সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশস্থল মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তায় মানুষ দাঁড়িয়ে নেতাদের বক্তব্য শুনছেন। বেলা সাড়ে তিনটায় নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ চলছিল। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ ছাড়াও আশপাশ এলাকার চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার ও দরগাগেট এলাকায় হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে বিএনপির নেতাদের বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। এ যেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারী এরশাদ পতনের আন্দোলন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে আশপাশের রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। বাধা দিয়েও সরকার জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি।
জনমানুষের ঢল
এর আগে আজ শনিবার সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমবেত হন। বেলা সাড়ে ১১টায় গণসমাবেশ শুরু হয়। বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত দলটির নেতারা বক্তব্য রাখছিলেন। বক্তব্যে তাঁরা বলেন, বাধা দিয়েও সরকার মানুষের ঢল থামাতে পারেনি। বাধা না দিলে আরও মানুষ উপস্থিত হতে পারতেন।
গণসমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। তিনি বেলা দেড়টার দিকে সমাবেশের মঞ্চে আসেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান বক্তা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন।
এর আগে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়ক হয়ে বিভাগীয় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আসতে শুরু করেন। আগের রাতে মাঠে অবস্থানরত রাতজাগা হাজারো নেতা-কর্মী স্লোগান ও হাততালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
তখন সমাবেশস্থলে কম্বল মুড়িয়ে মাঠের ক্যাম্পে ঘুমিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা আড়মোড়া ভাঙছিলেন। খড়-কুটায় আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছিলেন কেউ কেউ। কেউ কেউ আবার মঞ্চের সামনে আগেভাগে জায়গা দখল করে বসেন। তাদেরই একজন সুরুজ মিয়া। এত কষ্ট করে এখানে কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘মনে অনেক কষ্ট। তাই আইছি।’ তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে এসেছেন।
এছাড়া শাল্লা উপজেলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার মোটরসাইকেল চালিয়ে, নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিলেটে পৌঁছান সাইফুর রহমান। শনিবার সকালে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশস্থলে এমন কথা ও দৃশ্য চোখে পড়ে।
ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে বাঁশের বেষ্টনীর ঠিক সামনে আগেভাগে জায়গা দখল করে নেন শাহাব উদ্দিন নামের একজন। তার বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি গ্রামে। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বিছনাকান্দি থেকে সিলেটে পৌঁছেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিরাট কষ্টে আছি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও নেই। তাই এসেছি।’
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভবানীপুর গ্রাম থেকে সিরাজুল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ৪৫ নেতা-কর্মীসহ সমাবেশস্থলে আসেন। বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও গণসমাবেশে এসছেন। সাধারণ মানুষেরা বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও লুটপাট সহ্য হয় না বলে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।
আ’লীগের ভুল পদক্ষেপ
বিএনপির প্রথম গণসমাবেশ হয় গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে। এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে (বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ) গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ছাড়া বাকি সব স্থানে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। তবে ময়মনসিংহে গণসমাবেশের আগে অঘোষিত ধর্মঘট পালিত হয়। সেখানেও গণপরিবহন বন্ধ ছিল।
একইভাবে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গতকাল ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সিলেট জেলায় আজ সকাল ছয়টায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এ ধর্মঘট চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে ধর্মঘট উপেক্ষা করে অনেকে মোটরসাইকেলে কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে অথবা হেঁটে সমাবেশে এসেছেন।
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে পরিবহননেতাদের ডাকা ধর্মঘট এবং থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট–সেবা বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাঁরা বলেছেন, গণসমাবেশে যাঁরা যোগ দেওয়ার, তাঁরা ঠিকই নানা কৌশলে যোগ দিয়েছেন। মাঝখানে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
নগরের বন্দরবাজার এলাকার মাছবাজারে মইনুল হোসেন নামের শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘বাসায় মাছ নেই। তাই কিনতে এলাম। যানবাহন বন্ধ, এ কারণে প্রায় আধা ঘণ্টা হেঁটে মাছবাজারে এলাম। মানুষ ঠিকই বুঝেছে, এই ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সাধারণ মানুষের যে দুর্ভোগটা হলো, এটা কিন্তু সরকারের বিপক্ষেই গেল।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, বিরোধী দলের গণসমাবেশ সফল না হওয়ার জন্য সরকার যে শিশুসুলভ আচরণ করেছে, তা হাস্যকর। এমন আচরণ জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে লোকসমাগম বন্ধের চেষ্টা হয়েছে। সিলেটেও একই কাণ্ড করা হলো। সকাল থেকে ইন্টারনেট-সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যতই বাধা দেওয়া হোক, দলীয় নেতা-কর্মীরা এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সমাবেশ ঠিকই করত। কিন্তু সরকারি দলের বাধার কারণে সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে সমাবেশকে এখন সত্যিকার অর্থেই গণসমাবেশে পরিণত করবে।
এসডব্লিউএসএস/১৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ