মাঠ প্রশাসনের নতুন মাথা ব্যথার নাম হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা যেন এখন মাস্তানে পরিণত হয়েছে। তাদের একের পর এক অসদাচরণ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে প্রশাসন বিব্রত, সরকার বিরক্ত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা গত এক বছরে প্রায় ৩৪ টি বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
সর্বশেষ বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ইউএনও মেহেরুবা ইসলাম। তিনি একটি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পদকগুলোকে ভেঙে ফেলেছেন। এই দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় হচ্ছে। একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যিনি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। চাকরিতে ঢোকার পর প্রথম নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন, সেই জুনিয়র কর্মকর্তা কীভাবে এরকম বেপোরোয়া হয়ে উঠতে পারেন সে নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে নানারকম প্রশ্ন উঠছে।
শুধু মেহেরুবা ইসলাম একা না। সাম্প্রতিক সময়ে এরকম ঘটনা একের পর এক ঘটছে। বগুড়ার সদরের ইউএনও সমর পাল নৈশ্য প্রহরীকে প্রহার করেছেন। এই অভিযোগ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। কিন্তু কোনো সুরাহা নেই।
গত ২১ জুলাই টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু একজন সাংবাদিককে যে ভাষায় গালাগালি করেছেন তা ভদ্রসমাজে উচ্চারণের অযোগ্য। এত নিম্ন রুচির একজন মানুষ কিভাবে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। আদালতের নোটিশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বোয়ারমারি ইউএনও’র কাছে। তিনি ওই নোটিশ দেখে ওই দুইজন কর্মচারীকে ইচ্ছে মতো বকাঝকা করেছে। যে সমস্ত বকাঝকা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য।
গত বছর ৪ জানুয়ারি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কটূক্তি করেছিলেন। গত বছরই লালমনিরহাটের আদিতমারীর ইউএনও মসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্থানীয় দুজনকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরকম অভিযোগ অনেক।
প্রশ্ন উঠেছে যে, একজন সরকারি কর্মকর্তা যিনি জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, তিনি এরকম আচরণ কিভাবে করতে পারেন। তাও তিনি কোনো উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা নন। বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখন উপজেলা চেয়ারম্যানদেরকে পাত্তা দেন না, এমপিদের ফোন ধরেন না, তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করেন না। তাহলে প্রশাসনের এই সমস্ত নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা কি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে উঠে গেছে।
বিভিন্ন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ইউএনওরা যে বেপোরোয়া হয়ে ওঠে পড়েছেন তার পেছনে মূল কারণ হলো আমলাদের উত্থান এবং আমলাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। গত সাড়ে তিন বছরে আমলারা এমনভাবে বেড়ে ফুটে উঠেছে তারা মনে করে যে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই। সরকার পরিচালনা করছেন তারাই। দেশে এখন আমলাতন্ত্র কায়েম হয়েছে।
এই যে অভিযোগটি ওঠে তার বাস্তবতা দেখা যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ ধরনের আচরণের মাধ্যমে। তারা মনে করছে যে, দেশে তারা সর্বেসর্বা। তারাই সবকিছু নির্ধারণ করে দেবে এবং রাজনীতিবিদদের কোন ভূমিকা নেই, কোনো ক্ষমতা নেই।
প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এর পাশাপাশি একটি বড় কারণ আছে তা হলো বিচারহীনতার সংস্কৃতি। গত সাড়ে তিন বছরে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা যত অপকর্মই করুক না কেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। ফলে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
যেমন, লালমনিরহাটের ডিসি যখন সাংবাদিকদেরকে বেধড়ক পেটালেন। তারপর তাকে লঘু শাস্তি দেওয়া হলো পদাবনতি। কিন্তু এই শাস্তি আবার রাষ্ট্রপতি মার্জনা করে দিলেন। একইভাবে জামালপুরের ডিসি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের জন্য তাকে পদাবনতির মতো শাস্তি দেওয়া হলো।
যখন আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম করলেন তখন তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হলো বদলি করে দেয়। যার ফলে প্রশাসনের তরুণ কর্মকর্তারা মনে করছেন, তারা যা খুশি করতে পারেন। তাদের কেউ ধরার নেই। তাদের জবাবদিহিতার কিছু নেই। যার ফলে তারা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছেন। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ