অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পোস্ট মুছে দেয় ফেসবুক। আর সম্প্রতি এই পোস্ট মুছে দেয়ার প্রতিবাদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনের সাংবাদিকরা। গত কয়েক বছর থেকেই ইসরায়েলের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
স্বভাবতই এই অভিযোগ নতুন নয়। গত বছরেও বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েল সরকারের চাপের মুখে ফিলিস্তিনিদের করা ইসরায়েলবিরোধী রাজনৈতিক পোস্ট মুছে ফেলার অভিযোগ ওঠে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীদের দাবি, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে করা ফিলিস্তিনিদের এ ধরনের বিভিন্ন পোস্ট সরিয়ে ফেলেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট ফেসবুকের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে পোস্ট, ভিডিও-ছবি মুছে দেয়ার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছেন দেশটির সাংবাদিকরা।
ফিলিস্তিনে বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপের পোস্টের ক্ষেত্রেও মাধ্যমটি চরম দমন চালাচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ তুলেছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৪ ডিসেম্বর ফিলিস্তিন টিভির প্রতিবেদক ক্রিস্টিয়ান রিনাভি তার ফেসবুক ওয়ালে একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
ভিডিওটি ছিল ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ফিলিস্তিনি এক ব্যক্তিকে মাটিতে ফেলে গুলি মেরে হত্যা করে, এ সম্পর্কে। সে ব্যক্তি ছুরি নিয়ে ইসরায়েলি এক বেসামরিক নাগরিকের ওপর চড়াও হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
রিনভি ভিডিওটি পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে সেটি সরিয়ে ফেলে ফেসবুক। রিনভির অ্যাকাউন্টে প্রায় চার লাখ ফলোয়ার ছিলেন।
এমন অনায্যভাবে তার ফেসবুক থেকে কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। রিনভি বলেন, তিনি গত নভেম্বরে জেরুজালেমে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি হামলার ফুটেজ পোস্ট করেছিলেন। এরপর থেকে তার অ্যাকাউন্ট সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। এই ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০২১ সালের প্রথম দশ মাসে ৭৪৬টি অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তালিকাভুক্ত করেছে সংগঠনটি।
এ ব্যাপারে হামলেহের প্রতিষ্ঠাতা নাদিম নাশিফ বলেন, আমরা এই বিষয়টিকে ফিলিস্তিনি বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে মনে করি। এটা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন ও দুর্ভোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা।
এ প্রসঙ্গে ফেসবুকের মন্তব্য
অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে ফেসবুক। মাধ্যমটির দাবি, তারা অনায্যভাবে কোনো পোস্ট মুছে দেয়নি বা দমন করেনি।
উভয় ক্ষেত্রেই ফেসবুক বলেছে তারা বিষয় দুটিতে হস্তক্ষেপ করেছে, কারণ রিনভির পোস্ট করা কনটেন্টগুলো প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা-র এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা অ্যাপটির মাধ্যমে সবাইকে সুরক্ষিত রাখতেই এমন ডিজাইন করেছে।
‘যারা কোনো কিছু পোস্ট করুক না কেন, আমরা আমাদের নীতিগুলো সবার কাছেই সমানভাবে প্রয়োগ করি।’
গত অক্টোবরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইসরায়েলি সমালোচক বলেন, ফিলিস্তিনি ও তাদের সমর্থকদের প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যাপক দমনপীড়ন চলছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে মানবাধিকার বিষয়ক কোনো কথা তারা বলতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনি অনেক প্রতিবেদক আছেন যারা নানা ধরনের সমালোচনামূলক বক্তব্য দমনের অভিযোগ করেছেন ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
মেটার মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের আরবি ও হিব্রু ভাষার একটি দল রয়েছে যারা আমাদের কমিউনিটিকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করেন। তারা অন্যের জন্য ক্ষতিকর কনটেন্টগুলো মুছে ফেলেন।’
এদিকে, রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি কর্মী ও লেখক মোহাম্মদ এল-কুর্দের পোস্ট অবনমনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এল-কুর্দ বলেছেন, ইনস্টাগ্রামে তার ৭ লাখ ৪৪ হাজার অনুসারী থাকলেও, মে মাসে শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভের সময় তার ইনস্টাগ্রামের ভিউ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়।
তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার অ্যাকাউন্টের এই ভিত্তিহীন নীরবতা সন্দেহ করছি।’
প্রসঙ্গত, গত মে মাসে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ ফেসবুকের নির্বাহীদের ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলবিরোধী পোস্টের বিষয়ে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান। ইসরায়েলের জন্য ক্ষতিকারক এমন বিষয়বস্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১২১০
আপনার মতামত জানানঃ