যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ান কূটনীতিকদের বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে এই খেলা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করলে পাল্টা রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বহিষ্কার ঘোষণা করে। এ খেলায় এবার যোগ দিয়েছে ইউরোপের দেশ মধ্য চেক প্রজাতন্ত্র। সম্প্রতি রাশিয়ার ১৮ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে চেক প্রজাতন্ত্র। রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কারের পাল্টা জবাবে রাশিয়াও দেশটি থেকে চেক রিপাবলিকের ২০ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। এই খেলার শেষ কোথায় শেষ হবে তা জানা নেই বিশ্লেষকদের।
রাশিয়ার ১০ কূটনীতিক বহিষ্কার ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার অ্যাটাক ও অন্যান্য বিদ্বেষমূলক কাজের জন্যে সম্প্রতি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার ১০ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। গণমাধ্যমে ব্রিফিং-এ বাইডেন প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞাকে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ চেষ্টার প্রথম প্রতিশোধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার(১৫ এপ্রিল) প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সই করা এক নির্বাহী আদেশে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এলো।
এর একদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ইউক্রেনে সীমান্তে রাশিয়ার সেনা জড়ো করা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর এক দিন পরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আসল।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরে হাইবার হামলার জন্য দায়ী করা হয় রাশিয়াকে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ সরকারের ঋণ লেনদেনকারী মার্কিন ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১০ কূটনীতিককে বহিষ্কার ও ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের দায়ে ৩২ জন রুশ নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এর আগে গত ১৩ এপ্রিলে ‘খোলামেলা, শ্রদ্ধাপূর্ণ’ এক আলোচনায় পুতিনকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আমি স্পষ্ট ছিলাম আমরা আরো দূর যেতে পারি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সমানুপাতিক হওয়ার। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের কোনো চক্রের সন্ধান করছে না। আমরা চাই স্থিতিশীল, অনুমানযোগ্য সম্পর্ক।
এক সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রশাসনের সতর্ক করা এই নিষেধাজ্ঞা গত বছর ‘সোলারউইন্ডস ব্রিচ’ নামে পরিচিত হ্যাকিং প্রচেষ্টার জেরে ক্রেমলিনের ওপর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত নয়টি সংস্থার নেটওয়ার্কে রুশ হ্যাকাররা প্রবেশ করে। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য এই সাইবার হামলা করা হয়েছিল।
হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, এই আদেশের মাধ্যমে সংকেত দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর কৌশলগত ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারকারী মূল্য চাপিয়ে দেবে যদি রাশিয়া আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখে বা বাড়ায়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া বলেছে, তারা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্টের সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনিকে বিষ প্রয়োগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সাত কর্মকর্তা ও এক ডজনের বেশি সরকারি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই ঘটনার সঙ্গে রাশিয়া জড়িত নয় বলে জানিয়েছে।
১০ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা রাশিয়ার
জো বাইডেন সরকারের নিষেধাজ্ঞার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ১০ রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা জবাবে ১০ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করতে চলেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গত শুক্রবার(১৬ এপ্রিল) একথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১০ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা ছাড়াও মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের ৮ কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখবে। সেইসঙ্গে রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল এবং এনজিওগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করবে। এই সমস্ত এনজিও দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলে রাশিয়া মনে করে।
ল্যাভরভ আরও বলেন, রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও মস্কো ভেবে দেখছে।
তিনি বলেন, তারা যা করেছে আমরাও সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবো। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠানোর কথাও জানান ল্যাভরভ।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এর আগে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেনে নেওয়া যায় না। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের দ্বার খোলা রেখেছে।
রাশিয়ার ১৮ কূটনীতিককে বহিষ্কারে চেক প্রজাতন্ত্রের ঘোষণা
২০১৪ সালে এক গোলাবারুদের ডিপোতে ঘটা বিস্ফোরণে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত থাকার সন্দেহে ১৮ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করছে চেক প্রজাতন্ত্র। গত শনিবার(১৭ এপ্রিল) চেক সরকার একথা জানিয়েছে।
চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিস এক টুইট বার্তায় বলেন, ভ্রাবেটিস গ্রামে একটি গোলাবারুদ ডিপো বিস্ফোরণে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিলেন বলে সুস্পষ্টভাবে সন্দেহ রয়েছে।এ ঘটনায় ১৮ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে।
চেক প্রজাতন্ত্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জান হামাচেক বলেন, রাশিয়ার ১৮ দূতাবাস কর্মীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রাগের ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভ্রাবেটিস ডিপোতে ২০১৪ সালের অক্টোবরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একটি বেসরকারি সংস্থার দু’জন কর্মচারী নিহত হন। ওই বেসরকারি কোম্পানি রাষ্ট্রীয় একটি সামরিক সংস্থার কাছ থেকে সাইটটি ভাড়া নিয়েছিল।
এদিকে, প্রাগে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ওয়াশিংটর চেক প্রজাতন্ত্রের এমন পদক্ষেপকে সমর্থন জানায়। চেক প্রজাতন্ত্রের মাটিতে রাশিয়া যে ধরনের বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড করেছে তার বিরুদ্ধে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রশংসা জানানো হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সীমান্ত নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চেক প্রধানমন্ত্রী। এর আগে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর পরই গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ১০ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল বাইডেন প্রশাসন। জবাব দিতে দেরি করেনি মস্কো। তারাও একই সংখ্যক মার্কিন কূটনীতিককে রাশিয়া ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পাল্টা ২০ চেক কূটনীতিককে বহিষ্কার রাশিয়ার
রাশিয়ার ১৮ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পাল্টা জবাবে চেক প্রজাতন্ত্রের ২০ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। শনিবার দেশটির ১৮ কূটনীতিককে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে বহিষ্কার করার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো।
বিষয়টি নিয়ে সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা। এরমধ্যেই পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বসেছে রাশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, চেক সরকারের এ পদক্ষেপের জবাবে আরও কঠোর হতে পারে রাশিয়া।
বিবিসি বলছে, মস্কো বহিষ্কার করা চেক প্রজাতন্ত্রের কূটনীতিকদের মাত্র একদিন সময় দিয়েছে দেশ থেকে চলে যাওয়ার জন্য। যদিও চেক প্রজাতন্ত্র রুশ কূটনীতিকদের সময় দিয়েছে ৭২ ঘণ্টা।
চেক প্রজাতন্ত্রের সিদ্ধান্তকে ‘নজিরবিহীন’ এবং একটি ‘বৈরী আইন’ বলে অভিহিত করেছে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলোর পটভূমি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চেক কর্তৃপক্ষ ‘সম্মান দেখাতে গিয়ে পুকুরের ওপার থেকে তাদের মাস্টারদেরও ছাড়িয়ে গেছে’।
এক কূটনৈতিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, চেক প্রজাতন্ত্রের এ পদক্ষেপের পাল্টা জবাবে রাশিয়া মস্কোয় অবস্থিত চেক দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ