জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা। সহিংসতায় ঘটছে প্রাণহানিও। রাজপথে জানান দিতে নিয়মিত সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে বড় দুই দল। দলগুলোর মাঠের কর্মসূচি ঘিরে বাড়ছে হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা। নেতাদের বক্তব্য নিয়ে চলছে কাদা ছুড়াছুড়ি। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন কেউ কেউ। এদিকে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ সারা দেশে সরব হওয়ায় হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার হচ্ছেন বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। গত এক মাস ধরে বিএনপি সভা-সমাবেশ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এসব ছাপিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা হামলা করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের দোকানপাটে, ব্যবসা-বাণিজ্যে।
এবার হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে হয়েছে। এতে পুলিশসহ বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় উপজেলার বামৈ বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা লাখাই উপজেলার বামৈ বাজারের দলীয় কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ মিয়া। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ। এ সময় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশ সেখানে এসে দ্রুত সমাবেশ শেষ করার তাগিদ দিলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বেশ কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়ে।
বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, সিলেটে গণসমাবেশ সফল করতে বুধবার রাতে লাখাইয়ের বামৈ বাজারে দলীয় কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশ চলছিল। এ সময় হঠাৎ লাখাই থানার একদল পুলিশ ওই কার্যালয়ে অভিযান চালায়। তখন পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ নেতা-কর্মীদের গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ মিয়াকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুনু মিয়া বলেন, বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়। পুলিশের ওপরই তারা প্রথম হামলা চালিয়েছে। এতে সাত-আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কয়েকটি রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে।
এদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নানা কায়দায় জুলুম-নির্যাতনের খেলা যেন থামছেই না।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে এবং দেশব্যাপী ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই এখন আওয়ামী সরকারের মূল নীতিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী সরকারের কোনো গণভিত্তি নেই বলেই তারা মানুষের সমাগম দেখলেই আঁতকে উঠে। আর সেজন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিএনপি’র সভা-সমাবেশে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির প্রায় ৩৬ লাখ নেতাকর্মীর মাথায় ঝুলছে লক্ষাধিক মামলার খড়গ।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির যত এগিয়ে যাচ্ছে তত বিএনপির বিরুদ্ধে পুরনো মামলাগুলো সচল হচ্ছে। পাশাপাশি দায়ের করা হচ্ছে নতুন মামলা। গত একমাসে বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৭৫ টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
এই মামলাগুলো শুধু রেকর্ড নয়, মামলাগুলোর তদন্ত এগিয়ে নেওয়া এবং মামলাগুলোতে চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পাশাপাশি পুরনো যে মামলাগুলো রয়েছে সেই মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও যাদেরকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১১৪০
আপনার মতামত জানানঃ