গত ২৩ জুলাইয়ের প্রকাশিত এক খবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছিল এভাবে, ‘বাংলামোটরে যে বাধা দেওয়া, সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যত দূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি বসাব, চা খাওয়াব। কথা বলতে চাইলে শুনব।’ বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও তো দূরের কথা নিজেদের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েই এখন বিপদে।
সূত্র মতে, ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে দুদিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিল কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী। গতকালও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের উত্তেজনা দেখা দেয়।
একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। শুরু হয় দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় স্পেশাল বাহিনী সোয়াতও।
দুপুরে ঘণ্টা দেড়েকের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। বিকেলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটও। বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী একপর্যায়ে অবস্থান নেন দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে। বিকেলে দরজা ভেঙে কার্যালয়ে ঢোকে পুলিশ।
সংঘর্ষের পর এবার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। নেতা-কর্মীরা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে রাখলেও পুলিশ সেটি ভেঙে ভেতরে ঢোকে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় একজন বিএনপি নেতা নিহত হয়।
এদিকে, রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। সেই সাথে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে সভা-সমাবেশের অধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তিনি বলেছেন, ‘ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়-ভীতি দেখানোর খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়-ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
এতে বলা হয়, ‘ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার তদন্ত দেখার প্রত্যাশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সরকারি কর্তৃপক্ষকে ওই তদন্তে উৎসাহিত করছে দেশটি।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিবৃতিতে বলেন, ‘সরকারি কর্তৃপক্ষকে সহিংসতার এ খবরগুলো তদন্ত করতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে উৎসাহিত করি।’
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তবে এর আগেই বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নয়াপল্টন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে মকবুল আহমেদ নামের বিএনপির এক কর্মী নিহত হন। আহত হন দলটির অর্ধশত নেতা-কর্মী।
সংঘর্ষের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, শিমুল বিশ্বাস, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়াসহ কয়েক শ’ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করে তিনটি মামলা দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। দুপুরে ওই কার্যালয়ে যেতে গেলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিকেল ৪টার দিকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়ক যান চলাচলের জন্য ছেড়ে দেয়া হলেও ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বিকেলে গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই ১০ ডিসেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশ করবেন তারা। তবে এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য বিকল্প জায়গার প্রস্তাব দেয়া হলে বিবেচনা করবেন।
এসডব্লিউএসএস/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ