আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা কাটেনি। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিলেও বিএনপি সেখানে যেতে নারাজ। চাহিদা অনুযায়ী বিকল্প স্থানে সমাবেশ করতে না দিলে শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে থাকতেই অনড় দলটি। নয়াপল্টন এলাকা নিজেদের দখলের রাখতে বেশ কৌশলী ভূমিকায়ও দলটি। এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে নয়াপল্টন।
এরই মধ্যে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও টিয়ার শেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। বুধবার বিকাল ৩টার দিকে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
উল্লেখ্য, নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে রাজধানীর তৃতীয় কোনো জায়গায় সমাবেশ করা নিয়ে এখনো একমত হতে পারেনি বিএনপি এবং পুলিশ প্রশাসন। এ বিষয়ে গত দুই দিনে তিন দফা বৈঠকের পর জানা গেছে, পুলিশ এখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিতে চায়। অন্য দিকে বিএনপি নয়াপল্টন থেকে সরে এসে আশপাশের কোথাও সমাবেশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, এরপরও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বিকল্প না পেলে তারা পল্টন এলাকাতেই সমাবেশ করবেন। তবু তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো দেয়ালঘেরা জায়গায় যাবেন না। কারণ, নানা শঙ্কা ও বিবেচনায় এই মুহূর্তে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে নিরাপদ ভাবতে পারছেন না।
নয়াপল্টন যেন রণক্ষেত্র
জানা গেছে, ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশকে ঘিরে দুদিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিল কয়েক শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী। আজও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ৩টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জবাব দেয়। শুরু হয় দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় স্পেশাল বাহিনী সোয়াতও। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।
পুরো নয়াপল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের লাগাতার টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপে টিকতে না পেরে পিছু হটে বিএনপি নেতাকর্মীরা। আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয় তারা। এদিকে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে বেশকয়েকজন ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হন। তারা হলেন- তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদল নেতা আলদীন, জুয়েল, আরিফ, নিয়াজ মোরশেদ। তাদেরকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান
বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। মঙ্গলবার এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পুলিশের হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন, তারা যেভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তার এই বক্তব্য পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
নেড প্রাইস বলেন, আমরা বাংলাদেশ সরকারকে মুক্তমত, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মৌলিক অধিকারকে সুরক্ষা এবং সম্মান জানানোর আহ্বান জানাই। আমরা পুলিশের হয়রানি, বিরোধী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিরুদ্ধে কড়াকড়ির রিপোর্টগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন।
আমরা বাংলাদেশের সবপক্ষকে আহবান জানাবো তারা যেনো আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন এবং সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকেন। কোনো দল বা প্রার্থী যাতে অন্য দল বা প্রার্থীর বিরুদ্ধে হুমকি, উস্কানি কিংবা সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে, তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন, সকল প্রার্থীদের ভোটারদের সঙ্গে সহিংসতা, হয়রানি এবং হুমকি ছাড়া যোগাযোগ করতে পারা প্রকৃত নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে এ ধরণের সহিংসতার রিপোর্টগুলো স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্তে উৎসাহিত করি।
এছাড়া ওই ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রসঙ্গও আসে। এতে পিনাকী ভট্টাচার্য এবং সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র জানে বলে উল্লেখ করেন নেড প্রাইস।
তিনি বলেন, আমরা এই আইন সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ স্পষ্ট করেছি। আমাদের মানবাধিকার রিপোর্টেও এটি উল্লেখ করেছি। আমাদের বাংলাদেশী পার্টনারদের সঙ্গেও এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে আমাদের। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধে রুপান্তরিত করা যাবেনা। এটা কখনো ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের উপলক্ষ হতে পারেনা।
১৫ বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের যৌথ বিবৃতি
আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসসহ ১৫টি বিদেশি কূটনৈতিক মিশন। গতকাল মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে একই বিবৃতি ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় প্রকাশ করে।
এসময় তারা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিবৃতি দেওয়া ১৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে, ব্রিটিশ হাইকমিশন, অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন, কানাডীয় হাইকমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন, জাপান দূতাবাস, ফ্রান্স দূতাবাস, ডেনমার্ক দূতাবাস, জার্মান দূতাবাস, ইতালির দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, নরওয়ে দূতাবাস, সুইডিশ দূতাবাস, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, স্পেন দূতাবাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
যৌথ বিবৃতিতে কূটনৈতিকরা বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়ন উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মৌলিক ভূমিকাকে তুলে ধরতে চাই।
আমরা মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে সংরক্ষিত স্বাধীনতা উদযাপন করি এবং ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্যে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরি।
অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি।
আমরা বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এদেশের সাফল্যকে আরো উৎসাহিত করতে আগ্রহী এবং মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি।
এসডব্লিউএসএস/১৬৩০
আপনার মতামত জানানঃ