কোনো বিদায়ই আনন্দদায়ক নয়। আর যদি সেটা হয় মৃত্যুর মতো কোনো বিদায়! এর অসহনীয় বেদনার কারণেই হয়তো মানুষ পরম মমতাবোধ থেকে কাঁদে, শোক করে। আর সেজন্য কবরস্থানও হয়ে উঠেছে বিষাদ বেদনা ও কান্নার জায়গা। দেখলেই যেন মনের বাধ ভেঙে কান্না আসে। কিন্তু পৃথিবীতে এমনও কবরস্থান আছে যেখানে কান্না ও শোক নয়, আনন্দ করা হয়। অদ্ভুত এই কবরস্থানে ভিড় করছেন পর্যটকরা। তাদের থেকে কিছু আয়ও হচ্ছে গ্রামবাসীর।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনের মতে, রোমানিয়ার উত্তরে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সাপুনৎসায় অবস্থিত এই আনন্দময় কবরস্থান। সাধারণত রোমানীয় অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের কবরখানা অত্যন্ত বিষাদময় ও ধূসর দেখতে লাগে। কিন্তু সে দেশের এক ছুতার মিস্ত্রি ব্যতিক্রমী কিছু করতে চেয়েছিলেন।
আনন্দময় কবরস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটাই বিশ্বে একমাত্র জায়গা যেখানে মৃত্যু নিয়ে হাসাহাসি করা হয় এবং মৃতদের জীবনের কাহিনী নিয়ে চর্চা হয়।
প্রায় ৮৫ বছর আগে স্টান ইওয়ান পাত্রাশ নামের এক ব্যক্তি এই ‘আনন্দময় কবরস্থান’ সৃষ্টি করেন। তিনিই দুমিত্রুকে কাঠের কাজ শেখান। মাত্র নয় বছর বয়সে দুমিত্রু সেই কাজ শুরু করেছিলেন।
এ বিষয়ে দুমিত্রু বলেন, ইওয়ান পাত্রাশ শিল্পকলায় প্রতিভা খুঁজতে আমাদের কাছে এসেছিলেন। আঁকার ক্লাসে সেরা হওয়ায় তিনি আমাকে বেছে নেন। এখন সত্যি তার অভাব বোধ করি। আমরা মানুষ এবং মানুষের মনে আবেগ থাকে। কিন্তু এটাই তো জীবন। একজন যায়, আরেকজন আসে।
প্রায় ৮৫ বছর আগে স্টান ইওয়ান পাত্রাশ নামের সেই মিস্ত্রি এই আনন্দময় কবরস্থান তৈরি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৪০ বছর সেই কাজ করে যাচ্ছেন কবরখানাটির এখনকার ক্রস মেকার দুমিত্রু পপ। তবে পাত্রাশের দেখানো কাঠের কাঠামোর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছেন আরেকটি ধরন। এখন সেখানকার সব কবরের ক্রসই নীল রঙের। সেই ক্রসে নীল মোমবাতির ওপর কবিতা ও ছবি দিয়ে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর চর্চাটা তারই হাত ধরে হচ্ছে।
দুমিত্রু পপ মনে করেন, আনন্দময় কবরস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটাই বিশ্বে একমাত্র জায়গা যেখানে মৃত্যু নিয়ে হাসাহাসি করা হয় এবং মৃতদের জীবনের কাহিনী নিয়ে চর্চা হয়।
দুমিত্রু জানান, এখনো পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার ক্রস তৈরি করেছেন তিনি। তিনি প্রত্যেকটি ক্রসের কাহিনী আলাদা করে জানেন।
যেমন একটি ক্রস তার একেবারে প্রথম দিকের সৃষ্টি। সামনের দিকে মৃত ব্যক্তির জীবন এবং পেছনে মৃত্যু সম্পর্কে কিছু লেখা আছে। বাচ্চা মেয়েটি মাত্র চার বছর বয়সে ট্যাক্সি চাপা পড়ে মারা যায়।
তিনি বলেন, ‘এখানে একটা ঐতিহ্য রয়েছে। সবাই মিলে বিদায় জানাতে মানুষ মৃতদেহ তিন দিন বাসায় রাখেন। আমাদের এখানে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে অভিযোগ করা হয় না, তাকে নিয়ে গান গাওয়া হয়। মৃতের জীবন সম্পর্কে চটজলদি গান বাঁধা হয়। সেটা থেকে আমি প্রেরণা পাই।’
মাঝেমধ্যে মুখরোচক কাহিনী সম্পর্কে এখানে কেউ চটে যায় না, অন্তত প্রকাশ্যে নয়। কারণ পুরো গ্রামের আয় কবরখানার ওপর নির্ভর করে রয়েছে। অঞ্চলের অন্যতম দ্রষ্টব্য হিসেবে জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ