বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ধর্ষকদের জন্য অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, সমতলে, ঘরে, বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৃশংস নিপীড়ণের শিকার হচ্ছেন নারীরা। শিক্ষিত, কর্মজীবী, গৃহবধূ, শ্রমিক যে পরিচয়েরই হোক না কেনো ধর্ষকের নোংরা হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ-ই। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত– শ্রেণির কোন ভেদাভেদ এক্ষেত্রে অন্তত দেখা যাচ্ছে না।
করোনা সংকটকালীন সময়ে নারীদেরর প্রতি সকল ধরণের সহিংসতা, ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, বৈবাহিক ধর্ষণ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সাইবার ক্রাইম ও পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতার যতগুলো ধরন আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ধর্ষণ। দেশে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মতো অপরাধ অন্য অপরাধগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পৃথক দুটি বেসরকারি সংস্থার গত দুই মাসের হিসাব এমন চিত্রই তুলে ধরছে।
সাজা বাড়ানোর সাথে বেড়েছে ধর্ষণ
গত বছরের অক্টোবরে সরকার ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করেছে। কিন্তু অপরাধ কমার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। তদন্তে পুলিশের গাফিলতি, মামলায় বেশিসংখ্যক সাক্ষী রাখা, ডিএনএ পরীক্ষা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা, ভুক্তভোগীর মামলা চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য না থাকা— সর্বোপরি বিচার বিলম্বিত হওয়াই সমাজে এই অপরাধটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাজা বাড়ানোর আগের এক মাসে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১১৬ জন নারী–শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর সাজা বাড়ানোর পর ১৪ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত এক মাসে ১৮৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
দু’মাসে নারী নির্যাতন
দেশে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৬৭ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২২৯ জন। এটা মোট নির্যাতনের ঘটনার ৪০ শতাংশ। ১৩টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এ–সংক্রান্ত খবর পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই তথ্য দিয়েছে। ধর্ষণের পরেই রয়েছে রহস্যজনক মৃত্যু, শারীরিক নির্যাতন, অপহরণ, যৌতুকের কারণে হত্যা ও নির্যাতন, আত্মহত্যা, বাল্যবিবাহ এবং অ্যাসিড সহিংসতার মতো ঘটনাগুলো।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুধু গত জানুয়ারি মাসে ১৩০টি নারী নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাই ছিল ৮৪টি। ৯টি জাতীয় দৈনিক ও কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত খবর এবং নিজেদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এমনটি বলছে তারা।
তাদের হিসাবে জানুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের মোট ঘটনার ৬৪ শতাংশই ছিল ধর্ষণ। এই এক মাসে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে (আহত ও নিহত) ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, যৌন হয়রানি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, অ্যাসিড সহিংসতা ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বাকি অন্যান্য।
মার্চ মাসের প্রথম দুই সপ্তাহের কিছু ঘটনা
৩ মার্চ
(১) ভোলায় প্রতিবেশী দাদার বিরুদ্ধে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। শিশুটির পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দের সহযোগীতায় তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার (৩ মার্চ) দুপুরে সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিশুটির চাচিসহ পরিবারের সদস্যরা জানান, দুপুরের দিকে তার চিকিৎকার শুনে ঘরে গিয়ে দেখা যায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ওই সময় অভিযুক্ত ছালাউদ্দিন মীর ঘর থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে যান। তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
(২) বাগেরহাটের রামপালে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে (১৮) ধর্ষণের অভিযোগে জুয়েল শেখ (২০) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। আটককৃত জুয়েল শেখ (২০) রামপাল আন্ধারিয়া গ্রামের বাসিন্দা তরিকুল শেখের ছেলে। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের এক তরুণীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন পাশের আন্ধারিয়া গ্রামের বাসিন্দা তরিকুল শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (২০)। এরপর ওই তরুণীকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিজ বাড়িতে আসতে বলেন। গত বুধবার (৩ মার্চ) বিকেলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে জুয়েল শেখের বাড়িতে যায় তরুণী। সেখানে আটকে রেখে ধর্ষণ করে জুয়েল শেখ। পরদিন বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) সকালে ওই তরুণী বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপার একেএম শহিদুল হককে জানান।’
(৩) ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার কথা বলে মা ও মেয়েকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে অজ্ঞান করে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মিজানুর রহমান (৪৫) নামে এক মাছ ব্যবসায়ী। গত ৩ মার্চ বিকেলে স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ও তার মাকে ছেলে দেখানোর জন্য নিজের বাড়িতে ডেকে নেয় ব্যবসায়ী মিজানুর। সেখানে মা ও মেয়েকে সরবতের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে দিলে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। ১ ঘণ্টা পর মায়ের জ্ঞান ফিরে আসলে দেখে ওই বাড়িতে ব্যবসায়ী মিজানুর এবং তার মেয়ে নাই। পরে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার স্বামীকে জানায়। এর পরের দিন সকালে মেয়েটি কপিলমুনি বাজারের ধান্য মার্কেট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
৪ মার্চ
(৪) কৌশলে ঘরে প্রবেশ করে গৃহবধূকে (৩৭) ধর্ষণের অভিযোগে উঠেছে সবুর সিকদার নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী শনিবার (৬ মার্চ) রাতে ভান্ডারিয়া থানায় মামলা করেছেন। ওই গৃহবধূ সম্পর্কে তার ভাবি। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূ তার দুই মেয়েকে নিয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পূর্ব পশারীবুনিয়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করেন। স্বামী ছয় বছর আগে তাদের বাড়িতে রেখে অভিমান করে অন্যত্র চলে যান। এ সুযোগে প্রতিবেশী মোয়াজ্জেম সিকদারের ছেলে সবুর সিকদার প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু ওই গৃহবধূ তার প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) রাতে মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়লে সবুর সিকদার কৌশলে তার ঘরে প্রবেশ করে ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন। এ সময় গৃহবধূর চিৎকারে মেয়েরা ঘুম থেকে জেগে উঠলে সবুর পালিয়ে যান।
(৫) দিনাজপুরের হিলিতে গুপ্তধন উদ্ধারের নামে ফাঁদ পেতে এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) দুপুরে হিলির বড় ডাঙাপাড়া গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বালিয়াতপুর গ্রামের মমতাজ আলীর ছেলে আব্দুল মোতালেব গুরু (৪০), একই গ্রামের আয়জার রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩২)। হাকিমপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, গত ৪ মার্চ গুপ্তধন উদ্ধারের নামে ঘোড়াঘাট থেকে মোতালেব ও ইসমাইল হিলির বড় ডাঙাপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে অবস্থান করে। গুপ্তধন উদ্ধার কাজে একজন তরুণী মেয়ের প্রয়োজন। তাই ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই গ্রামের একজন তরুণীকে ঠিক করেন তারা। পরে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে সারারাত পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে গতকাল সোমবার ভুক্তভোগী তরুণী কৌশলে অভিযুক্তদের তার নিজের বাসায় এনে আটকে রাখেন।
৫ মার্চ
(৬) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় এক বাক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৫) ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তার (৬০) নামের এক বৃদ্ধকে আটক করে পুলিশ। শনিবার (৬ মার্চ) ওই প্রতিবন্ধীর মা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটি প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে ঘর থেকে বের হয়। এর অনেকক্ষণ পর তাকে খোঁজ করে পাচ্ছিলাম না। আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার মেয়েটি হেঁটে আসছে। কাছে আসার পর শরীরের কাদা লাগানো ছিল। সে মুখে কিছু না বলতে পেরে আমার হাত ধরে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে একটি সেলুনে ঢুকে আব্দুস সাত্তারকে আমার মেয়ে দেখিয়ে দেয়। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে আমিসহ উপস্থিত অন্যান্যরা সাত্তারকে ধরার চেষ্টা করলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’
(৭) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে তিন সন্তানের জননী এক নারীকে (৪৫) মামাতো ও ফুফাতো ভাই মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে ধর্ষণের হত্যা করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে চাল ও অন্যান্য বাজার ক্রয় করতে সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যান ওই নারী। বাজারে যাওয়ার পর বিকেলে মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। সন্ধ্যা থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন ৬ মার্চ সকালে স্থানীয় একটি ঝোপের আড়ালে ওই নারী গলায় ফাঁস লাগানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
৭ মার্চ
(৮) রাজবাড়ীতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. আবদুল গফুর সরদার (৫৬) নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার (১৪ মার্চ) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আবদুল গফুর সদর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের মৃত একামুদ্দির ছেলে। মামলার এজাহার সূত্রে জানায়, অভিযুক্ত আবদুল গফুর দীর্ঘদিন ধরে ওই স্কুলছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। গত ৭ মার্চ (রোববার) ওই ছাত্রীর বাবা রিকশা নিয়ে ও মা ভবদিয়া একটি কারখানায় কাজ করতে বের হলে তাকে ফুসলিয়ে বাড়ির পাশের একটি বসতঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এসময় ওই স্কুলছাত্রীকে কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি দেখায়। পরে ৯ মার্চ (মঙ্গলবার) অসুস্থবোধ করলে মাকে ধর্ষণের বিষয়টি খুলে বলে। শনিবার (১৩ মার্চ) ওই স্কুলছাত্রী ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে একই দিন আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা। মামলার পরে অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ।
৮ মার্চ
(৯) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুর মানিক মিয়াকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) উপজেলার পূঠিয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মানিক মিয়া ওই গ্রামের মৃত বাদুল্লা প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পেশায় ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালক। উল্লাপাড়া মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ওই গৃহবধূ সোমবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় মামলা দায়ের করলে রাতেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়।’
৯ মার্চ
(১০) পার্বত্য খাগড়াছড়ির রামগড়ে মো. মহিউদ্দিন (৪৪) নামে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১০ মার্চ) ওই গৃহবধূকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত মো. মহিউদ্দিন রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ঘটনা মঙ্গলবার (৯ মার্চ) গৃহবধূর বাবা মামলা করেন। গৃহবধূর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে পাতাছড়ার মো. ফয়েজের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মাদকাসক্ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় দিনের পর দিন আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে আসছে ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন।’
১০ মার্চ
(১১) রংপুরে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসে খালুর ছোট ভাইয়ের (মামা) হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে নয় বছরের এক শিশু। বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরে নগরীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মামা মকবুলকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত মকবুল মোল্লাপাড়ার আনিছার রহমানের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নগরীর এরশাদ নগরের বাসিন্দা ভুক্তভোগী শিশুটি তার খালার বাড়ি মোল্লাপাড়ায় বেড়াতে আসে। বুধবার (১০ মার্চ) দুপুরের দিকে বাড়িতে একা পেয়ে খালুর ছোট ভাই মকবুল তাকে ধর্ষণ করে। এসময় শিশুটির চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে হাতেনাতেই মকবুলকে আটক করে পুলিশে খবর দেন।
(১২) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল শ্রীমঙ্গলকান্দি গ্রামে ১৫ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রাইভেট শিক্ষক আইয়ুব আলীসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে দুপুরে কিশোরীর বাবা থানায় মামলা করেন। ভুক্তভোগীর কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বিথঙ্গল শ্রীমঙ্গলকান্দি গ্রামের ওই কিশোরী বুধবার (১০ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ঘর থেকে বাড়ির উঠানে বের হয়। এ সময় একই গ্রামের আইয়ূব আলীসহ তিন-চারজন সহযোগী মেয়েটির মুখে গামছা চেপে পার্শ্ববর্তী হাওরে নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটি তার বাবা মাকে বিষয়টি অবগত করলে তারা বিথঙ্গল পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে আইয়ুব আলী ও সোহেল মিয়াকে আটক করা হয়।
১৪ মার্চ
(১৩) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৭ বছর বয়সী এক বাকপ্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। রোববার (১৪ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের সেন্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর নানি জানান, শিশুটির বাবার সঙ্গে মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে অনেক আগে। এরপর তার মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে হয়। তাকে ও তার এক ছোট ভাইকে নানা-নানি লালন-পালন করে আসছেন। রোববার দুপুরে শিশুটি বাড়িতে খেলা করছিল। দুপুর দেড়টার দিকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাদের বাড়ির পাশে একটি ঘরে শিশুটির চিৎকার শুনতে পান তার নানি। তার নানি ওই ঘরে ডুকে দেখেন, শিশুটি উলঙ্গ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় মনির (৩০) নামে এক যুবক সেই ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। মনির ওই এলাকার কাদির মিয়ার ছেলে। পেশায় রিকশাচালক তিনি।
(১৪) ঘরে ঢুকে মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণে অভিযোগে একরামুল ইসলাম (২০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সোমবার (১৫ মার্চ) সকালে ওই ছাত্রীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্র জানায়, রোববার (১৪ মার্চ) রাত দশটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী। রাতে প্রতিবেশী কামরুল ইসলামের ছেলে একরামুল ইসলাম (২০) ওই মাদরাসাছাত্রীর ঘরে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক বাড়ির ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করে একরামুল।
(১৫) মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় দোকানে ডেকে নিয়ে গলায় ধারালো ছুরি ঠেকিয়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সোহান মাদবর (২০) নামে এক তরুণের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত তরুণ পেশায় মুরগি ব্যবসায়ী এবং ভুক্তভোগী শিশুটির প্রতিবেশী। রোববার (১৪ মার্চ) সোহান নিজের দোকানের ভেতরে এ ঘটনা ঘটায় এবং বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুটিকে জবাই করার ভয় দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। শিশুটি একটি স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
(১৬) শরীয়তপুরের ডামুড্যায় টাকার লোভ দেখিয়ে দুই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবু চোকদার (৫৫) নামে এক বৃদ্ধকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার (২৪ মার্চ) তাকে কারাগারে পাঠানোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আলী বিশ্বাস। মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়র চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী, তার বয়স ১০ বছর। ছোট মেয়েটি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী, তার বয়স ৯ বছর। তারা সম্পর্কে চাচাতো বোন। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে প্রথমে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বাবু চোকদার। পরে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ওই দুই স্কুল ছাত্রীকে বাবু একাধিকবার ধর্ষণ করে। সবশেষে গত ১৪ মার্চ (রোববার) সকাল ৮টার দিকে পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে পুনরায় ধর্ষণ করেন বাবু। পরে স্কুলছাত্রীরা তাদের বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়।
২০২০ সালে নারী নির্যাতন
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদে সংরক্ষিত ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ বছর জানুয়ারিতে করা এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, করোনাকালে দেশে ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪০ নারী ও কন্যাশিশু।
২০২০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৪৬ কন্যাশিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনাসহ মোট ৩৪৪০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, ২০২০ সালের মোট ৩৪৪০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তন্মধ্যে ১০৭৪ জন ধর্ষণ, ২৩৬ জন গণধর্ষণ ও ৩৩ জন ধর্ষণের পর হত্যা ও ৩ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যাসহ মোট ১৩৪৬ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ২০০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ৪৩ জন। ৭৪ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এসিডদগ্ধের শিকার হয়েছে ২৫ জন তন্মধ্যে এসিডদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে ২৯ জন, তন্মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে ৫৯ জন। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে মোট ১২৫ জন। পাচারের শিকার হয়েছে ১০১ জন তন্মধ্যে পতিতালয়ে বিক্রি ৪ জন। বিভিন্ন কারণে ৪৬৮ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ৩৫ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
যৌতুকের কারণে নির্যাতন হয়েছে ১১৭ জন, তন্মধ্যে ৫২ জন যৌতুকের কারণে হত্যা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫৯ জন। বিভিন্ন নির্যাতনের কারনে ১৬৪ জনকে বাধ্য করা হয়েছে।
২৫২ জন নারী ও কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে ১১৭টি, তন্মধ্যে বাল্যবিয়ের চেষ্টা হয়েছে ৩৩টি। সাইবার ক্রাইম অপরাধের শিকার হয়েছে ৪৩ জন।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুসারে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছিল ২০ হাজার ৭১৩টি, যার ৩৩ শতাংশ ছিল ধর্ষণ। এর আগের বছর মোট নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রায় ৩১ শতাংশ ছিল ধর্ষণের।
আগের বছর ২০১৯ সালে ১৪১৩ জন নারী ও ৯৮৬ জন শিশু এবং ২০১৮ সালে ৭৩২ জন নারী ও ৪৪৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
সব ঘটনা সামনে না আসায় ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা এসব পরিসংখ্যানের চেয়ে ‘আরও অনেক বেশি’ বলে মনে করেন নারী অধিকার কর্মীরা।
ধর্ষণের ঘটনায় বাবা, নিকটাত্মীয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও ধর্মীয় ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের জড়িত থাকার তথ্য এসেছে। কোনো কোনো ঘটনায় সহযোগী হিসেবে নারীদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
২০২০ সালে শিশু ধর্ষণ
করোনাকালে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শিশুদের জনসমাগমের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ৬২৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। এসময়ে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
শনিবার সকালে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২০’ শিরোনামে শিশু অধিকার-বিষয়ক সংবাদের আধেয়-বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করে এমজেএফ।
এতে দেখা যায়, গতবছর ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, হত্যা, অপহরণ, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে ১৪৫ শিশু। করোনাকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় ৭ জন মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, যাদের মধ্যে তিন জন মারা যায়।
২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২৯ শিশু। বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে ১০১ শিশু। ২০২০ সালে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। এরপর রয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু। শিশুদের চকলেট বা খাবারের লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এবং ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনকি করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ দেয়ার কথা বলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়াও ২০২০ সালে হত্যা ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৪৫ শিশুকে। ১৩ থেকে ১৮ বছরের শিশুরাই বেশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে হত্যার কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহ, সম্পদ বন্টণজনিত জটিলতা, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান, মেয়ে হয়ে জন্মানো, অন্যায়ের প্রতিবাদ, মানসিক চাপ এবং ধর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানায় এমজেএফ।
ধর্ষণে বাংলাদেশের অবস্থান
ডয়েচে ভেলের তথ্যানুয়ায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের হার প্রতি লাখে ১০ জন এবং সমগ্র বিশ্বে অবস্থান ৪০তম। ধর্ষণের ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেখানে প্রতি লাখে ১৩২ জন ধর্ষিত হয়। এছাড়া লেসোথোতে প্রতি লাখে ৯৩ জন, বোতসোয়ানায় ৮৩ জন, সোয়াজিল্যান্ডে ৭৮ ও সুইডেনে ৬৩ জন। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে প্রতি লাখে ৮ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়, যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম।
২৬,৬৯৫ টি ধর্ষণ মামলা
গত ৫ বছরে সারা দেশের থানাগুলোতে ২৬ হাজার ৬শ ৯৫টি ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরে পুলিশ সদর দপ্তরের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে ধর্ষণ মামলার পরিসংখ্যান পাঠানো হয়েছে।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ৪৩৩১টি, ২০১৭ সালে ৪৬৮৩টি, ২০১৮ সালে ৪৬৯৫টি, ২০১৯ সালে ৬৭৬৬টি এবং ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৬২২০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
বাংলাদেশ সরকার ধর্ষণ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। ২০২০ সালে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু ইত্যাদি প্রসঙ্গে ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা আহত হলে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড বিধানও ছিল। এই আইনের পরিবর্তন এনে ধর্ষণ প্রমাণিত হলেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। সংশোধিত এ আইনে অর্থদন্ড বিধানও বলবৎ রয়েছে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক কাঠোমোর মধ্যে যেসব পরিবর্তন এলে ধর্ষণ কমত, সে পরিবর্তন আনা হয়নি বলেই ধর্ষণ বেড়ে চলছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য গঠনমূলক পাঠ্যক্রম, পরিবার, সমাজের জেন্ডার সংবেদনশীল ও মানবিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, সাংস্কৃতিক ও সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দেওয়া। এসব জায়গায় এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। অপরাধ সংঘটনের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে কাজ করে আইন। তাই শুধু সাজা বাড়িয়ে অপরাধ কমানো যায় না। ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ, যা নির্মূল করতে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যেমন অত্যন্ত জরুরি, তেমনি সমাজে বিরাজমান ধর্ষকামী মনস্তত্ত্ব দমনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশও জরুরি।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ