করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম পেরু। এই ভাইরাসের মহামারির কারণে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, সেখানে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কত মানুষ মারা গেছেন, তা নতুন করে পর্যালোচনা করেছে পেরু। এই হিসাবে দেখা গেছে আগের হিসাবের তুলনায় দেশটিতে আসলে মারা গেছেন দ্বিগুণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, দেশটিতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। খবর বিবিসির।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের। যদিও এ সংখ্যাটি আগে দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৯ হাজার ৩৪২ জন।
মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিলের পরই অবস্থান হয়েছে পেরুর। এছাড়া, জনসংখ্যার হারে করোনাভাইরাসে এখন বিশ্বে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে পেরুতে।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, সরকারি হিসাব অনুসারে পেরুতে মারা গিয়েছিলেন ৬৯ হাজার মানুষ। কিন্তু নতুন পর্যালোচনার পর জানা গেছে, এই সংখ্যা আসলে ১ লাখ ৮০ হাজার। লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ কলম্বিয়ায় ৮৮ হাজারের বেশি, প্রতিবেশী বলিভিয়ায় ১৪ হাজারের বেশি আর ব্রাজিলে ৪ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার হার অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এখন পেরুতে।
এর আগে এই অবস্থানে ছিল হাঙ্গেরি। দেশটিতে প্রতি এক লাখে মারা গেছেন ৩০০ জন। আর এখন পেরুর হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশটিতে প্রতি এক লাখে মারা গেছেন ৫০০ জন।
এ প্রসঙ্গে পেরুর প্রধানমন্ত্রী ভায়োলেটা বারমুডেজ সাংবাদিকদের বলেন, দেশের এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমাদের দায়িত্ব জনগণকে হালনাগাদ তথ্য জানানো।
মূলত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা হালনাগাদ করা হয়। এরপরই উঠে আসে মৃত্যুর এমন সংখ্যা।
পেরুতে মূলত চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে মৃত্যুহার চরমে পৌঁছায়। এ সময়টাতে দেশেটিতে তুলনামূলক সর্বাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
মহামারি শুরুর পর পেরুতে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। গত কয়েক মাসে সেখানে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের সংকট। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্যানেল বলেছে, যে পদ্ধতিতে কোভিডের মৃত্যু হিসাব করা হয়েছে তা ভুল। তাতে মৃত্যুর সংখ্যা যথাযথ ধরা পড়েনি।
পেরুতে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে টিকাদান হচ্ছে যথেষ্ট ধীরগতিতে। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মাত্র পাঁচ শতাংশ অন্তত একটি করে ডোজ নিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ে পেরু। গত ১লা এপ্রিল সেখানে আক্রান্ত হন ১৩ হাজার জন। সেখানে এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১২ হাজারের বেশি করোনা রোগী। দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের।
এছাড়া, পার্শ্ববর্তী দেশ কলম্বিয়ায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৮ হাজার ২৮২ জনের। ভলিভিয়ায় নিহতের সংখ্যা ১৪ হাজার। তবে ওই অঞ্চলে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার মানুয়ের।
যদিও করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও শনাক্ত কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বিশ্বে ৭ হাজার ৮৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯ জনের।
মঙ্গলবার (১ জুন) সকাল আটটায় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে মোট ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৪ জনের। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮০১ জন। আর এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৫ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৯০ জন।
বিশ্বে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ৪১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৬ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৬৭ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪০ জন।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ কোটি ৮১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৯০৯ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫০৪ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ