দুজনের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক ঘটলে স্বাভাবিকভাবে এটাকে ধর্ষণ হিসাবে দেখা হতো না। তবে ফ্রান্সে এবার যৌন সম্মতি এবং ধর্ষণ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে আলাদা করতে কড়া আইন নিয়ে এল। প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তি ১৫ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফ্রান্সে নতুন এ আইন ভাঙলে পেতে হবে কড়া শাস্তি। খবর আনন্দবাজার ও ডয়েচে ভেলে
এতদিন ফ্রান্সে নারীদের ক্ষেত্রে সম্মতিসূচক শারীরিক সম্পর্কের বয়স ছিল ১৫ বছর। যদি এর চেয়ে কম বয়সী কেউ ধর্ষণের শিকার হতো, তাহলে অভিযুক্তের আইনজীবী সেই ঘটনাকে সম্মতিসূচক সহবাস প্রমাণের চেষ্টা করতে পারতেন। এর মাধ্যমে অনেক ধর্ষণের ঘটনাই সম্মতিপূর্ণ সহবাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে অভিযুক্তরা শাস্তি এড়িয়ে যেতেন।
কিন্তু নতুন আইনের ফলে ওই সুযোগ আর থাকছে না। এখন থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী কোনও মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হলেই সেটি ধর্ষণ হিসেবে ধরা হবে এবং দোষীকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে।
বিলটি সর্বসম্মতিতে দেশটির সংসদে পাস হয়েছে। এর আগে তা উচ্চকক্ষেও অনুমোদিত হয়েছিল। এরপর বিচারমন্ত্রী বলেন, “আমাদের বাচ্চাদের জন্য ঐতিহাসিক আইন হলো। কোনো প্রাপ্তকবয়স্ক আর সম্মতির ভিত্তিতে ১৫ বছরের কম বয়সীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়াতে পারবে না।”
অন্যদিকে সংসদের কিছু সদস্য বলেন, যদি ১৫ বছরের কম বয়সীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা হয়, তা হলে অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে বয়সে কয়েক বছরের বড় কেউ সম্পর্ক স্থাপন করলেই শাস্তি পাবে। এতে সমাজে বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে পারে।
তবে আইনে একটি ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ ধারা রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে পাঁচ বছর পর্যন্ত বড়রা সম্মতির ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুললে তাকে ধর্ষণ বলা হবে না। কিন্তু যৌন নিগ্রহ করলে শাস্তি পেতে হবে।
ফ্রান্সে এতদিনকার নিয়ম অনুযায়ী ১৫ বছরের নিচে কোনো শিশুকে যৌন হযরানি করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রাপ্তবয়স্করা ৫ বছর পর্যন্ত জেলের সাজা ভোগ করবেন। আর ধর্ষণ বা বড় ধরনের যৌন নির্যাতন করলে সাজা হতে পারে ২০ বছর পর্যন্ত। তবে সেখানে বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার বিষয়টি প্রমাণিত হতে হবে।
আইনটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন কোনো মেয়ে শিশুর যৌন সম্পর্কে সম্মতি থাকতে পারে কিন্তু যৌন হয়রানিতে সম্মতি থাকতে পারে না। এই পার্থক্যটিরই সমালোচনা হয়ে আসছে বছরের পর বছর থেকে।
প্যারিসে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন এক আইনজীবী ক্যাথেরিন ব্রল্ট বলেন, একটি ছোট্ট শিশু কোনোভাবেই প্রাপ্তবয়স্ক কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করতে পারে না। ফ্রান্সে কিছু লম্পটের আচরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর আগে যুক্তরাজ্যে যৌন হয়রানির ঘটনায় এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে, যেটা ছড়িয়ে পড়ে ফ্রান্সে।
ফ্রান্সে নারী ও শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহ বেড়েই চলেছে। অনেক সময় তা প্রকাশ হয় না। কিন্তু ২০১৭ সালের ‘মি-টু’ আন্দোলন অনেক হিসেবই বদলে দিয়েছে। অনেক তারকার ভাবমূর্তি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ২০১৮ সালেই ফ্রান্স যৌনতা সংক্রান্ত অপরাধ আইন কড়া করেছে। এবার তারা এই নতুন আইন করলো।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ