গত ৯ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে মা দিবস। বিশেষ এই দিবসটিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মায়ের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করে ধর্মীয় রোষানলে পড়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ছবিটি নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের প্রোফাইল পিকচারে দেন তিনি। ছবির ক্যাপশনে ছোট করে লিখেছেন- ‘মা’। সঙ্গে একটি ভালোবাসার ইমোজি।
প্রকাশিত ওই ছবিতে দেখা যায় ছবিতে তার মায়ের কপালে হিন্দুরীতি অনুসারে সিঁদুর লাগানো ছিল। আর তা দেখেই ওই ছবির কমেন্ট বক্সে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করে। কমেন্ট থেকে বোঝা যায়, অনেকেই এত দিন চঞ্চল চৌধুরীকে মুসলিম হিসেবে জেনে এসেছে। অনেকে চঞ্চল চৌধুরীকে মৃত্যুর আগে মুসলমান হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে।
ধর্মান্ধদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য
পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক মা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সঙ্গে জুড়েছিলেন মায়ের সঙ্গে হাসিমাখা অদ্ভুত সুন্দর একটি ছবি। সেই ছবিটিই কি না সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলো।
অনেক নেটিজেন চঞ্চল চৌধুরীকে হিন্দু বলে কটাক্ষ করেছেন। ধর্মান্ধদের নোংরা ভাষার শিকার হয়েছেন এ অভিনেতার মা। স্বভাবতই আহত হন চঞ্চল।
মো. শামীম মুসাব্বির নামে একজন ছবির মন্তব্যে বলেছেন, “আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো আমি মুসলিম। আমি আপনাকে সাপোর্ট করতে পারি না। দোয়া ও শুভ কামনা রইলো, ইসলাম ধর্মকে ভালোভাবে বোঝেন ও জানেন। তারপর ইসলামকে সেরা ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেন।”
নাইম ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “আমি এত দিন আপনাকে মুসলমান ভেবে আসছি। কী একটা ছ্যাঁকা খেলাম।”
আল সাদি প্রিয়াল লিখেছেন, “এই ছবি না দেখলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাবতাম আপনি মুসলিম। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুন।”
এনতাজুল ইসলাম নামে একজন অন্য সব ধর্মকে অসত্য উল্লেখ করে লেখেন, “সকল মানুষ মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা আর বাপ-দাদার বংশ সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে যখন সে মূর্তিপূজা করে, তখন সে হিন্দু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম। বাকি সবগুলো এখন মিথ্যা, যার অস্তিত্ব বয়ে বেড়ানো বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।”
চঞ্চলের অন্যরকম প্রতিবাদ
এসব নেতিবাচক মন্তব্যের উত্তর অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী দিয়েছেন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে। তিনি নিজেকে ধর্ম নয়, মানুষ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন।
চঞ্চল লিখেছেন, “ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ। আমি হিন্দু নাকি মুসলিম তাতে আপনাদের লাভ বা ক্ষতি কী? সকলেরই সবচেয়ে বড় পরিচয় ‘মানুষ’। ধর্ম নিয়ে এ সকল রুচিহীন প্রশ্ন ও বিব্রতকর আলোচনা সকল ক্ষেত্রে বন্ধ হোক। আসুন, সবাই মানুষ হই।”
এছাড়াও এ ধরনের সাইবার হয়রানির প্রতিবাদে আয়নাবাজি খ্যাত এ অভিনেতা সোমবার (১০ মে) নিজের ফেসবুক পেজে ‘ধর্ম’ শিরোনামে নিজের লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করে প্রকাশ করেছেন।
কবিতার ছন্দে ছন্দে মানবতার মন্ত্র তুলে ধরে চঞ্চল চৌধুরী বলেছেন, ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, মানুষ নিয়ে নয়/ এমনি করে সভ্যতা শেষ, হচ্ছো তুমি ক্ষয়/ধর্ম রক্ষের ঝাণ্ডা তোমায় কে দিয়েছে ভাই/ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করো, জ্ঞান কী তোমার নাই?/ সব ধর্মই এক কথা কয়, মানুষ সেবা করো/ধর্মের নামে ব্যবসা করে ভাবছো তুমি বড়…।’
হাজার হাজার মানুষের সমর্থন
চঞ্চলের এমন মন্তব্যে অকুণ্ঠ সমর্থন জানান ভক্ত, দর্শক ও শোবিজ অঙ্গনের তারকারা। অনেকেই তার পোস্ট নিজের মতো সম্পাদনা করে নিজস্ব প্রোফাইল থেকে শেয়ার করছেন।
এদিকে চঞ্চল চৌধুরীর এই মন্তব্যটি ইতোমধ্যে ২৬ হাজারের বেশি অনুসারী সহমত প্রকাশ করেছেন। তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মত জানিয়েছেন সহস্রাধিক ভক্তও।
৯ মে সন্ধ্যার পর থেকেই ফেসবুক ভেসেছে চঞ্চল চৌধুরী ও তার মায়ের সেই ছবিতে। নেটিজেনরা এই ছবিটি নিজেদর ফেসবুকের দেয়ালে শেয়ার করে চঞ্চল ও তার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বাজে মন্তব্যকারীদের হয়ে। লজ্জা প্রকাশ করেছেন।
সেইসঙ্গে তারা আইনি পদক্ষেপেরও দাবি তুলেছেন সাইবার বুলিং দমনে। প্রায় সময় অনেক তারকাই ফেসবুকে ধর্মান্ধদের রোষানলের শিকার হন। তাদের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ চেয়েছেন নেটিজেনরা।
নাসির উদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু থেকে শুরু করে নানা প্রজন্মের সংস্কৃতিকর্মীরা যেমন আছেন এ তালিকায় তেমনি আছেন মন্ত্রী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ অনেক রাজনীতিবিদ, পুলিশ অফিসার ও নানা পেশাজীবীরা।
অনেক তারকাই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন। অভিনেতা মীর সাব্বির এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘মা দিবসে চঞ্চল চৌধুরীর মায়ের সঙ্গে স্ট্যাটাস নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করেছেন তাদের ধিক্কার জানাই। ক্ষুদ্র মানসিকতার তীব্র নিন্দা জানাই। মনে রাখবেন, এটা আমাদের বাংলাদেশ। আমরা মানুষ এবং আমরা এই দেশটাকে অনেক ভালোবাসি। মনে রাখবেন, এই দেশে মীর সাব্বির যেভাবে বড় হয়েছে চঞ্চলও একইভাবে বড় হয়েছেন।’
নির্মাতা সৌরভ কুণ্ডু, হাসান রেজাউলের মতো অনেকেই ছবিটি শেয়ার করেছেন ‘আমার মা’ ক্যাপশনে। চলছে চঞ্চল চৌধুরী হ্যাশট্যাগ প্রতিবাদ।
প্রসঙ্গত, এদেশে এটিএম শামসুজ্জামান, হুমায়ুন ফরিদীর মতো অভিনেতাদের সার্থক-উত্তরসূরি একজন চঞ্চল চৌধুরী। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার যেমন দেশের গর্ব, তেমনি চঞ্চলের মতো অভিনেতাও। দুই অঙ্গনের মানুষ হলেও তারা জাত-পাত ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের মানুষকে অভিন্ন অনুভূতির সুতোয় বাঁধেন। চঞ্চল চৌধুরী ও তার মায়ের জন্য নিরঙ্কুশ ভালোবাসা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ