বাংলাদেশের একজন বিবাহিত নারী প্রজনন বয়সে (১৫ থেকে ৪৯ বছর) গড়ে দুটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। ইউএনএফপিএ। তাদের নিয়মিত বার্ষিক প্রকাশনা ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১’-এ তথ্য দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনএফপিএ। এ বছরের প্রতিবেদনে নারীর শরীরের ওপর নারীর অধিকারকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৩ লাখ এবং বছরে ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। একজন বিবাহিত নারী প্রজনন বয়সে (১৫ থেকে ৪৯ বছর) গড়ে দুটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একজন নারীর তার নিজের শরীরের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ আছে, তার ওপর নির্ভর করে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে তার কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বিশ্বব্যাপী নারীর শরীরের ওপর তার অধিকারের বিষয়টি অগ্রাহ্য করার নানা ধরন লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নারীশিক্ষা ও অধিকার বিষয়ে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত বয়সী শিশুদের ৯৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে যায়। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযুক্ত বয়সীদের মধ্যে এই হার ৬২ শতাংশ। তবে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে ৫৯ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যায়। আর স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন ২৯ শতাংশ নারী।
প্রতিবেদন বলছে, অনেক দেশে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা থাকার পরও পুরুষ যত আইনি অধিকার ভোগ করেন, তার ৭৫ শতাংশ ভোগ করতে পারেন নারী। বিশ্বের কোনো দেশ সামগ্রিকভাবে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে পারেনি। সমতা নিশ্চিত হলে নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংস ঘটনা ঘটত না, বেতন বৈষম্য হতো না, নেতৃত্বে বৈষম্য দেখা যেত না, শারীরিক স্বাধীনতায় ঘাটতি থাকত না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন নারী একজন মা হওয়ার আগে একজন মানুষ। মাতৃত্বই জীবনের কেন্দবিন্দু নয়, হওয়া উচিতও নয়। স্বামীর, পরিবারের, সমাজের ভুলে গেলে হবে না যে, মা হওয়াই তার জীবনের একমাত্র সত্য নয়। খুবই হতাশার কথা— এই কথা পরিবার, সমাজ তো ভুলে যায়, নারী নিজেও ভুলে যায়।
কারণ মা না হতে পারাকে একমাত্র নারীরই দোষ মনে করা হয়। সন্তান হওয়া বা না হওয়ার জন্য নারীর একার কোনো ভূমিকা নেই আমরা খুব ভালো করে জানি। তা সত্বেও আমাদের সমাজে পুরুষের অক্ষমতাকে একদমই এড়িয়ে যাওয়া হয়। আর একারণেই নিঃসন্তান নারীকে আজীবন বন্ধ্যা শব্দটি শুনতে হয়।
তারা বলেন, নারীর তুলনায় পুরুষের পিতৃত্বে বন্ধ্যা শব্দটি খুব একটা প্রভাব ফেলে না। পান থেকে চুন খসলেই যেখানে আমরা নারীরাই আরেকজন নারীকে সব দোষ দেই, আর যদি হয় নিঃসন্তান তবে তা যেন হয়ে যায় আগুনে ঘি ঢালার মতো। সন্তানহীন নারীকে মানুষ বলেই মনে করা হয় না। খুবই দুঃখজনক। নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন এমন অনেক নিঃসন্তান নারী আছেন যাদেরকে বন্ধ্যা পরিচয়টি তাদের অবস্থান থেকে টলাতে পারেনি।
তারা বলেন, মাতৃত্বই সমস্ত সাফল্যের মূল এমন ভাবা বন্ধ করা না হলে নারী নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে পারবে না। নারীর জীবনের এক এবং শেষ কথা যেন মাতৃত্ব না হয়। মা হতে হবেই এই ভারে নারী যেন তার জীবনের স্বপ্নগুলো হারিয়ে না ফেলে এবং মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মান থেকে যেন বঞ্চিত না হয়। শরীরের ভার, যন্ত্রণা, কষ্ট সহ্য করে সন্তান আনার স্বপ্ন ও ইচ্ছে তার নিজের বুক থেকে উঠে আসে, তাই এটার বাস্তবায়ন না হলে নারীর জীবনকে ব্যর্থ ভাবা মোটেই মানবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ