জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি এবং আয় কমে যাওয়ায় বড় দুটি ধাক্কার মধ্যে রয়েছে এখন মানুষ। সব শ্রেণির মানুষ বা পরিবারের ওপর এ প্রভাব পড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবারগুলোতে। এসব পরিবারের আয়ের বড় অংশ খরচ হয় চাল, গমের মতো খাবারের পেছনে।
পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশের সব মানুষ কেনাকাটা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে মানুষের কেনাকাটা বা ব্যয়ের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। এর মধ্যে শহরে কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ এবং গ্রামে ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
‘খাদ্য, দারিদ্র্য ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদন তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) তিন বিশ্লেষক। তাঁরা হলেন ঝিনসেন দিয়াও, পল দরোস, জেমস থারলো। গতকাল সেমিনারে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পল দরোস।
সেমিনারে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় দারিদ্র্য বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। তিনটি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে মানুষের কেনাকাটার সামর্থ্যে। জাতীয় পর্যায়ে মানুষের কেনাকাটা বা ব্যয় প্রায় ৫ শতাংশ কমে গেছে।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়,দেশের মানুষ এখন খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেলের পেছনে সাড়ে ১৪ শতাংশ, অন্যান্য খাদ্যের পেছনে ৪৩ শতাংশ এবং খাদ্যপণ্যের বাইরে অন্যান্য কেনাকাটা ও সেবার পেছনে সাড়ে ৪২ শতাংশ অর্থ খরচ করছে। খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশে কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদন ও সেবা কমে যাচ্ছে। তবে পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়ায় সেখানে জিডিপি ও কর্মসংস্থান বেড়েছে।
সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। সার নিয়ে সংকট দেখা দিলে কর্মহীন হয়ে পড়বেন অনেক লোক। এ অবস্থায় সার আমদানির জন্য ভারতনির্ভরতা কমিয়ে ভিন্ন উৎস খোঁজা প্রয়োজন বাংলাদেশের।
সেমিনারে বলা হয়, সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। সার নিয়ে সংকট দেখা দিলে কর্মহীন হয়ে পড়বেন অনেক লোক। এ অবস্থায় সার আমদানির জন্য ভারতনির্ভরতা কমিয়ে ভিন্ন উৎস খোঁজা প্রয়োজন বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে সার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো, কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া এবং সরবরাহ প্রক্রিয়ায় দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্যপণ্য বিশেষ করে গম ও ভোজ্যতেল, সার ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাতে সরকারের ব্যয় বেড়ে গেছে। সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ ছাড়া দাম বেড়েছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যেরও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হলে গমের দামের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে। দরিদ্র মানুষের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।
সংকট উত্তরণে সরকারও উন্নয়ন সহযোগীদের নীতিনির্ধারণী কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। যেমন, গম, আটা, তেলবীজের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়া, ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক কমানো, সারের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান, দক্ষতার সঙ্গে সার ব্যবহার, সারের পরিবহন খরচ কমানো, সারের উৎপাদন বাড়ানো, দরিদ্রদের নগদ অর্থসহায়তা দেওয়া ইত্যাদি। নগদ অর্থসহায়তা সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/
আপনার মতামত জানানঃ