ভৌগোলিক কারণেই ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। দেশটিতে প্রায়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে আর তাতে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে একাধিক ভূমিকম্পের ফলে প্রায় তিনটি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার(১৫জানু) ভোরে সুলাওয়েশি দ্বীপের ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন, আহত আরো পাঁচ শতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েশি দ্বীপে স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ভোরে রিখটার স্কেলে ৬.২ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় প্রায় ৬০ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, এ ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর হাজার হাজার সাধারণ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটে যান।
দেশটির দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিলো মাজেনে শহর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর পুর্বে এবং ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে। তবে আতঙ্কিত জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানায় তারা।
সংস্থাটির দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, দেশটির মাজেনি শহরে নিহত হয়েছেন ৪ জন, আহত হয়েছেন ৬৩৭ জন এবং প্রায় ২৪ জন আহত ও আরো তিনজন নিহত হয়েছেন পার্শ্ববর্তী মামুজু শহরে। প্রায় ৭ সেকেন্ডব্যাপী শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হলেও এতে সুনামি সতর্কতা সংকেত চালু হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে আতঙ্কিত অনেক মানুষ সুনামির আশঙ্কায় মোটরসাইকেলে করে উঁচু স্থানের দিকে ছুটছেন। ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক শিশুকেও চাপা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় খালি হাতে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন লোকজন।
দুটি আবাসিক হোটেল, পশ্চিম সুলাওয়েশির গভর্নরের অফিস, একটি বিপণিবিতানসহ কিছু ভবন অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মামুজু এলাকার সংবাদকর্মী সুদাইরমান স্যামুয়াল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই শহরে আসা-যাওয়ার অন্তত একটি পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে সুলাওয়েশি দ্বীপের ভূমিকম্পে মাজেনে শহরের উত্তরাঞ্চলে একটি হাসপাতালের ভবন ধসে পড়ে ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছে বহু রোগী ও হাসপাতাল কর্মী। আরিয়ান্তো নামের এক উদ্ধারকর্মী জানান, ‘হাসপাতালটি ভেঙে পড়েছে আর রোগী ও কর্মীরা আটকা পড়েছে। আমরা তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’
নিহতদের মধ্যে অন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে মামুজু শহরে। এছাড়া সুলাওয়েশি দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চলে আরও আট জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে মামুজুর দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার প্রধান আলী রহমান এএফপিকে বলেছেন, নিহতের সংখ্যাটি বাড়তে পারে, তবে আমরা আশা করি তা হবে না। মৃতদের মধ্যে অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে সমাধিস্থ হয়েছেন।
মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন জানিয়েছে, হতাহতের পাশাপাশি ভূমিকম্পে অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই ঘটনার ঘন্টাখানেক পূর্বেই বৃহস্পতিবার রাতে ৫.৯ মাত্রার একটি ভুমিকম্পে বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় একাধিক ভূমিকম্পের ফলে প্রায় তিনটি ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটেছে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভূতত্ত্ববিদগণের নকশা অনুযায়ী প্রশান্তমহাসাগরীয় তীরবর্তী অঞ্চলে রিং অফ ফায়ার নামক বলয়ে অবস্থানের কারণে ভূঅভ্যন্তরীণ টেকটোনিক প্লেটসমূহের কার্যকারিতার ফলে প্রায়শই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে ইন্দোনেশিয়ায়। ২০১৮ সালে ভয়াবহ ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামীতে পলাও শহরে প্রায় হাজারের অধিক মানুষ নিহতের ঘটনা ঘটেছিলো।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৩
আপনার মতামত জানানঃ