গত কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবের পাঠ্যবইতে পরিবর্তন আসছে। এবার দেশটির পাঠ্যপুস্তক থেকে কুরআনের শিক্ষা বাদ দেয়ার অভিযোগ করেছেন ইয়েমেনের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি নেতা আব্দুল মালেক আল-হুতি।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ইরানের আধাসরকারি বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আব্দুল মালেক আল-হুতি বলেন, কোরআনের যেসব আয়াতে ইহুদিদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে সে আয়াতগুলো পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বড় অবিচার উল্লেখ করে হুতি নেতা বলেন, সম্ভবত ইসরাইলি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সৌদি সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও পাঠ্যপুস্তক থেকে কোরআনের শিক্ষা বাদ দেয়ার এই নীতি অনুসরণের কথা ভাবছে বলে অভিযোগ করেন আল হুতি।
গত কয়েক বছর ধরেই সৌদি আরবের গবেষকরা দেশটির পাঠ্যবইগুলোতে নারী-পুরুষের ভূমিকা থেকে শুরু করে শান্তি ও সহিষ্ণুতার বার্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ধারাবাহিকভাবে কিছুটা উদারতার ইঙ্গিত পাচ্ছেন।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনীতিক সম্পর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনা, ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে অব্যাহত সংঘাতসহ কিছু জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়ে সৌদি পাঠ্যপুস্তকের বর্ণনার পরিবর্তন সবার মনোযোগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
গত বছরের মে মাসে ইসরাইল ও লন্ডনভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর মনিটরিং পিস অ্যান্ড কালচারাল টলারেন্স ইন স্কুল এডুকেশন (ইমপ্যাক্ট-এসই) প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি পাঠ্যপুস্তকের সর্বশেষ সংস্করণগুলোতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সম্পর্ককে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করার প্রচলিত ধারা থেকে বের হয়ে এসেছে কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
রাজতন্ত্রের দেশ সৌদি আরব বর্তমানে সামাজিক-রাজনৈতিক নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির আধুনিকায়ন ও একে বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পদক্ষেপটি পুরোধা হিসেবে নিয়েছেন সৌদি আরবের তরুণ ও উচ্চাকাক্সক্ষী যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান (এমবিএস)। সৌদি অর্থনীতি পুনর্গঠন ও উন্নতি সাধনের কৌশল এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রভাব সীমিত করার পেছনে তাকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দেখা হয়।
২০১৭ সালের অক্টোবরে রিয়াদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ফিরে যাচ্ছি সেদিকে যা অতীতে ছিলাম- উদারপন্থী ইসলামের দেশ, যা কিনা সব ধর্মের প্রতি এবং পুরো বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত।’
সৌদি আরবকে উদারপন্থী ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনতে নিজের উচ্চাকাক্সক্ষা বিশ্লেষণ করে যুবরাজ ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেছেন, ‘গত ৩০ বছরে যা কিছু ঘটেছে সেটা আসল সৌদি আরবের নয়।’ সৌদি আরবের উগ্র রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়ার জন্য ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব এবং সে বিপ্লবকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে দিতে তেহরানের চেষ্টাকে সুস্পষ্টভাবে দায়ী করেছেন এমবিএস।
এ মন্তব্যগুলো দুটি কারণে লক্ষণীয়। প্রথম কারণটি হল, তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, সৌদি আরব ইসলামের যে ব্যাখ্যা অনুসরণ করেছে তাতে মধ্যমপন্থার অভাব রয়েছে। দ্বিতীয় কারণটি হল, তারা এ বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন যে, বর্তমানে সৌদি আরবে প্রচলিত ধর্মীয় পদ্ধতি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা এবং তরুণ প্রজন্মের দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে তা উপযুক্ত নয়।
এখনও অবশ্য তারা ভুল পথেই পরিচালিত হচ্ছে। কারণ তারা চেষ্টা করছে সৌদি আরবের ভেতরের পরিস্থিতির দায় বাইরের কিছু বিষয়াবলির, বিশেষত ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবের দিকে চাপাতে। কিন্তু আসলেই কি বিপ্লবী ইরান সৌদি আরবকে উগ্র রক্ষণশীলতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল?
সব দিক বিবেচনাতেই ১৯৭৯ সাল সৌদি আরবের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। দুর্নীতি জেঁকে বসা ও পশ্চিমের মতো হতে চাওয়ার কারণে সাউদ বংশকে উচ্ছেদের চেষ্টায় একদল বিদ্রোহী কর্তৃক মক্কার পবিত্র মসজিদ দখলের বছর হিসেবে ব্যাপকভাবে বছরটি পরিচিত।
ওই বছরের ২০ নভেম্বর সৌদি বেদুইন ও ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক কর্মী জুহায়মান আল-ওতাইবির নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ সশস্ত্র ব্যক্তি পবিত্র মক্কা দখল করে নেয় এবং ঘোষণা করে যে তার স্ত্রীর ভাই মোহাম্মাদ আল-কাহতানি মাহদি (ইমাম মাহদি, যিনি শেষ জামানায় মুসলিমদের নেতৃত্ব দিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আবির্ভূত হবেন) বা ত্রাণকর্তা ছিলেন, যিনি মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমা দূষণমুক্ত করতে পারেন।
দুই সপ্তাহের ওই দখলের সময় হজযাত্রী, যোদ্ধা ও সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারান। ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর একই বছরের শুরুতে এমন একটি ধারণা ঘনীভূত হয় যে, মক্কার পবিত্র মসজিদে হারাম দখলের মতো জঘন্য কাজটি ইরান থেকে পরিচালিত হয়েছিল।
অবশ্য এ সন্দেহ পরে দূর হয়। কারণ, স্বঘোষিত ইমাম মাহদি মোহাম্মাদ আল-কাহতানি এবং মসজিদে হারাম দখলের নেতৃত্বদানকারী আল-ওতাইবি ইরানের বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারেন না, কারণ তারা শিয়াদের নব্যতন্ত্রবাদী হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং তাদের ধর্মীয় উচ্চাকাক্সক্ষা এ দু’জনের কাছে অপ্রাসঙ্গিক ছিল।
যে সময় মসজিদে হারাম দখলের ঘটনা ঘটেছিল ওই সময় সৌদি রাজতন্ত্র অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। মাত্র চার বছর আগে বাদশাহ ফয়সাল (শাসনকাল ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৫) সৌদি আরবে মধ্যপন্থা ও উদারতা আনার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি প্রথমবারের মতো দেশটিতে টিভি সম্প্রচার, আর্থ-সামাজিক সংস্কার বাস্তবায়ন, মেয়েদের স্কুলসহ গণশিক্ষা উন্নয়ন ইত্যাদির কাজ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাদশাহ ফয়সাল তার এক ভাতিজার হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বেশিরভাগ ধর্মীয় পক্ষ ওইসব সংস্কারকে স্বাগত জানাতে পারেনি।
মক্কায় পবিত্র মসজিদের দখল গোটা সৌদি আরবকে কাঁপিয়ে তোলে। ওই সময় কেবলই ইরানের সংবিধান পাস করতে যাওয়া আয়তুল্লাহ খোমেনি মসজিদে হারাম দখলের দায় চাপান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ওপর। এবং এর বিরুদ্ধে তার মারাত্মক প্রতিবাদ শুরুর ঘোষণা শুনেছে মুসলিম বিশ্ব, যাতে সাউদ বংশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এগুলো ছিল পবিত্র দুই মসজিদ- মক্কা ও মদিনার রক্ষক হিসেবে মুসলিম বিশ্বে সাউদ বংশের নেতৃত্ব হুমকির মুখে পড়ার লক্ষণ।
মসজিদে হারাম দখল সংকটের ঘটনার জবাবে সাউদ পরিবার বাদশাহ ফয়সালের উদারনীতির পদক্ষেপগুলো থেকে পেছনে সরে আসে এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সরকার কড়া ধর্মীয় নিয়ম-কানুন প্রচলন শুরু করে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় বন্ধ না করা বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর ওপর পুলিশ হামলে পড়ে এবং নারীদের উন্মুক্ত জীবন থেকে ফের কার্যত সরিয়ে নেয়া হয়।
ভালো কাজের প্রসার এবং মন্দ কাজ রোধের জন্য কমিটি গঠন করা হয়, যেটি ধর্মীয় পুলিশ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত সরকারের ফান্ড থেকে উপকৃত হয়ে সাধারণ সৌদি নাগরিকদের জীবন ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করে।
যদিও ১৯৭০-এর দশকের ওই ঘটনাবলি অবশ্যই সৌদি আরবকে প্রভাবান্বিত করেছে, দেশটি কিন্তু তখনই অতি রক্ষণশীল হয়নি। এটি দেশটিকে জড়িয়ে ধরেছে ১৮ শতাব্দীর কঠোর ইসলামের ব্যাখ্যার সময় থেকে, যখন সাউদ পরিবার অতিমাত্রায় কট্টর একজন ধর্মীয় স্কলারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
সৌদি আরবের সরকারি ধর্মীয় নীতি ওয়াহ্হাবিজম- যার জন্য দেশটি তীব্রভাবে সমালোচিত হয়ে আসছে এবং যেটিকে নতুন রূপ দিতে চাচ্ছেন এমবিএস, তা মূলত মোহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাবের (১৭০৩-১৭৯২) শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
আবদুল ওয়াহ্হাব ছিলেন আরব উপদ্বীপের নজদ অঞ্চলের ইসলামী পণ্ডিত, উৎসুক পর্যটক ও ‘দ্য বুক অব ইউনিটি’র লেখক। এ বইটি মক্কা ও মদিনার তার সমসাময়িক বেশিরভাগ স্কলারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। আবদুল ওয়াহহাব ছিলেন ধর্মের ক্ষেত্রে নব উদ্ভাবন তথা বিদা’আত (যেমন- সুফি রীতি ও ধর্মীয় সাধকদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন) ত্যাগ করে কোরআন ও হাদিসের দিকে প্রত্যাবর্তনের আন্দোলনকারী, যা কোরআনভিত্তিক নয়। এমনকি তার মতে, যারা ইসলামী আইন তথা শরিয়ার সঙ্গে কঠোরভাবে লেগে থাকে না এবং ইসলামী নয় এমন কিছুর চর্চা করে, তারা নাস্তিক বা ধর্মত্যাগী।
বস্তুত আবদুল ওয়াহ্হাবের শিক্ষা নতুন কিছু ছিল না; বরং তা ছিল সবচেয়ে বেশি কঠোর-রক্ষণশীল হাম্বলি নীতির পুনর্গঠন। তবে এটিই ছিল তার ধর্মীয় নীতি যা তাকে সাউদ পরিবারের কাছাকাছি নিয়ে যায়।
মোহাম্মাদ বিন আবদুল ওয়াহ্হাব যখন সফলতার সঙ্গে মক্কা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তার মতাদর্শ প্রচার করছিলেন, তখন মোহাম্মদ বিন সাউদ শাসন করছিলেন আল-দিরিয়া অঞ্চল, যা বর্তমানে রিয়াদের শহরতলী এলাকা।
১৭৪৪ সালে মদিনা থেকে পালিয়ে আবদুল ওয়াহ্হাব আল-দিরিয়ায় পৌঁছান এবং ইবনে সাউদের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সেখানে তারা দু’জনে একটি জোট গঠন করেন এবং ক্ষমতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেন- ইবনে সাউদ নেন সামরিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলির দায়িত্ব এবং আবদুল ওয়াহ্হাব নেন ধর্মীয় ক্ষেত্র। ধর্মীয় গ্রহণযোগ্যতার অস্ত্র কাজে লাগিয়ে ইবনে সাউদ তার শাসনকে আল-দিরিয়া থেকে বিস্তৃত করতে সক্ষম হন এবং প্রথম সৌদি রাষ্ট্র গঠন করেন।
নিজের জীবদ্দশায় শক্তপোক্ত হওয়া ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিতে আবদুল ওয়াহ্হাবের মৃত্যুও কোনো প্রভাব ফেলেনি। সাউদ পরিবারের শাসনে আবদুল ওয়াহ্হাবের উত্তরসূরিদের (শেখ পরিবার) হাতেই ধর্মীয় বিষয়াবলির দায়িত্ব থেকে যায়।
এখন পর্যন্ত তারা বাদশাহর সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাউদ পরিবারের রাজনৈতিক ক্ষমতার বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রতিদান হিসেবে শেখ পরিবার রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিশেষ সুবিধা পায় এবং ‘ভালো গুণের প্রসার ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ কমিটি’ (ধর্মীয় পুলিশ), শিক্ষা ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মূল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
ওয়াহ্হাব-সাউদ চুক্তি ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে টিকে আছে এবং এটি আরব উপদ্বীপে সৌদি আরবের ক্ষমতার ধর্মীয় বৈধতা দিচ্ছে। তবে এখন কি এর শেষ সময় চলে এসেছে? এটি কি নিজের গতিপথ শেষ করে ফেলেছে এবং সাউদ পরিবারের কি আর এর প্রয়োজন নেই? গত কয়েক বছর ধরে সৌদি কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত সতর্কতার সঙ্গে শেখ পরিবারের ক্ষমতার পরিধি সীমিত করে আনছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালে মরহুম বাদশাহ আবদুল্লাহ একটি অধ্যাদেশ জারি করেন, যা হল কেবল রাষ্ট্র অনুমোদিত স্কলারদের জন্যই ফতোয়া জারি করার অনুমতি রয়েছে।
বাদশাহ সালমান ও তার ছেলে এমবিএস’র শাসনাধীনে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ‘ভালো গুণের প্রসার ও মন্দ কাজের প্রতিরোধ কমিটি’র গ্রেফতারের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়, যার মাধ্যমে তাদের পুলিশি কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরা হয়।
একই বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ- জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় স্কলারদের পরিষদে আরও বেশি উদার আলেম নিয়োগ করেন বাদশাহ।
২০১৭ সালে দেশটিতে গানের কনসার্টের অনুমোদন দেয়া হয়, নারী-পুরুষের উন্মুক্ত জমায়েতের অনেক অনুষ্ঠান করা হয় এবং ৩৫ বছর পর সৌদি আরবে সিনেমা হল পুনরায় খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়।
তবে সবচেয়ে স্মরণে রাখার মতো পরির্বতন, যা এখনও ঘটার পথে তা হল, সৌদি আরবের ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন। দেশটির আইনি কাঠামো পরিচালিত হয় ইসলামী আইনের ভেতর দিয়ে, যা সৌদি আরবের আইন প্রণয়নের চূড়ান্ত উৎস।
আবদুল ওয়াহ্হাব বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির যে অপরিহার্য উপাদান চালু করে দিয়ে গেছেন, ইসলামী আইনের সে প্রচলিত ব্যাখ্যা সৌদি আরবে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। এ কারণে সহজেই বলা যায়, সাউদি-ওয়াহ্হাবি চুক্তি ভঙের অর্থ হতে পারে দেশটিতে প্রচলিত ধর্মীয় ব্যাখ্যার সমাপ্তি টানা এবং এর ব্যাখ্যার জন্য বিচারকদের ওপর নির্ভর না করে বরং আইনের সম্ভাব্য সংকলন তৈরি করা।
এ পর্যায়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন হচ্ছে, সংস্কার বাস্তবায়ন এবং বিদেশিদের জন্য দেশকে উন্মুক্ত করে দিতে সৌদি আরবের কি ওয়াহ্হাবি মূলনীতি একেবারেই পরিত্যাগ করা দরকার? ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব কমানো পারস্য উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর একটি সাধারণ প্রবণতা হয়ে পড়েছে এবং সৌদি আরবও মনে হয় ধীরে ধীরে একই মডেল অনুসরণ করতে যাচ্ছে।
ধর্মীয় পুলিশের প্রভাব কমানো এবং যুবরাজ মোহাম্মদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে সৌদি আরবের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও এসব পদক্ষেপের কারণে নিজেদের সুবিধা কমে যাওয়ার বিষয়টি তারা অনুভব করছে।
এতে কয়েক শতাব্দীর পুরনো একমুখী ধর্মীয় কাঠামো একটি কাগুজে বাঘে পরিণত হতে পারে, যার ভাগ্য রয়েছে বাদশাহর হাতে। তবে ধর্মীয় এলিটদের আধুনিকায়নের পক্ষে রাখার বহু দশকের পুরনো উষ্ণ নীতি ভেঙে ফেলতে যাচ্ছেন এমবিএস।
এতে করে কেউ তার উদ্যোগকে অনিয়ম এবং ফের পশ্চিমা প্রভাব দৃঢ়করণ বলে উসকে দিতে পারে। এমনকি তার নেয়া উদ্যোগ চাপে থাকা ভিন্নমতাবলম্বী বহু ধর্মীয় নেতাকে জোর করে কিছু আদায়ের পথে চালিত করতে পারে। এটি কোনো একরূপে আত্মপ্রকাশ করার আগে কয়েক বছর পর্যন্ত অসন্তোষ দানা বেঁধে থাকতে পারে।
এমবিএসের নীতিগুলো তরুণ সৌদিদের মনোরঞ্জন করছে। কিন্তু তারা ক্ষমতার চাবিকাঠি ধারণ করে না। এটি হচ্ছে পুরনো প্রজন্ম, যারা কয়েক দশকের রক্ষণশীল শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে; সুবিধাবঞ্চিত যুবরাজরা, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সঙ্কুচিত হয়ে গেছে এবং বহু ধর্মীয় এলিট, যারা সৌদি রাজপরিবারের বৈধতা দিয়েও বর্তমানে প্রজার অবস্থানে আছেন।
তাদের অনেকেই এখন প্রান্তিক হয়ে পড়ার বিষয়টি অনুভব করছেন, যা তাদের চরমপন্থার দিকে ধাবিত করতে এবং ১৯৭৯ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর দিকে চালিত করতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ