জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার মতে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, তাদের দলের কাছে নির্বাচন আয়োজনের তারিখ বা সময় তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়—বরং সংস্কার এবং বিচারের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করাই মূল বিষয়। এমনকি ডিসেম্বরেও নির্বাচন হলে, যদি সংস্কার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত থাকে, তবে এনসিপির কোনো আপত্তি নেই।
বিএনপি’র সঙ্গে আসন ভাগাভাগি কিংবা নির্বাচন পেছানো সংক্রান্ত নানা জল্পনা প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, এগুলো কেবল গালগল্প এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। তার মতে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা সাফল্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেশের মৌলিক সংস্কার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণ যেন বলতে পারে—এই পরিবর্তন এনসিপি নিয়ে এসেছে বা জুলাই সনদের ফলে পরিবর্তন এসেছে। সেই কারণে সংস্কারই এখন তাদের প্রধান এজেন্ডা, এবং সংস্কারের পরই নির্বাচন নিয়ে ভাবা হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত জুলাই সনদকে এখন দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে। নাহিদ ইসলাম বারবার বলেছেন, এই সনদের এক শতাংশও পরিবর্তন বা আপস করা হবে না। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি নির্বাচনকে কেবল ক্ষমতা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছে না, বরং রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করছে।
অন্যদিকে, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এখনো নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সংস্কার বাস্তবায়নের প্রশ্নে দ্বিধার কারণে নির্বাচন আয়োজন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করাটা কঠিন হতে পারে, যদিও বিএনপি ও অন্য দলগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করছে।
সামগ্রিকভাবে দেখা যায়, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না হলেও, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এনসিপি এই সংস্কারনির্ভর রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদেরকে নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে, যা দেশের জন্য এক নতুন ধারার সূচনা হতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ