করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত গোটা ভারত। ভারতের করোনা পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদী সরকার। এমনকী, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সমালোচিত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ধাক্কা খেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা। ভারতীয় ও মার্কিন সংস্থার সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, মোদীর জনপ্রিয়তা হু হু করে কমেছে।
আমেরিকার মর্নিং কনসাল্ট নামে একটি সমীক্ষক সংস্থা বিশ্বের বহু রাষ্ট্রনেতার জনপ্রিয়তার উত্থান-পতনের রেখচিত্র তৈরি করে থাকে। ২০১৯ থেকে সেই তালিকায় আছেন মোদীও।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এপ্রিল মাসের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মোদীর জনপ্রিয়তার সূচক আগের চেয়ে ২২ পয়েন্ট কমেছে। এই সপ্তাহে মোদীর জনপ্রিয়তার সার্বিক সূচক দাঁড়িয়েছে ৬৩ শতাংশ। ২০১৯-এর পর থেকে এটাই তার নিম্নতম স্কোর। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেন-ওষুধ-টিকা-শয্যার অভাবে মৃত্যুমিছিল এবং অশেষ দুর্গতিই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
আর একটি আন্তর্জাতিক জনমত সমীক্ষক সংস্থা, ইউগভ-এর রিপোর্টও একই ছবি দেখিয়েছে। শহুরে ভারতবাসীর মধ্যে করা তাদের সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ফেব্রুয়ারিতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকেই মোদীর জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। কোভিড-সঙ্কট সামলাতে মোদী কতটা সফল, এই প্রশ্নের উত্তরে ‘খুব ভাল’ বা ‘মোটের উপর ভালই’ উত্তর দিয়েছেন ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা। কোভি়ডের প্রথম ঢেউয়ে এই অনুপাতটা ছিল ৮৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, ভারতীয় সংস্থা সিভোটার-এর সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, দেশের মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনের বিষয়ে ‘অত্যন্ত সন্তুষ্ট’। ২০২০ সালেও এই হার ছিল ৬৫ শতাংশ। তখন ৬৫ শতাংশ মোদীর কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন।
সমীক্ষায় এও বিশ্লেষ করে বলা হয়েছে যে, ২০১৪ সালে দেশে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম এত বেশি সংখ্যক মানুষ মোদীর বিরুদ্ধে মতামত জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সিভোটার-এর প্রতিষ্ঠাতা যশবন্ত দেশমুখ রয়টার্সকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন।যদিও দেশে এখনও সবথেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে মোদীই শীর্ষে রয়েছেন।
এদিকে মার্কিন সংস্থা মর্নিং কনসাল্ট জানিয়েছে, এই সপ্তাহে মোদীর জনপ্রিয়তা নেমেছে ৬৩ শতাংশে। ৩১ শতাংশই চরম বিরোধিতা করছেন মোদীর। কারণ দেশে কোভিড পরিস্থিতি। মাসের শুরুতে চার লাখের বেশি দৈনিক সংক্রমণ ছিল দেশে। এখন মৃত্যুতে রোজ রেকর্ড চলছে। দেশে অক্সিজেন নেই, ওষুধ নেই। টিকা নেই। এসবের জন্য সাধারণ মানুষ মোদী সরকারের ভুল নীতিকেই দায়ী করছেন।
গত বছর প্রাথমিকভাবে দাপটের পর ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কমে গিয়েছিল। সেই সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে মোদীর প্রচার শুরু করেছিল কেন্দ্রের শাসক দল। তার সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই নাকি করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছর শুরুর পর থেকেই আবারও দেশে বাড়তে থাকে করোনার দাপট। দৈনিক আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৪০০,০০০ এবং ৪,০০০ ছাড়িয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার নিরিখেও ভারতে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। আর তাতেই মোদীর জনপ্রিয়তা কমেছে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
২০১৪ সালে বিপুল আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে এনডিএ। ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩০৩টিতে জয়ী হয় বিজেপি। নেপথ্যে ছিল সেই ‘মোদী ঝড়’ই। ২০১৯ সালেও এতটুকু টাল খায়নি সেই জনপ্রিয়তা। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর পর যেন একটু ধাক্কা খেল সেই ঝড়।
তবে সার্বিকভাবে জনপ্রিয়তায় ধাক্কা খেলেও এখনও দেশের সবথেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদের তকমা আছে মোদীর কাছেই। সিভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, মহামারীর কারণে দেশের মধ্যে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে, তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন বিরোধীরা।
দেশে করোনা পরিস্থিতির জন্য মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে ইন্ডিয়ান মেজডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA)। নরেন্দ্র মোদীকে সুপার স্প্রেডার বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্সেটের পক্ষ থেকেও মোদী সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে টার্গেট করেছিলেন রাহুল গান্ধী। মোদীকে আক্রমণ করে রাহুল লিখেছিলেন, ‘দেশে অক্সিজেন, ভ্যাকসিন, ওষুধের মতো নিখোঁজ প্রধানমন্ত্রীও। শুধু খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প, ওষুধের উপর GST, আর প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেখা যাচ্ছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ