মধ্যরাতে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান দেয়ার পর এবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেন কোনো রকমের নাশকতা চালিয়ে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারেন সেটি নিশ্চিতে শাহবাগসহ আশপাশের এলাকায় জলকামানসহ সতর্কাবস্থান নিয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে আজ থেকে যুক্ত হয়েছেন ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা আজ এই বিক্ষোভ করছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
আজ দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে প্রথম মিছিলটি রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসে। এসময় মিছিলে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। পরে মিছিল নিয়ে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে দলে দলে শিক্ষার্থীদের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসতে দেখা যায়। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা মাইকে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।
এসময় তারা ‘তুমি নই আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে আসা বক্তব্য আজ দুপুর ১২টার মধ্যে প্রত্যাহার না করলে তারা আন্দোলনে নামবেন।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সরকারপ্রধানের এমন বক্তব্যে কতিপয় মহল ক্ষোভ প্রকাশ করতে না পারায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কার ইস্যুতে গতকাল রোববার রাত থেকে বিক্ষোভে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মধ্যরাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় রাজাকারের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের একটি অংশকে। রাজধানীর অন্যান্য এলাকার সড়কেও অবস্থান নিতে শুরু করেন তারা।
এর আগে, জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে গতকাল সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার।
উল্লেখ্য গতকাল রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সম্প্রতি নিজের চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে প্রসঙ্গক্রমে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়টিও উঠে আসলে ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।
আপনার মতামত জানানঃ