পুলিশের করা মাদক মামলায় র্যাবের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং আদালত থেকে আলোচিত সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ অব্যাহতি পেলেও মামলা থেকে শিপ্রাকে ছাড়তে চাইছে না পুলিশ। পুলিশের দায়ের করা মাদক মামলায় শিপ্রার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সত্যতা মেলেনি বলে র্যাব-১৫ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। র্যাবের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে পুলিশ আপত্তি জানিয়েছে। আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পেলেও পুলিশের এই আপত্তিতে শিপ্রার কাঁধের ওপর ঝুলে থাকছে মামলাটি। পুলিশের তৎপরতায় স্পষ্ট যে, শিপ্রাকে তারা সহজে ছেড়ে দিতে চাইছে না।
জানা যায়, শিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে র্যাব-১৫ এর ওপর। গত ১৩ ডিসেম্বর মাদক আইনে দায়ের করা এ মামলার তদন্ত শেষে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে র্যাব। আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শ্রিপ্রার বিরুদ্ধে পুলিশ মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে যে মামলা করেছে সে সব অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ওই প্রতিবেদনে শিপ্রাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে বেকসুর খালাস দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
এই প্রতিবেদন ধরে ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলার বিচার কাজের নির্ধারিত দিন ছিল। কিন্তু বেঁকে বসে পুলিশ। শিপ্রাকে মামলা থেকে র্যাবের দেওয়া অব্যাহতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তারা। আদালতে র্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেয় পুলিশ। আদালতও পুলিশের আবেদনটি আমলে নিয়ে পরবর্তীতে শুনানির জন্য দিন ধার্য করার কথা বলেন।
শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মাদক মামলা নিয়ে শুরুতেই ধোঁয়াশা তৈরী হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে শিপ্রাকে ফাঁসানোর অভিযোগ ওঠে মামলার শুরু থেকেই। মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ একটি বানোয়াট মামলা করেছে বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সিনহা হত্যাকাণ্ডে পুলিশের জড়িয়ে পড়ায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় মামলাকে ভিন্ন দিকে আলোচনায় রাখার জন্য শিপ্রাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ আসে। শিপ্রার নিঃশর্ত মুক্তি চেয়ে ব্যানার হাতে আন্দোলন করেন চলচ্চিত্রকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডে বাহারছড়া পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ। ওই রাতে মেরিন ড্রাইভ রোডে অবস্থিত হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে মেজর সিনহার রুম তল্লাশি করে তার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে আটক করে রামু থানা পুলিশ। এ সময় বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে রামু থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পরের দিন ১ আগস্ট মাদক মামলা দায়ের করে। ঐদিন শিপ্রাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে তখন অভিযোগ ওঠে, সিনহা হত্যাকাণ্ডে পুলিশ জড়িয়ে পড়ায় সিনহা হত্যাকাণ্ডের শোরগোল দমিয়ে রাখতে পুলিশ মাদক মামলায় শিপ্রাকে জড়িয়ে এক নাটক তৈরী করছে।
র্যাবের করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়া পুলিশের নারাজিতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আরো জোরালো হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিপ্রা নামক ট্রাম্পকার্ডটি হাতছাড়া করতে কোনোভাবেই সায় দিচ্ছে না পুলিশ। মামলার ঘেরাটোপে শিপ্রাকে জড়িয়ে রাখতে চাইছে তারা। মাদক মামলায় নারী অভিযুক্ত হওয়ার যে সামাজিক প্রতিক্রিয়া, পুলিশ তা কাজে লাগাতে চাইছেন বলে মনে করছেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/এসকেএইচ/আরা/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ