সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর তারিকুল ইসলামকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেনের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হইয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে পরিকল্পনা করা হয়, কাউন্সিলর প্রার্থী তরিকুল ইসলাম জিতলেই তার ওপর হামলা করা হবে। আসামিরা গোপন বৈঠকে এমন পরিকল্পনা করে। সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়েই পরদিন সন্ধ্যায় শহীদগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয় আসামিরা। কাউন্সিলর তরিকুল হত্যায় সরাসরি অংশ থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার জাহিদুল ইসলাম (২০) এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত জাহিদুল ইসলাম শহরের সাহেদনগর ব্যাপারীপাড়া এলাকার টিক্কা ব্যাপারী ছেলে। তিনি ঢাকায় ভাড়া বাসায় থেকে রাজমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ কাজ করেন।
গ্রেপ্তার জাহিদুল কর্তৃক কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম খানের হত্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তাকৃত জাহিদুল এজাহারভুক্ত আসামি না। আজ শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর থানা চত্ত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদুল ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সে সরাসরি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং সে উট পাখি প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী শাহাদাত হোসেন বুদ্ধিনের সমর্থক। নির্বাচনের তিনদিন আগে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য জাহিদুল ইসলাম ঢাকা থেকে সাহেদনগর ব্যাপারীপাড়ার নিজ বাড়িতে আসে। এরপর দুদিন নির্বাচনী প্রচারে তিনি অংশ নেন। নির্বাচনের আগের দিন রাতে এক আসামির বাড়িতে তার উপস্থিতিতে এজাহার নামীয় ও অন্যান্য আসামিরা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তরিকুল ইসলাম খানের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এজাহার নামীয় এক আসামি তাকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি দেয়। ফলাফল ঘোষণার পর বিজয় মিছিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় তরিকুলের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় জাহিদুল। এরপর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি তার বাড়ির পশ্চিম পাশের পরিত্যাক্ত ডোবায় পুতে রেখে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, জাহিদুলই সরাসরি এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। তার দেওয়া তথ্যমতে ব্যাপারীপাড়া মহল্লার একটি ডোবা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের বেশ ক’টি টিম কাজ করছে। আশা করছি অল্পদিনের মধ্যেই আমরা ভাল কিছু করতে পারবো।’
গত ১৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৫ ভোটে বিজয়ী হন তারিকুল ইসলাম। ফলাফল ঘোষণার পর প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পরে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় গত ১৭ জানুয়ারি রাতে নিহতের ছেলে ইকরামুল হাসান হৃদয় বাদী হয়ে পরাজিত প্রার্থী ও ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বুদ্দিনসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। জাহিদুল ইসলাম এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও কাউন্সিলর তরিকুল হত্যায় সরাসরি অংশ থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরাজিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেনের নির্দেশে জাহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। বারবার নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় মামলার প্রধান আসামি শাহাদাত হোসেন বুদ্দিন এ ধরনের ভয়ানক পরিকল্পনা করেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন জাহিদুল।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা জানান, ক্ষমতার দাপটে নির্বাচনে হেরে গেলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পরাজিত প্রার্থী এমনটি করার সাহস পেয়েছেন। আইনকে দুর্বল করে প্রভাবশালীরা যেভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেপরোয়াভাবে যা ইচ্ছা করার মানসিকতা রাখে। দোষীদের যথাযথ আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন বিশ্লেষকরা। এমন উদাহরণ সমাজে রাষ্ট্রে আরো খুনখারাবি নিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ