ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে জিন্নাত আলী (৫০) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার জগদল সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জিন্নাত আলী উপজেলার ধর্মগড় চেকপোস্ট কলোনি গ্রামের বাসিন্দা। রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা দেড়টার দিকে জিন্নাত আলী গবাদিপশুর ঘাস কাটতে জগদল সীমান্তের ৩৭৪ নম্বর পিলার এলাকায় যান। তখন তাঁকে লক্ষ্য করে বিএসএফের সদস্যরা গুলি ছোড়েন।
এতে জিন্নাত আলীর কোমরে গুলি লাগে। গুলির আওয়াজ শুনে স্থানীয় লোকজন জিন্নাতকে উদ্ধার করেন। পরে ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গুলফামুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। তাঁরা নিহত জিন্নাতের বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজীর আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরে জিন্নাত আলী জগদল সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করে ৩৭৪ নম্বর পিলার এলাকার কাঁটাতারের কাছে চলে যান। সেই সময় ১৫২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন।
এ ঘটনায় কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে নিরীহ বাংলাদেশির ওপর গুলি ছোড়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, তাঁরা সেটি করছেন বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে বিএসএফ। এখানে টাকার ভাগবাটোয়ার বিষয় আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এর তেমন কোনো প্রতিবাদ জানানো হয় না।
ভারত সব সময়েই দাবি করে আসছে সীমান্তে যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তারা অপরাধী। তার গরু চোরাচালানিসহ নান ধরনের পাচার ও অবৈধ কর্মকান্ডে যুক্ত। কিন্তু দুই দেশ অনেক আগেই সীমান্তে মারনাস্ত্র (লেথাল ওয়েপন) ব্যবহার না করার কথা বলে আসছে। কিন্তু সীমান্তে বিএসএফের হাতে হত্যার শিকার ৯০ ভাগই গুলিতে নিহত হয়েছেন।
সীমান্ত হত্যা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও তারা দিয়েছে বারবার। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখছে না তারা।
বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মনে করেন, বাংলাদেশকে চাপের মুখে রাখতে ভারত সীমান্ত হত্যাকে একটা কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। বিএসএফ অব্যাহতভাবে সীমান্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা ভারতীয় নীতিরই প্রতিফলন। তারা মুখে সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার যত কথাই বলুক না কেন বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখছি না।
তার কথা, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে বিএসএফ যে কারণ দেখায় তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ চোরাচালানি বা অপরাধী হলেও তাকে বিনা বিচারে হত্যা করা আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। কোনো সিভিলিয়ানকে এভাবে হত্যা করা যায় না। বিএসএফ আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। এর বিরুদ্ধে ভারত সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ফেলানি হত্যার পর ভারত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাপ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে তারা বিচারের আয়োজন করে। কিন্তু তাতেও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি বলে জানান মানবাধিকার কমিশনের এই সাবেক প্রধান।
তিনি বলেন, এইসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্ব ভারতের। কারণ যারা এর সঙ্গে জড়িত তারা সেই দেশের নাগরিক। তারা এর বিচার করছে না। চাইলে বাংলাদেশও এখানে বিচার করতে পারে। তবে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং বিচারের দাবিতে বাংলাদেশও যথেষ্ট সোচ্চার নয়।
এসডব্লিউএসএস/১০৫০
আপনার মতামত জানানঃ