বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতি দমন আইনবিষয়ক সচেতনতা খুব কম। নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতি দমন আইন বিষয়ে অবগত রয়েছেন মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ নাগরিক। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের (সিআইপিই) পরিবারভিত্তিক একটি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২১ সালের ২৭ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে ১ হাজার ২৩১ জন জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর জরিপটি চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের ফলাফল বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতি দমন আইনবিষয়ক সচেতনতা খুব কম, জরিপের ফলাফল অনুযায়ী যা মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। যারা সচেতন তাদের মধ্যেও দুই-তৃতীয়াংশের বেশি বিশ্বাস করে যে বিদ্যমান আইনগুলোর মধ্যে এই অধিকারগুলোর চর্চা সম্ভব। নাগরিকদের সঙ্গে ঘটা দুর্নীতির বিভিন্ন ঘটনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি কার্যালয়ে অনেক বেশি বলে গণ্য করা হয়। এমন বিষয় থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা কর্তৃক নিয়োগ করা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ে বেশি তদন্ত করতে দেখা যায়।
প্রতিবেদন বলছে, দুর্নীতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, বিশ্বাস একপ্রকার মিশ্র ধারণা নির্দেশ করে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ শতাংশ মনে করে বর্তমান দুর্নীতির পর্যায় হলো অগ্রহণযোগ্য, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩৪ শতাংশ) এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করে এবং এক-পঞ্চমাংশের কিছুটা বেশি (২২ শতাংশ) এ ব্যাপারে অনিশ্চিত।
জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি মানুষ জানান, অনুমোদনহীন সেবা, অর্থ উপহার অথবা ঘুষ কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ উল্লেখ করেছে যে এটা সর্বদা বা মাঝেমধ্যে সমর্থনযোগ্য। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দুর্নীতিকে অনুমোদন করার পক্ষেই রয়েছে।
এক-তৃতীয়াংশ উল্লেখ করেছে যে এটা সর্বদা বা মাঝেমধ্যে সমর্থনযোগ্য। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দুর্নীতিকে অনুমোদন করার পক্ষেই রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনা মহামারির সময়ে ১৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন পরিবারের (মোট জনসংখ্যার ৪১ শতাংশ) প্রতি পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন কর্মসংস্থান হারিয়েছে।
বাংলাদেশ এবং দুর্নীতি; যেন একে অন্যের পরিপূরক। বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। যা গতবার ছিল ১২তম।
অবশ্য দুর্নীতির এই সূচকের মৌলিক বিষয়, অর্থাৎ স্কোরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি নেই। ১০০–এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৬, যা গতবারও একই ছিল। এমনকি চার বছর ধরে স্কোরটি একই আছে।
তবে দক্ষিণ এশিয়ার দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। একমাত্র আফগানিস্তানই রয়েছে বাংলাদেশের নিচে।
বিশ্লেষকরা বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখানোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেও সেটি ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না। কারণ, যাদের হাতে এই দায়িত্ব, তাদের একাংশই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
‘রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা গেলে সেটা বেশি কাজে দেয়। আমরা যদি আমাদের শুভবুদ্ধি, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম দিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে দুর্নীতি দমন নিয়ে যে নানা প্রশ্ন রয়েছে, তা দ্বিতীয় স্তরে নেমে আসবে।’
তারা বলেন, দুদককে কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই। কমিশনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দিতে পারলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও কাজ করার সাহস পাবেন।
তারা বলেন, যত বেশি মানুষের মনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা যাবে, দুর্নীতির ক্ষেত্র ততটাই সংকুচিত হয়ে আসবে।
তারা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে শুধু বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া নয়, আপসহীন ও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। যে কোনো মূল্যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সব ধরনের দুর্নীতিবাজের জন্য আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে হবে। অবশ্য এসব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা একান্তভাবে জরুরি। সরকারের তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি বন্ধ করা সহজ নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩২
আপনার মতামত জানানঃ