও সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একেবারেই নেওয়া যাবে না, তা নয়। এ সংক্রান্ত গবেষণার কিছু প্রাথমিক ফল আশাব্যাঞ্জক। আমার মতে, দুটো মিক্স করা যাবে।’
‘দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় তিন মাসের জায়গায় চার মাস গ্যাপ হলেও আমাদের সাজেশন থাকবে একই কোম্পানির টিকা নেওয়া। গ্যাপ আরও বাড়লেও অসুবিধা নেই।’
অধ্যাপক লিয়াকত আলী আরও বলেন, ‘দুই কোম্পানির টিকা নেওয়া যাবে, আবার গ্যাপ দিয়ে একই কোম্পানিরটাও নেওয়া যাবে।’
মডার্না ও ফাইজারের দুই ডোজ দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা হচ্ছে জানিয়ে ডা. লিয়াকত বলেন, ‘দুই কোম্পানির দুই ডোজ নিয়ে ট্রায়াল হচ্ছে। ফলাফল এখনও আসেনি। এ নিয়ে কাজ চলছে। তবে দুই কোম্পানির দুই ডোজ মিক্স করলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, এমনও হতে পারে। তবে যেহেতু গবেষণার ফল এখনও চূড়ান্ত নয়, তাই আগের টিকাই নেওয়ার কথা বলবো।
মজুত সোয়া ৭ লাখ, দ্বিতীয় ডোজ বাকি ১৪ লাখের বেশি
দেশে সংগৃহীত মোট টিকার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২ লাখ। বর্তমানে অবশিষ্ট টিকা আছে ৭ লাখ ২৮ হাজার ৯৩৫ ডোজ। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার বাকি রয়েছে ১৪ লাখের বেশি মানুষ, যারা এরইমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন।
বুধবার (১২ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের টিকাদান বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া হিসাব মতে, দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৬ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ জন। অর্থাৎ, দুই ডোজ মিলিয়ে মোট ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৫ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৪ জনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি। এদের সবাইকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও দুই কোম্পানির দুই ডোজের টিকা গ্রহণের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।
বুধবার একদিনে দুই ডোজ মিলিয়ে টিকা নিয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৩২ জন। তাদের মধ্যে কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণ কোন পথে
৭ ফেব্রুয়ারি দেশে জাতীয়ভাবে করোনা প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত এ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬১৬ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৮ লাখ পাঁচ হাজার ৬৯৪ জন। দুই ডোজ মিলিয়ে মোট ৮৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৫০ ডোজ টিকা দেওয়া শেষ হয়েছে।
২৬ এপ্রিল থেকে বন্ধ করা হয়েছিল প্রথম ডোজের কার্যক্রম। প্রথম ডোজ দেওয়া ২৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯২২ জন এখনও দ্বিতীয় ডোজ পাননি। এদিকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৬ জন।
গত নভেম্বরে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ডের ৩ কোটি ডোজ টিকার বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মা বাংলাদেশে এই টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরবরাহ করবে। মাসে সেরাম থেকে দেশে ৫০ লাখ ডোজ আসার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন টিকা পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত ভারত থেকে টিকা এসেছে এক কেটি দুই লাখ ডোজ। ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২১ জানুয়ারি আসে ২০ লাখ ডোজ। সরকারের অর্থে কেনা টিকার প্রথম চালানে ২৫ জানুয়ারি আসে ৫০ লাখ ডোজ। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি আসে ২০ লাখ ডোজ। ২৬ মার্চে আসে আরও ১২ লাখ ডোজ। অর্থাৎ, ভারত থেকে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ।
ফেব্রুয়ারির চুক্তির ৩০ লাখ এবং মার্চের ৫০ লাখ ও এপ্রিলের ৫০ লাখ টিকাও দেশে আসেনি। অর্থাৎ চুক্তির এক কোটি ৩০ লাখ টিকা এখনও পায়নি বাংলাদেশ।
এর মাঝে ভারত টিকা রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় টিকা প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঈদের আগেই শেষ হচ্ছে আপাতত দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কার্যক্রম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও সময়মতো দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।
এই টিকা পাওয়া না গেলে কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সবাই। সরকার প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া আগেই বন্ধ করেছে। টিকার জন্য নিবন্ধনও গতকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সময়মতো না পেলে কী হবে, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দুই কোম্পানির টিকা হলে কোনো সমস্যা হবে কি না, এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যারা অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ অক্সফোর্ডেরই নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ পর্যন্ত দেশে যত মানুষকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মত মজুদ হাতে নেই। ঘাটতি প্রায় ১৫ লাখ ডোজের মত।
সেই ঘাটতি পূরণে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে, কিন্তু নিশ্চয়তা মেলেনি।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ৮ থেকে সপ্তাহ পর দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ।
এখন টিকা সঙ্কটের মধ্যে প্রথম ডোজ পাওয়া সবাইকে সময়মত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে কি না, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। তিনি তাকিয়ে আছেন ‘ভাগ্যের’ দিকে।
“আমরা ভারত ছাড়াও অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। যেখানে অক্সফোর্ডের টিকা মজুদ আছে, সেসব জায়গায় আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করছি। চিঠিপত্র দেওয়া হচ্ছে। ভাগ্য ভালো হলে আমরা তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব।”
টিকার জন্য ভারতকেও প্রতিনিয়ত ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের হাতে আরও এক মাস সময় আছে। দেখি এই সময়ের মধ্যে আমরা টিকা আনতে পারি কি না।”
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ