সিনেমা, নাটকের মত শিল্পের জায়গায় যদি হাত পা বেঁধে দেয়া হয় সেখানে সেই দেশের শিল্প-সংস্কৃতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের সিনেমাগুলিতে দেশের অবস্থান তুলে ধরা সম্ভব হয় না সেন্সর বোর্ডের রাজনীতির কারণে। এভাবেই দেশের শিল্পের মান অনুন্নত থেকে যাচ্ছে। এদিকে এইসব নীতি নৈতিকতা না মেনে যেই শিল্পকে স্বাধীন করতে চাচ্ছে তাকেই পড়তে হচ্ছে হেনস্তার মুখে।
অভিনেতা মোশাররফ করিম, বৈশাখী টেলিভিশন কর্তৃপক্ষসহ অপর তিন জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার এক আদালতে ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেছেন এক আইনজীবী।
আজ রোববার (১৮ জুলাই) কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬ নং আমলি আদালতে এই মামলা করেন কুমিল্লা জেলা বার এসোসিয়েশনের আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম হোসাইনী।
মামলায় অভিনেতা মোশাররফ করিম, অভিনেতা জামিল হোসেন, ফারুক আহমেদ, আদিবাসী মিজান ও বৈশাখী টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছে।
‘হাই প্রেসার-২’ নামের একটি নাটকে উকিলদের হেয় প্রতিপন্ন করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার অভিযোগে এই মানহানির মামলা করা হয় বলে বাদী সূত্রে জানা গেছে।
বাদী পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মামলাটি আমলে নেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চন্দন কান্তি নাথ মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে আগামী ১৮ আগস্টে রিপোর্ট দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নাটক এবং চলচ্চিত্র অভিনেতাদের অযথা হেনস্তা করার এই প্রাক্টিস বহুদিন ধরে চলে আসছে। তার আরেকটি নমুনা হলো চলচ্চিত্রের দৃশ্যে পুলিশকে হেয় করার অভিযোগে এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলায় একটি চলচিত্রের পরিচালক অনন্য মামুন এবং অভিনেতা শাহীন মৃধাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো।
তাদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলাটি করেছিলো ঢাকায় পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, নবাব এল এলবি নামের চলচ্চিত্রে ধর্ষণের শিকার একজন নারীকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের একটি দৃশ্যে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়, যা পর্নোগ্রাফি আইনে অপরাধ বলে তারা মনে করেন।
এরপর পর্নোগ্রাফি আইনে মামলায় গভীর রাতে চলচ্চিত্রটির পরিচালক অনন্য মামুন এবং অভিনেতা শাহীন মৃধাকে ঢাকায় তাদের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিলো। তাদের ঢাকায় হাকিমের আদালতে হাজির করে পুলিশ কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠায়।
পুলিশের উধ্বর্তন একাধিক কর্মকর্তার মতে, চলচ্চিত্রটিতে একটি দৃশ্যে দেখানো হয় যে, ধর্ষণের শিকার একজন নারী থানায় মামলা করতে গেছেন। তখন সেখানে পুলিশের একজন এসআই তাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন।
এই জিজ্ঞাসাবাদে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়, যেটাকে তারা একটি অপরাধ হিসাবে দেখছে এবং সেজন্য পর্নোগ্রাফি আইনের আওতায় মামলা করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ঐ দৃশ্যে হেয় করা হয়েছে বলেও পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন।
পরিচালক, অভিনেতা- অভিনেত্রী এরকম হেনস্তা শিল্পকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। শিল্প হয়ে যাচ্ছে আইনের হাতে বন্দি, এজন্য এর বৃদ্ধি পক্বতা অব্দি পৌছাতে পারছে না। শিল্পকে স্বাধীন হতে না দিলে তা পরিপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠতে পারবে না এবং দেশের সিনেমার কোয়ালিটি বরাবরই নিচু মানেরই থেকে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২১৫৫
আপনার মতামত জানানঃ