সম্প্রতি নতুন ডিজিটাল আইনসহ নানা ইস্যুতে ভারত সরকার ও টুইটারের মধ্যে বিরোধ চলছে। সেই বিরোধে ঘি ঢেলেছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার। এবার প্রতিষ্ঠানিটি জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দেখিয়েছে ভারত থেকে আলাদা করে। অর্থাৎ আলাদা দেশ হিসাবে। টুইটারের ‘টুইপ লাইফ’ বিভাগে ভারতের যে মানচিত্র আপলোড করা রয়েছে সেখানে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে দেখানো হচ্ছে ভারতের মানচিত্রের বাইরে। এ নিয়ে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এরই জেরে ভারতে টুইটারের প্রধান মনিশ মাহেশ্বরীকে আটক করা হয়েছে। বিতর্কিত মানচিত্র ইস্যুতে মঙ্গলবার (২৯ জুন) দেশটির উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাকে আটক করে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআই।
জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখকে আলাদা রাষ্ট্র বলছে টুইটার
ভারতীয় ভূখণ্ড নয়, জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে মানচিত্রে দেখিয়ে ভারতের শাস্তির মুখে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। টুইটারের টুইপ লাইফ বিভাগের মানচিত্রে জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রদর্শন করায় মাইক্রোব্লগিং এই ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ভারতের সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, টুইপ লাইফ সেকশনে জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখকে ভারতের বাইরের ভূখণ্ড হিসেবে দেখিয়েছে টুইটার। বিকৃত এই মানচিত্র ভারতীয় একজন টুইটার ব্যবহারকারী সামনে আনেন। পরে অনেকেই এটি নিয়ে টুইটারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
শুরুতে ভারতীয় এক ব্যক্তি দাবি করেন, টুইটারে ভারতের যে ম্যাপ দেখাচ্ছে, তাতে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ অন্তর্ভুক্ত নেই। তার অভিযোগ টুইটারের নিজস্ব ওয়েবসাইটে জম্মু -কাশ্মীর এবং লাদাখকে দুটি পৃথক দেশ হিসাবে দেখাচ্ছে। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা।
টুইটারের এমন আচরণে নড়েচড়ে বসেছে ভারত সরকার। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে মোদি প্রশাসন।
নতুন ডিজিটাল আইন নিয়ে এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে টুইটারের সঙ্গে বিরোধ চলছে ভারতের। নতুন এ আইনে ইন্টারনেটে প্রকাশিত যাবতীয় লেখা, ভিডিও এবং পোস্টের উৎস সরকারকে জানানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু টুইটারের দাবি, এই আইন সংবিধানে উল্লেখিত বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী।
এর আগেও একবার লাদাখকে ভারতের বাইরে দেখিয়েছিল টুইটার। পরে অবশ্য সেই ভুল শুধরে নিয়েছিল মাইক্রোব্লগিং সাইটটি। কিন্তু ফের একই কাজে প্রশ্নের মুখে পড়েছে টুইটার।
আগে কোনো টুইটার ব্যবহারকারীর পোস্টের জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দায়ী করে মামলা করা যেতো না ভারতে। কিন্তু গত ১৬ জুন ভারতে এমন আইনি সুরক্ষা হারিয়েছে টুইটার। এছাড়া সম্প্রতি টুইটার ব্যবহার করে ভারতে সাম্প্রদায়িক ইন্ধন যোগানোর অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগে মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকটি।
এদিকে ভারতের নতুন ডিজিটাল আইন নিয়ে দেশটির সরকারের সাথে বিরোধরোধে সংস্থাটি একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল। সম্প্রতি তিনিও সরে দাঁড়িয়েছেন তার পদ থেকে।
টুইটারের প্রধান কর্মকর্তা আটক
মঙ্গলবার দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ভারতের বজরং দলের এক নেতা বিকৃত ম্যাপ নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হয় এফআইআর। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫(২) ধারা এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংশোধিত আইন, ২০০৮-এর ৭৪ নম্বর ধারায় ভারতে টুইটারের প্রধান মণীশ মাহেশ্বরীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এরপরই তাকে আটক করা হয়।
টুইটারের নীতিমালা নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে। কিছুদিন আগে বিজেপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার টুইট বার্তায় টুইটার ‘ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া’ ট্যাগ জুড়ে দেওয়ায় ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ নিয়ে টুইটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত সরকার। এমনকি ভারতে টুইটারের অস্থায়ী প্রধান কর্মকর্তাকে সরকারি একটি কমিটির কাছে জবাবদিহিও করতে হয়।
এই পরিস্থিতিতেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে ভারতের মানচিত্র বিতর্ক। টুইটারের অধীনে ‘টুইপ লাইফ’ বিভাগে ভারতের একটি মানচিত্র দেখা যাচ্ছিল। সেই মানচিত্রে জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখকে ভারতের বাইরে দেশ বলে দেখানো হয়।
যদিও বিতর্কিত মানচিত্রটি সোমবার রাতেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে টুইটারের ওয়েবসাইট থেকে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে টুইটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ওঠে। এর আগে গাজিয়াবাদে এক মুসলিম ব্যক্তির নিগ্রহের ভিডিও নিয়ে মাহেশ্বরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৫
আপনার মতামত জানানঃ