চট্টগ্রাম শহর প্রতি বছর সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে গড়ে ২০ মিলিমিটারের বেশি হারে। বন্দরনগরীর সাগরে নিমজ্জনের গতি এখন বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের বার্ষিক গড় উচ্চতা বৃদ্ধির ১০ গুণ। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত ডুবন্ত শহরগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, পরিবেশ দূষণ, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ বন্দরনগরীর ঝুঁকিকে বহু গুণে বাড়িয়ে তুলেছে। প্রতিবেশগত যেকোনো বিপর্যয় চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূপ্রকৃতির পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকির মাত্রায় ভয়াবহ পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে।
আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম। বঙ্গোপসাগরের ব্যস্ততম বন্দরটিও এখানেই অবস্থিত। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে সিংহভাগ অবদানই চট্টগ্রাম নগরীর। ভোগ্যপণের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জও এখানেই অবস্থিত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে সিটি করপোরেশনের অধীন এলাকাগুলোর মোট জনসংখ্যা ৩২ লাখের বেশি।
দ্রুতবর্ধনশীল এ জনসংখ্যা ২০৩৫ সালের মধ্যে ৭০ লাখ ছাড়ানোর পূর্বাভাস রয়েছে। এরই মধ্যে নগরী ও এর বাসিন্দাদের ওপর প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের প্রভাবগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোয় এসব প্রভাব নগরজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আরো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায়ও তাদের এ আশঙ্কার পুনরাবৃত্তি উঠে এসেছে। ২০১৫-২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৯৯ শহরের নিমজ্জনের গতি পর্যবেক্ষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রোড আইল্যান্ডের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ওশেনোগ্রাফির তিন বিশেষজ্ঞ। তাদের সে গবেষণায় পাওয়া ফলাফল ২০২২ সালে অ্যাডভান্সিং আর্থ অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স প্রকাশিত জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে প্রকাশ হয়।
সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার ও পৃথিবীর কক্ষপথে পরিভ্রমণরত সেন্টিনেল-১ উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, গোটা বিশ্বে এখন সবচেয়ে দ্রুতগতিতে সমুদ্রে নিমজ্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে চীনের তিয়ানজিং শহর। শহরটি ২০১৫-২০ সাল পর্যন্ত সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়েছে বছরে গড়ে ৪০ মিলিমিটারেরও বেশি গতিতে, যা বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের বার্ষিক গড় উচ্চতা বৃদ্ধির (২ মিলিমিটার) ২০ গুণেরও বেশি। এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ফিলিপাইনের ম্যানিলা।
এ দুই শহরে বার্ষিক গড় নিমজ্জনের গতি ২০ মিলিমিটার ছাড়িয়েছে। সে হিসেবে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধির তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি গতিতে ডুবছে চট্টগ্রাম। পাকিস্তানের করাচি ডুবছে বছরে ১০ মিলিমিটারের বেশি বা বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধির পাঁচ গুণেরও অধিক। গবেষণায় এ চার শহরের দ্রুত নিমজ্জনের সবচেয়ে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ব্যাপক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকে।
দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন নয়; পরিবেশ দূষণ এবং অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণও চট্টগ্রাম নগরীর দ্রুত নিমজ্জনের জন্য বহুলাংশে দায়ী। বন্দরনগরীর জন্য পরিস্থিতি আরো শোচনীয় করে তুলছে নিষ্কাশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ। বর্তমানে একটু বৃষ্টিপাত হলেই গোটা নগরী প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে বিষয়টি চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় নাগরিক সমস্যার অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি চট্টগ্রাম নগরীর জন্য এখন বড় হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে। দেড় দশক ধরে এখানে সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা ক্রমেই বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক রূপ নিচ্ছে জলাবদ্ধতা। জোয়ারের শহরের উপকূলীয় অংশ ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি মূল শহরের অভ্যন্তরেও সাগরের পানি চলে আসছে।
এমনকি শুষ্ক মৌসুমেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে খাতুনগঞ্জ, বাকলিয়া, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, জিইসি মোড়, চকবাজার, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর এলাকা। অভ্যন্তরীণ খালগুলো ভরাটের পাশাপাশি ড্রেনেজ সিস্টেম অকার্যকর হয়ে পড়ায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ছে মানুষের বাসা-বাড়ি, সড়ক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। সংকট থেকে পরিত্রাণে বাসিন্দারা সড়ক থেকে বাসা-বাড়ির সম্মুখভাগকে উঁচু করছে ইট-সিমেন্ট দিয়ে। এ প্লাবনের মাত্রা সামনের বছরগুলোয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নগরীটি স্থায়ীভাবে বিলীন হয়ে পড়ারও বড় আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জরিপ অধিদপ্তর ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চট্টগ্রাম শহরের গড় উচ্চতা এক মিটারেরও কম। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় এ উচ্চতা দশমিক ২ মিটারেরও কম। শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের সময় সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় আড়াই মিটার থেকে ২ দশমিক ৭৪ মিটার। আর বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের সময় সাগরের পানির উচ্চতা হয় প্রায় পাঁচ মিটার। জোয়ারের উচ্চতা নগরীর গড় উচ্চতার চেয়ে বেশি হওয়ায় এখানকার অনেক এলাকাই নিয়মিতভাবে প্লাবিত হচ্ছে।
কর্ণফুলী নদী-তীরবর্তী দেশের ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ এলাকা নিয়মিতভাবেই জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বহদ্দারহাট সংলগ্ন শুলকবহর এলাকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র দশমিক ১৯ মিটার। ওই এলাকায় প্রতি বছর জোয়ারের গড় উচ্চতা হয় আড়াই মিটারের বেশি। চট্টগ্রামের বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদে ভূমির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দশমিক ৪২ মিটার। যদিও এখানেও প্রতি বছর জোয়ারের উচ্চতা হয় আড়াই মিটারের বেশি।
শুষ্ক মৌসুমেও দিনের বড় একটি সময় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে এলাকাটি। জোয়ারের পানির কারণে আগ্রাবাদে চট্টগ্রামের বৃহত্তম সিডিএ আবাসিক এলাকা অনেকটা বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এখন আগ্রাবাদ ছেড়ে তুলনামূলক উঁচু পাহাড়ি এলাকায় আবাসনের দিকে ঝুঁকছেন। এতে চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে আবাসন তৈরির সমস্যাটিও আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।
জোয়ারের উচ্চতা ক্রমেই বেড়ে চলায় বিদ্যমান ও সাধারণ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থায় সামনের দিনগুলোয় চট্টগ্রাম শহরকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা নগর পরিকল্পনাবিদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞদের। পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম শহর ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর অন্যতম। এখন আমাদের প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ—উভয়কেই ব্যবহার করে ঝুঁকিগুলো ঠেকাতে হবে।
ড্রেন, খাল, নদী দখল ঠেকিয়ে নাব্যতা রক্ষা করতে হবে। আর সমুদ্রের স্বাভাবিক জোয়ার বা জলপ্রবাহকে প্রাকৃতিকভাবেই আটকে কিংবা ধারণ করে চট্টগ্রামকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য কর্ণফুলী নদীকে নিয়মিত ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে অভ্যন্তরীণ খাল-ড্রেনগুলোকে নদীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সংযুক্ত করা ছাড়া উপায় নেই।’
নগরীর দ্রুত নিমজ্জন সামনের দিনগুলোয় এখানকার প্রতিবেশগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরো বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ‘মেজারিং মাল্টি ডাইমেনশনাল ক্লাইমেট রিস্কস ইন চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রকাশ হয়।
জাপানের সাসাকাওয়া ফাউন্ডেশনের ওশেন পলিসি রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওপিআরআই) ও স্টিমসন সেন্টারের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বাংলাদেশের ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত প্রতিবেশগত, আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক অভিঘাত পরিমাপ করা। জরিপভিত্তিক এ গবেষণায় স্টিমসন সেন্টার উদ্ভাবিত ক্লাইমেট অ্যান্ড ওশেন রিস্ক ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স (সিওভিআরআই) ব্যবহার করা হয়।
এজন্য ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী শূন্য থেকে ১০ পর্যন্ত স্কোরিং করা হয়। প্রসঙ্গত, সিওভিআরআই সূচকে স্কোর যত বেশি হয়, ঝুঁকির মাত্রা তত বেশি।
গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমান অবস্থায় চট্টগ্রামে উপকূলীয় ভূমিক্ষয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির গতি বেড়ে যাওয়া, ভূমিধস, মেট্রোপলিটন এলাকায় প্লাবিত হয়ে পড়া এবং উপকূলীয় জলাধারে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। উল্লিখিত এসব ক্ষেত্রের প্রতিটিতেই সিওভিআরআই স্কোর ৭-এর বেশি। এছাড়া এখানে ঘূর্ণিঝড় (স্কোর ৮ দশমিক ৩৮) এবং এতে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বৃদ্ধির (৮ দশমিক ৩) দিক থেকেও চট্টগ্রাম এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে এতে উঠে আসে।
বাস্তুতন্ত্রের ঝুঁকি নিরূপণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম এলাকায় বিদ্যমান পানির তলদেশীয় উদ্ভিদ, কোরাল রিফ, ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা ও পানির তলদেশে উদ্ভিদে আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণও এখন অতি উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আর্থিক ঝুঁকি নিরূপণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, এখানকার অপরিকল্পিত অবকাঠামোগুলোই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে (স্কোর ৮ দশমিক ৬৬) রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও। বন্দর ও সমুদ্র পরিবহনে ঝুঁকির মাত্রা নিরূপণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৯৬। এখানে সড়ক (৬ দশমিক ৫৭), পানি সরবরাহ অবকাঠামো (৬ দশমিক ৩৭), বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর স্বল্প আয়ের বাসিন্দাদের আবাসন (৬ দশমিক ৬৭) ও মারাত্মক দুর্যোগে ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতির (৬ দশমিক ৬৪) ঝুঁকির মাত্রা উচ্চ-মাঝারি পর্যায়ের। এছাড়া চট্টগ্রামকেন্দ্রিক বিভিন্ন শিল্পও এখন উচ্চ থেকে উচ্চ-মাঝারি পর্যায়ের ঝুঁকিতে রয়েছে। মাঝারি থেকে উচ্চ পর্যায়ের ঝুঁকিতে রয়েছে নগরীর সামাজিক-রাজনৈতিক বিভিন্ন সূচকও।
গবেষকদের অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমীর মুহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রতিবেশগত সংকটের পাশাপাশি ভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ছে চট্টগ্রাম। ২০৫০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অংশের অনেক ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। এতে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এখানকার স্বাভাবিক প্রাণ-বৈচিত্র্যের পরিবর্তন আনবে। আর মানুষের মধ্যে শারীরিক নানা সংকটকে প্রকট করে তুলবে দূষণ।’
বন্দরনগরীকে জোয়ারের জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর মধ্যে পুরনো খাল উদ্ধার ও খনন, অভ্যন্তরীণ ড্রেনেজ সিস্টেম সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বা মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ এবং শহরের চারপাশে অন্তত ৪০টি স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
প্রায় ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এসব প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ, স্লুইস গেট নির্মাণ এবং খাল খনন ও ড্রেনেজ সিস্টেম আধুনিকায়নের কাজ ৫০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। প্রকল্পগুলোর শতভাগ কাজ শেষ না হওয়ায় গত কয়েকটি বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরীতে প্লাবনের মাত্রা আগের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অনেক জেলাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সমুদ্র-তীরবর্তী অঞ্চল হলেও এখানে পাহাড়ের কারণে বর্ষা মৌসুমে বালি-মাটি নেমে আসে। এগুলো জমে কর্ণফুলীসহ বেশ কয়েকটি নদী, খাল কিংবা ড্রেনেজ সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ায় নগরীতে জোয়ারের পানি দীর্ঘসময় ধরে অবস্থান করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
প্রাকৃতিক জলাশয় কমে আসার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পানি ধারণকারী ভূমির অভাবই চট্টগ্রাম নগরীকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছে।’
আপনার মতামত জানানঃ