করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা ও সংক্রমণ রোধে গতকাল থেকে দেশজুড়ে ৮ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই লকডাউনে চলাচলে বিধি-নিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে আছে সিভিল প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর এদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে লকডাউনের মধ্যে প্রথম রমজানে ইফতার ও নৈশ ভোজের আয়োজন করেন নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন।
বুধবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে এই পার্টির আয়োজন করেন তিনি। এ সময় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন।
লকাডাউনের মধ্যে যেখানে সাধারণ মানুষের বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ। আর রাস্তায় বের হলে সাধারণ মানুষকে দিতে হয় ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানা। সেখানে সকল নিয়ম উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে শতাধিক লোকের খাওয়ার এ আয়োজন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন।
অন্যদিকে স্বয়ং উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তিনি। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাতিয়ার উপজেলা সদরে পাড়ায় মহল্লায় ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে।
অফিসার্স ক্লাবের এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন , করোনার এই সময়ে এ ধরনের পার্টি করে মানুষের সমাগম করা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির ঠিক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, আমি প্রথমে মনে করেছি মানুষের উপস্থিতি কম হবে। পরে গিয়ে দেখি অনেক লোকের উপস্থিতি। পরিবেশ দেখে চলে আসার ইচ্ছা থাকলেও সামাজিকতার কারণে চলে আসতে পারিনি।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে এই জাতিয় পার্টি করা সঠিক হয়নি বলে আয়োজককে সতর্ক করেছেন কিনা প্রশ্ন করলে ডাক্তার নাজিম উদ্দিন জানান , তিনি আমার ছেয়েও বড় অফিসার তাই সতর্ক করতে পারিনি।
উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাস বলেন, এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একান্ত নিজস্ব পার্টি। প্রথমে এই আয়োজনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে করার কথা ছিল। কিন্তু বাসায় জায়গা না থাকায় অফিসার্স ক্লাবে করা হয়েছে। করোনা মহামারিতে লকডাউন চলাকালীন এই জাতিয় আয়োজন করা সঠিক হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত একাধিক স্থানীয় সাংবাদিক জানান, ইফতার মাহফিলে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের ছবি ধারণ করতে নিষেধ করেন। পার্টিতে ছিল কয়েক আইটেমের উন্নত মানের ইফতারের আয়োজন। সাথে ছিল বিরিয়ানি দিয়ে নৈশভোজ। রান্নার দায়িত্ব পালন করে হাতিয়া পৌরসভা এলাকার স্থানীয় বাবুর্চি বাবুল।
জানা যায়, সকাল থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে রান্না শুরু হয়। ইফতারের পূর্বেই সকল রান্না অফিসার্স ক্লাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এটি কোন বড় প্রোগ্রাম ছিল না। শুধু উপজেলার অফিসারদের একটি প্রেগ্রাম ছিল।
উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন ভঙ্গ করে ইফতার মাহফিলের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সচেতন মহল। করোনার ভয়াবহতায় সকল ধরনের সভা সমাবেশ ও ইফতার পার্টির আয়োজনে সরকারি বিধি নিষেধ থাকলেও এ ধরনের ইফতার মাহফিলের আয়োজন সত্যিই দুঃখজনক। সে ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামাজিক দূরত্ব না মেনে ইফতার মাহফিলে শতাধিক মানুষের সাথে অংশগ্রহণ করায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ