যশোরে নামের সঙ্গে আংশিক মিল থাকায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের পরিবর্তে সহিদুজ্জামান সেলিম ওরফে চঞ্চলকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজি ও মারপিটের একটি মামলার আসামি হিসেবে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (৬ মে ২০২১) রাতে শহরের রেলগেট এলাকা থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল মিরাজ খান তাকে আটক করেন।
যশোরে এর আগেও একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে খবর প্রকাশ হলে আইনি প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীরা রেহাই পান।
যশোর শহরের ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা সহিদুজ্জামান সেলিম ওরফে চঞ্চলের স্ত্রী রেশমা খাতুন জুলি অভিযোগ করেন, তার স্বামীর প্রকৃত নাম সহিদুজ্জামান সেলিম ওরফে চঞ্চল। চঞ্চলের বাবার নাম মৃত সবর আলী। চঞ্চলের জাতীয় পরিচয়পত্রেও তা উল্লেখ রয়েছে।
অথচ যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের এএসআই আল মিরাজ খান ২০১১ সালের একটি মারপিটের মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের পরিবর্তে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছেন। ওয়ারেন্টে প্রকৃত আসামি জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের বাবার নাম রয়েছে মৃত ইনতাজ আলী সবর। তার ঠিকানা খড়কি রেলগেট উল্লেখ রয়েছে। আর আটক করে নেয়া চঞ্চলের বাড়ি ষষ্ঠীতলা বিপি রোডে।
রেশমা খাতুন আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এএসআই আল মিরাজ খান রেলগেট থেকে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে যান। এসময় তার স্বামী কাছে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখালেও পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। পরদিন শুক্রবার ওই মামলার ওয়ারেন্টে (এসসি-৫৯৮/১৭) তার স্বামীকে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারপিটের ওই মামলার বাদী খড়কি কাসারদিঘি এলাকার মৃত জিয়াদ আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম। ১০ বছর আগের অর্থাৎ ২০১১ সালের ১৭ জুলাই তরিকুল ইসলামকে মারপিটের অভিযোগে ৭ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি (নম্বর-৫০) করেন। এই মামলার অপর পাঁচ আসামি হলেন-শহিদুল ইসলাম, জোসনা, বাবু, বিপুল হোসেন ও সোহেল।
যশোর আদালতের হাজতখানায় সহিদুজ্জামান সেলিম ওরফে চঞ্চল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি মামলার বাদী তরিকুল ইসলামকে চেনেন না। তাকে কোনোদিন মারপিটও করেননি। পুলিশ মামলার ওয়ারেন্টের আসামি জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের পরিবর্তে তাকে ধরে নিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে এএসআই আল মিরাজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আটক চঞ্চলকে বাদি নিজে সনাক্ত করেছে। এবিষয়ে আদালতে প্রত্যয়নও দেয়া হয়। কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘যে সময় মামলা হয় সে সময় আটক চঞ্চলের নাম লেখা হয় জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল। প্রকৃত পক্ষে তার নাম হবে শহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত করে চার্জশিটে জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চলের নাম উপস্থাপন করেছেন। মামলার বাদি নিজে তার ওপর হামলাকারী হিসাবে আটক শাহিদুজ্জামান সেলিম চঞ্চলকে সনাক্ত করেছেন। তিনি এই বিষয়ে আদালতে আবেদনও করেছেন।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে ভুল নাম উপস্থাপন করার অপরাধ হিসাবে কোন আইনী ব্যবস্থা আছে কি-না জানতে চাইলে ওসি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘এটি আদালতের বিষয়। আদালত ওই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ডাকলে তিনিই জবাব দেবেন আদালতে।’ তবে আটক চঞ্চল যে প্রকৃত চঞ্চল তা তিনি জোর দিয়ে বলেন।
২০২০ সালে ৩০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এবং মাদকবিরোধী অভিযানে, এ ছাড়া বছরজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছে । এতো গেলো দোষীদের কথা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকের ডগায় অসংখ্য নির্দোষ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন যারা কখনোই তালিকায় আসবে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ঢাকা এবং এর বাইরে যত কারাগার আছে খোঁজ করে দেখলে এমন অসংখ্য নিরাপরাধ ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাবে যারা পুলিশের ভুলে, গাফিলতিতে অথবা অর্থের বিনিময়ে বিনাদোষে শাস্তি ভোগ করছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ