চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ঘটল হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। ছেলেকে বাঁচাতে করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ বেড ছেড়ে দিয়েছেন এক মা। সেই আইসিইউ বেডে এখন চলছে ছেলের চিকিৎসা। তবে আর বেঁচে নেই সেই মা।
গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে এ ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৮ জুলাই) দিবাগত রাত ১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব।
তিনি বলেন, ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মা ৩৮ বছর বয়সী ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে দিয়েছেন। পুরো ঘটনাই আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। কিন্তু আমরা নিরূপায়। মা বেঁচে নেই।
মায়ের ত্যাগের কারণে ছেলেটি এখনও বেঁচে আছে। তবে মা যা করেছেন তাতে আমাদের সায় ছিল না। তারপরও উনার জোরাজুরিতেই আমরা নিরূপায় হয়ে তাকে আইসিইউ বেড থেকে নামিয়েছি। মায়ের ছেড়ে দেওয়া আইসিইউ সিটে ছেলে শিমুল পাল এখনও বেঁচে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিএনবি কলোনী এলাকার ৬৫ বছর বয়সী মা ও ৩৮ বছর বয়সী ছেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ২২ জুলাই তাকে আইসিইউতে নিয়ে যান চিকিৎসকরা। ছেলে ভর্তি ছিলেন সাধারণ ওয়ার্ডে।
ধীরে ধীরে ছেলের অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। তারই একপর্যায়ে মঙ্গলবার আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয় ছেলের। কিন্তু চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ বেডেই রোগী ভর্তি তখন। ছেলের জন্য আইসিইউ না পাওয়ার সংবাদ চলে যায় আইসিইউতে ভর্তি থাকা মায়ের কানে।
তাতেই ছটফট করতে থাকেন মা। নিজের হাতে লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদের ইশারা দেন বৃদ্ধ মা। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলেন, শত চেষ্টা করেও মাকে বোঝাতে পারেনি আমরা। বাধ্য হয়ে মাকে নামিয়ে ছেলেকে তোলা হয় আইসিইউতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মা হাসপাতালের আইসিইউ থেকে নামার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই মারা যান। অন্যদিকে জীবন মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন ছেলে।
সূত্র মতে, বর্তমানে চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোথাও আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সবগুলো আইসিইউ বেড রোগীতে পরিপূর্ণ বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে মিলছে না একটি সাধারণ বেডও। হাসপাতালের ভর্তি করে ফ্লোরে রেখে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের জন্য একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতল ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে করোনা ইউনিটে আইসোলেশন এবং অক্সিজেন সুবিধাসহ করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ১৫০টি বেড। কিন্তু এর বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ১৭০ জন। এই হাসপাতালের ১৭টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।
চট্টগ্রামের বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এভারকেয়ার হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, সিএসসিআর, পার্ক ভিউ, মেট্রোপলিটন, ন্যাশনাল হাসপাতালসহ কোন হাসপাতালেই নতুন করে করোনা রোগী এবং আইসিইউতে রোগী ভর্তির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঐসব হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
এদিকে, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ১৭ জন মারা গেছেন। একই সময়ে নতুন করে রেকর্ড ১ হাজার ৩১৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার তুলনায় করোনা শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশের বেশি।
পাশাপাশি, চট্টগ্রামে করোনা থেকে সেরে ওঠা এক নারীর দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। ষাটোর্ধ্ব ওই নারী এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো ব্যক্তি মারা যান।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৩৭
আপনার মতামত জানানঃ